বাগেরহাটে ২৭৯৯ পিএসএফের ১৩২৬টিই অকেজো, সুপেয় পানির তীব্র সংকট

ছবি: পার্থ চক্রবর্তী/স্টার

শুষ্ক মৌসুম শুরু হওয়ার পর থেকে বাগেরহাটের উপকূলীয় ছয় উপজেলার বাসিন্দারা সুপেয় পানির তীব্র সংকটে ভুগছেন।

স্থানীয়রা জানান, বাগেরহাট সদর, রামপাল, মোংলা, মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা ও কচুয়া উপজেলায় প্রধান উৎস পুকুরের মিঠা পানির প্রচণ্ড অভাব রয়েছে।

এছাড়া, কচুয়া, মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা ও মোংলা উপজেলায় লবণাক্ততার কারণে গভীর নলকূপও নেই।

উপকূলীয় এই ছয় উপজেলায় স্থাপিত জনস্বাস্থ্য বিভাগের পন্ড স্যান্ড ফিল্টারের (পিএসএফ) প্রায় অর্ধেক অকেজো হয়ে পড়েছে, যা পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলেছে।

স্থানীয়রা পুকুরের অপরিশোধিত পানি পান করতে বাধ্য হওয়ায় পানিবাহিত রোগসহ নানা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছেন।

পুকুরের পানি হাতকলের মাধ্যমে উঠিয়ে ইট-বালুর ট্যাংকে রেখে নিরাপদ করা হয়। এটাকে পিএসএফ বলে।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ১৯৯২-৯৩ সাল থেকে সরকারি ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা উপকূলীয় উপজেলাগুলোতে মোট দুই হাজার ৭৯৯টি পিএসএফ স্থাপন করেছে। যার মধ্যে কমপক্ষে এক হাজার ৩২৬টি বর্তমানে ব্যবহার অযোগ্য।

গত পাঁচ বছরে ২২ লাখ টাকায় ৪২টি পিএসএফ এবং সাড়ে নয় কোটি টাকায় ১৫৫টি সৌর পিএসএফ স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া, জেলায় ১৪৬ কোটি দুই লাখ টাকায় ৩৬ হাজার ৫৫০টি বৃষ্টির পানি সংগ্রহের ট্যাংক বিতরণ করা হয়েছে।

কচুয়ার সাংদিয়া গ্রামের পাবিত্র দাস দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বর্ষার সময় আমরা খাবার ও রান্নার জন্য বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করি। তবে শুষ্ক মৌসুমে এলাকার পিএসএফগুলো অকেজো হয়ে যাওয়ায় আমরা পানির তীব্র সংকটে পড়েছি। এখন আমরা গৃহস্থালি কাজে পুকুরের অপরিশোধিত পানি ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছি এবং এর ফলে ডায়রিয়া, বমি ও পেটের ব্যথাসহ নানা স্বাস্থ্য সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি।'

'আমি এখনো সরকারিভাবে কোনো ট্যাংক পাইনি। অন্তত বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের জন্য একটি ট্যাংক পেলেও উপকৃত হব', বলেন তিনি।

একই গ্রামের দিলীপ দাস ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ত পানির মধ্যে বাস করছি। পুকুরগুলো আমাদের মিঠা পানির প্রধান উৎস। এলাকার পুকুরে মাছ চাষে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও গোপনে তা করা হচ্ছে, যা পানির গুণমান নষ্ট করছে।'

সাংদিয়া গ্রামের পরিতোষ দাস এবং মালতি দাসও পিএসএফ মেরামতের দাবি জানিয়েছেন।

এ ছাড়াও, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত ট্যাংক সরবরাহের অনুরোধ করেছেন স্থানীয়রা।

বাধাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাকিব ফয়সাল ওহিদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার ইউনিয়নের আবাদ, পানবাড়িয়া ও রঘুদত্তকাঠি এলাকার পিএসএফগুলো মেরামতের জরুরি প্রয়োজন, যাতে চলমান পানি সংকট দূর হয়।'

বাগেরহাট জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জয়ন্ত মল্লিক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'উপকূলীয় উপজেলাগুলোর পানি সংকট পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বৃষ্টির পানি সংগ্রহের জন্য ট্যাংক বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। আমরা অনেক এলাকায় গভীর নলকূপ স্থাপন করছি। এ ছাড়া, পিএসএফগুলো মেরামতের জন্য কাজ করছি। একইসঙ্গে বাসিন্দাদের পানি পরিশোধন ট্রাকের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করছি।'

Comments

The Daily Star  | English

Enforced disappearances: Eight secret detention centres discovered

The commission raised concerns about "attempts to destroy evidence" linked to these secret cells

1h ago