ঘূর্ণিঝড় রিমালে পটুয়াখালীতে ২৬ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি
ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে পটুয়াখালীতে জোয়ার ও ভারী বৃষ্টিপাতের পানিতে তলিয়ে গেছে কয়েক হাজার হেক্টর জমির বোরো, আউশ, চিনাবাদাম, মরিচসহ শাকসবজির খেত। উপড়ে ও ভেঙে পড়েছে পেঁপে, আম ও কলা গাছ।
পটুয়াখালীতে কৃষিক্ষেত্রে ২৬ কোটি ২১ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ৫৮ হাজার ৩০৪ জন। ঘূর্ণিঝড়ে মৌসুমি শাকসবজির ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় বাজারে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এক লাখ ৩৪ হাজার ৯১ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের ফসলের আবাদ করা হয়েছিল। অধিকাংশ ফসলই কৃষক ঘরে তুলতে পারলেও ৭ হাজার ৫৭০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ধরনের ফসল ছিল। এরমধ্যে ৭ হাজার ৫৪০ হেক্টর জমির ফসলই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের মধ্যে রয়েছে বোরো ৫৭০ হেক্টর, আউশ এক হাজার ৪৩ হেক্টর, চিনাবাদাম ৩৫০ হেক্টর, মরিচ ১৩২ হেক্টর, মুগ ২ হাজার ৩৯১ হেক্টর, ফেলন ৫৫ হেক্টর, তিল ৮৯ হেক্টর, মৌসুমি শাকসবজি এক হাজার হেক্টর, পাট ৫৮ হেক্টর, পান ৬১২ হেক্টর, আম ৬৫০ হেক্টর, কলা ৪২০ হেক্টর ও পেঁপে ২২০ হেক্টর।
সরেজমিনে পটুয়াখালীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মাঠে থাকা ফসল পানিতে তলিয়ে আছে এবং কৃষকরা তা তুলে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন।
গলাচিপা উপজেলার কালাইকিশোর গ্রামের মো. হাসান দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে জোয়ারের জলোচ্ছ্বাসে তার মুগ ডাল, চিনা বাদাম ও বোরো ধান গত তিনদিন ধরে পানিতে তলিয়ে থাকায় নষ্ট হয়ে গেছে। পানির মধ্য থেকে চিনাবাদাম তুলে নিতে মাঠে কাজ করছেন তিনি।
পটুয়াখালী সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নের বলইকাঠি গ্রামের আল ইসলাম ডেইলি স্টারকে জানান, তিনি ২৫ শতাংশ জমিতে বাদাম, মরিচ ও মুগ ডালের আবাদ করেছিলেন। মুগ ডাল তুলে ফেলেছেন। কিন্তু বাদাম ও মরিচ মাঠে থাকায় তা ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতি হয়েছে।
অপর কৃষক নুরুজ্জামাল হাওলাদার ডেইলি স্টারকে জানান, ৪০ শতাংশ জমিতে তিনি মরিচ ও বাদামের আবাদ করেছেন। প্রবল জোয়ারের চাপে বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে ফসল সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছেন তিনি।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড়ে মৌসুমি শাকসবজির ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় স্থানীয় বাজারে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। কাঁচা কলা ও কাঁচা পেঁপের কেজিতে ২০ থেকে ২৫ টাকা, লাউ আকার-ভেদে ২৫ থেকে ৩০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ১৫ থেকে ২০ টাকা, পটল ১০ থেকে ১৫ টাকা এবং বিভিন্ন ধরনের শাক আঁটিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে।
এ বিষয়ে পটুয়াখালী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাস ও ভারী বর্ষণে জেলায় ৭ হাজার ৫৪০ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার আর্থিক পরিমাণ ২৬ কোটি ২১ লাখ টাকা।'
তিনি আরও বলেন, 'জেলায় ৫৮ হাজার ৩০৪ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে এই আমন মৌসুমে ১৮ হাজার ২০০ জন কৃষককে বিনামূল্যে সার ও বীজ প্রণোদনা হিসেবে দেওয়া হবে। এ ছাড়াও, অন্যান্য ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের অগ্রাধিকার-ভিত্তিতে প্রণোদনা সহায়তা দেওয়া হবে।'
Comments