বাজেট

সরকারের ঋণের সুদ পরিশোধে বরাদ্দ বাড়বে ৩৮ শতাংশ

বাজেট, অর্থবছর, মোস্তফা কে মুজেরি, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ,

দেশি ও বিদেশি উভয় উৎস থেকে নেওয়া সরকারের ঋণের সুদ ব্যয় আগের তুলনায় অনেকে বেড়েছে। তাই আগামী বাজেটে সরকারের ঋণের সুদ পরিশোধে বরাদ্দ ৩৮ শতাংশ বেড়ে ১ লাখ ২৯ হাজার কোটি টাকা হতে পারে।

চলতি অর্থবছরের শুরুতে সরকার সুদ পরিশোধ বাবদ ৯৪ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছিল। তবে সংশোধিত বাজাটে তা প্রথমবারের মতো এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, আগামী অর্থবছরে দেশীয় ঋণের সুদ পরিশোধে বরাদ্দ ২০২৩-২৪ অর্থবছরের মূল বরাদ্দের তুলনায় ৩৩ শতাংশ বেড়ে ১ লাখ ৯ হাজার কোটি টাকা হতে পারে।

একইভাবে বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধে বরাদ্দ ৬১ শতাংশ বেড়ে আগামী অর্থবছরে ২০ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়াবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

ওই কর্মকর্তা বলেন, সরকারের ট্রেজারি বন্ডের সুদহার বৃদ্ধি এবং টাকার অবমূল্যায়নের কারণে আগামী অর্থবছরের বাজেট সংশোধনের সময় সুদ পরিশোধের ব্যয় বরাদ্দের অঙ্ক আরও বাড়তে পারে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় হয়েছে ৬০ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় ২৬ শতাংশ বেশি।

এর মধ্যে দেশীয় ঋণের সুদ পরিশোধ ১৫ শতাংশ বেড়ে ৫১ হাজার ২১৩ কোটি টাকা হয়েছে এবং বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ তিনগুণ বেড়েছে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরের সঙ্গে তুলনা করলে চলতি অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধ ১২৫ শতাংশ বেড়ে ১২ হাজার ৬২৬ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।

যদিও মোট বরাদ্দ ছিল ১২ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা, অর্থাৎ পুরো বছরের বরাদ্দ মাত্র ১০ মাসে শেষ হয়ে গেছে।

ডলারের হিসাবে তা ১০১ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে ১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার হয়েছে।

গত দুই বছরে মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হওয়ায় ডলারে সুদ পরিশোধের তুলনায় টাকায় সুদ পরিশোধের খরচ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।

ইআরডির এক কর্মকর্তা বলেন, চলতি অর্থবছরে ডলারের গড় বিনিময় হার বেড়ে ১১০ টাকায় দাঁড়িয়েছে, যা গত অর্থবছরে ছিল ১০০ টাকা।

এদিকে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের বিনিময় হার বাড়িয়ে ১১৭ টাকা করেছে, তাই আগামী অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণের সুদ ব্যয় আরও বাড়বে।

সাম্প্রতিক সময়ে সরকারের বৈদেশিক ঋণের ব্যবহারও বাড়ছে, গত দুই অর্থবছর বৈদেশিক ঋণ ব্যয় হয়েছে ১০ বিলিয়ন ডলার করে।

সাধারণত ঋণ ব্যবহারের পরে সুদ দেওয়া শুরু হয়, ফলে সামগ্রিক সুদ ব্যয় বৃদ্ধি পায়।

একই সময়ে বাজারভিত্তিক ঋণের সুদের হার বেড়েছে। মহামারির আগে এ ধরনের ঋণের সুদহার ছিল এক শতাংশের নিচে। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তা ৯ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।

আবার ট্রেজারি বন্ড বিক্রির মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থের ব্যয়ও বাড়ছে, ফলে সুদ ব্যয় আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ট্রেজারি বন্ডের সুদহার ২০২৩ সালের জুনের ৮ শতাংশ থেকে বেড়ে বর্তমানে ১২ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে।

পাঁচ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের সুদের হার ২০২২ সালের ডিসেম্বরের ৭ দশমিক ৯১ শতাংশ থেকে বেড়ে এ বছরের মে মাসে ১২ দশমিক ৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ছিল ১০ দশমিক ৩ শতাংশ।

যদিও জাতীয় সঞ্চয়পত্রের মতো উপকরণের বিক্রি বর্তমানে কম এবং এগুলোর সুদের হার কমেছে। কিন্তু অনেক স্কিম ম্যাচু্‌উর হয়েছে, তার মানে এই বিভাগেও সরকারের ব্যয় বেড়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের ত্রৈমাসিক ঋণ বুলেটিন অনুযায়ী, ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারের ঋণের পরিমাণ ১৬ লাখ ৫৯ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে দেশীয় ঋণের পরিমাণ ৯ লাখ ৫৩ হাজার ৮১৪ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ ৭ লাখ ৫ হাজার ৫২০ কোটি টাকা।

Comments

The Daily Star  | English
US dollar price rises

Explanations sought from 13 banks for higher dollar rate

BB issued letters on Dec 19 and the deadline for explanation ends today

2h ago