যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সিরিজই হারল বাংলাদেশ

টেস্ট খেলুড়ে কোনো দেশের বিপক্ষে এটাই যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম সিরিজ জয়ের কীর্তি।
ফাইল ছবি: ফিরোজ আহমেদ

শেষ ৪ ওভারে হাতে ৫ উইকেট নিয়ে ২৬ রান দরকার ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু নাটকীয় পালাবদলে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ল দলটির ব্যাটিং লাইনআপ। স্রেফ ১৯ রানের মধ্যে বাকি ৫ উইকেট শিকার করে তাদেরকে গুঁড়িয়ে দিল যুক্তরাষ্ট্র। ম্যাচের সঙ্গে সিরিজও জিতে নিয়ে ইতিহাস গড়ল শক্তির বিচারে অনেক পিছিয়ে থাকা আমেরিকানরা। টেস্ট খেলুড়ে কোনো দেশের বিপক্ষে এটাই তাদের প্রথম সিরিজ জয়ের কীর্তি।

বৃহস্পতিবার টেক্সাসের হিউস্টনের প্রেইরি ভিউ ক্রিকেট কমপ্লেক্সে তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে হতশ্রী ব্যাটিং পারফরম্যান্সে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ৬ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। টস হেরে আগে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৪৪ রান তোলে স্বাগতিকরা। জবাবে নাজমুল হোসেন শান্তর নেতৃত্বাধীন দল ৩ বল বাকি থাকতে অলআউট হয় ১৩৮ রানে।

টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে এটি বাংলাদেশের ১০০তম হার। প্রথম দল হিসেবে এই সংস্করণে হারের 'সেঞ্চুরি'র বিব্রতকর রেকর্ড গড়ল তারা। এখন পর্যন্ত ১৬৮ ম্যাচ খেলে তারা জিতেছে ৬৪টি। বাকি চারটি ম্যাচ হয়েছে পরিত্যক্ত।

সাদামাটা লক্ষ্য তাড়ায় প্রথম ওভারে সৌম্য সরকারের উইকেট হারায় বাংলাদেশ। মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলেই সৌরভ নেত্রভালকারকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। টি-টোয়েন্টিতে খেলা ৮১ ইনিংসে এটি তার দ্বাদশ ডাক।

লিটন দাসের জায়গায় এই ম্যাচের একাদশে ঢোকা আরেক ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম ভালো শুরুকে টেনে নিতে পারেননি। বাজে শটে বোল্ড হয় থামে তার ১৫ বলে ১৯ রানের ইনিংস। ৩০ রানে ২ উইকেট হারানো বাংলাদেশ পাওয়ার প্লে শেষ করে ৪৩ রান তুলে।

তৃতীয় উইকেট জুটিতে ইনিংস গড়ার কাজে লাগেন অধিনায়ক শান্ত ও তাওহিদ হৃদয়। তাদের কাঁধে চেপে চাপ সামলে নেয় সফরকারীরা। কিন্তু একাদশ ওভারে দুর্ভাগ্যজনকভাবে রানআউট হয়ে যান নন-স্ট্রাইকে থাকা শান্ত। ৩৪ বলে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৬ রান আসে তার ব্যাট থেকে। তার বিদায়ে থামে ৩৭ বলে ৪৮ রানের জুটি।

এরপর বাংলাদেশ শক্ত অবস্থান থেকে ধীরে ধীরে পথ হারিয়ে ফেলে। আসেনি বিশের ঘরে পৌঁছানো কোনো জুটি। হৃদয় ২১ বলে ২৫ ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ৪ বলে ৩ রানে আউট হলে ১০৬ রানে পড়ে যায় পঞ্চম উইকেট। তারপরও সাকিব আল হাসান ক্রিজে থাকায় বেঁচে ছিল আশা। তাকে দেখাচ্ছিল ছন্দে। কিন্তু অন্যপ্রান্তে জাকের আলি অনিক হওয়ার সঙ্গে যেন মড়ক লাগে বাংলাদেশের ইনিংসে।

১৭তম ওভারের শেষ বলে শ্যাডলি ফন শ্যালকউইককে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে সীমানার কাছে ধরা পড়েন জাকের। তার ক্যাচ নেন হারমিত সিং। তিনি করেন ৫ বলে ৪ চার। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের নায়ক হিসেবে আবির্ভূত হন পাকিস্তানে জন্ম নেওয়া পেসার আলি খান।

১৮তম ওভারের প্রথম ডেলিভারিতে সাকিবকে বোল্ড করেন আলি। সাকিব ২৩ বলে করেন ৩০ রান। ওই ওভারের তৃতীয় বলে তানজিম হাসান সাকিব পড়েন এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে। ২ বল খেলে তিনি কোনো রান করতে ব্যর্থ হন। পরের ওভারে শরিফুল ইসলাম বোল্ড হলে বাংলাদেশ পৌঁছে যায় হারের একদম কাছে।

ম্যাচের শেষ ওভারে বাংলাদেশের চাহিদা ছিল ১২ রানের। প্রথম বলে একটি বাই রান এলে স্ট্রাইকে যান রিশাদ হোসেন। দ্বিতীয় বলে তিনি চার মারলে জেগে ওঠে ক্ষীণ আশা। তা অবশ্য মিলিয়ে যায় পরের বলেই। আলির ডেলিভারিতে ইনসাইড এজে উইকেটরক্ষক ও যুক্তরাষ্ট্রের অধিনায়ক মোনাঙ্ক প্যাটেলের গ্লাভসবন্দি হন রিশাদ। থামে বাংলাদেশের ইনিংস। রিশাদ ৫ বলে করেন ৯ রান। মোস্তাফিজুর রহমান ৩ বলে ১ রানে অপরাজিত থাকেন।

ম্যাচসেরা আলি ৩ উইকেট শিকার করেন ২৫ রান খরচায়। ২ উইকেট পেতে নেত্রভালকার দেন ১৫ রান। সমান সংখ্যক উইকেটের জন্য ফন শ্যালকউইকের খরচা ২১ রান।

এর আগে ভালো শুরু পাওয়া যুক্তরাষ্ট্র চ্যালেঞ্জিং পুঁজি পাওয়ার মঞ্চ তৈরি করছিল। কিন্তু সেই আশায় জল ঢেলে বাংলাদেশের বোলাররা দারুণ পারফর্ম করেন ইনিংসের দ্বিতীয় অংশে। শেষ ৮ ওভারে আঁটসাঁট থেকে তারা দেন মাত্র ৫৮ রান। তবে পরবর্তীতে তাদের মানের পারফর্ম করতে পারেননি ব্যাটাররা।

বাংলাদেশের অধিনায়ক শান্ত ব্যবহার করেন পাঁচ বোলার। রিশাদ , শরিফুল ও মোস্তাফিজ দুটি করে উইকেট নেন যথাক্রমে ২১, ২৯ ও ৩১ রানে। একাদশে ঢোকা ডানহাতি পেসার তানজিম উইকেটশূন্য থাকলেও ২৩ রানের বেশি দেননি। সাকিব অবশ্য খরুচে বোলিংয়ে স্পেল শেষ করেন বিনা উইকেটে ৩৫ রানে।

একই ভেন্যুতে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ৫ উইকেটে হেরেছিল বাংলাদেশ। সেদিন ৪ ওভারে ৫৫ রান রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন বোলাররা।

Comments

The Daily Star  | English

Thousands suffer as flood persists in Sylhet; over 16,000 in shelters

While the flood situation in Sylhet had improved recently, incessant rain since Monday has caused flooding to recur, submerging the majority of the areas that had previously receded

26m ago