ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ে বর্তমান কর্তৃপক্ষের তথ্য অসত্য: সাঈদ খোকন

ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ে বর্তমান কর্তৃপক্ষের তথ্য অসত্য: সাঈদ খোকন
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সাবেক মেয়র ও ঢাকা-৬ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ সাঈদ খোকন | ছবি: টেলিভিশন থেকে নেওয়া

ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) বর্তমান কর্তৃপক্ষ অসত্য তথ্য উপস্থাপন করেছে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক মেয়র ও ঢাকা-৬ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ সাঈদ খোকন।

এ সময় তিনি আরেকজনের ঘাড়ে চাপিয়ে নিজের ব্যর্থতা ঢাকার চেষ্টা না করে আসন্ন ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি মোকাবিলার আহ্বান জানান।

গত বুধবার এক অনুষ্ঠানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ২০১৯ সালের থেকে আমরা ৪২ হাজারের মতো রোগী আমরা কম রাখতে পেরেছি। ঢাকাবাসীকে আমরা সেই সুবিধা দিতে পেরেছি, ঢাকাবাসীকে রোগমুক্ত রাখতে পেরেছি, ঢাকাবাসীকে স্বাস্থ্যকর পরিবেশে আমরা রাখতে পেরেছি।

আজ শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে মিট দ্য প্রেসে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

মেয়র মোহাম্মদ হানিফ মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন 'এগিয়ে ছিল দক্ষিণ ঢাকা, স্মৃতির পাতায় ফিরে দেখা' শীর্ষক এই মিট দ্য প্রেসের আয়োজন করে।

সাঈদ খোকন বলেন, '২০১৯ সালে যখন দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দায়িত্বে আমি ছিলাম, তখন ডেঙ্গুর ছড়িয়ে পড়ে এবং পরিস্থিতি কিন্তু অনেকটাই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল সে সময়। আমার চেষ্টার কোনো কমতি ছিল না। উপরে আল্লাহ রাব্বুল আল-আমিন আছেন, তিনি সমস্ত কিছুর সাক্ষী—নিচে এই শহরের জনগণ। এই শহরের জনগণও সাক্ষী।'

তিনি বলেন, 'আমি চেষ্টা করে গেছি। দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে গেছি। আমার এই হাজার চেষ্টার পরেও আক্রান্ত সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়ে গিয়েছিল সারা দেশে। আমি দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দায়িত্বে ছিলাম এবং সারা দেশে প্রায় ১৫৭ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। যাতে আমি অত্যন্ত ব্যথিত ছিলাম। আমি অনেক চেষ্টা করেও এই মৃতের সংখ্যা, আক্রান্তের সংখ্যা কমাতে পারিনি কিন্তু আমি চেষ্টা না করে বিদেশে চলে যাইনি। আমি জনগণের সাথে ছিলাম।'

তিনি আরও বলেন, 'আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম কিন্তু আমি অসুস্থতাকে গুরুত্ব দেইনি। আমি চেষ্টা করে গেছি। হাসপাতালে রোগীর সঙ্গে কথা বলা, ব্যবস্থাপনাটা খুব সহজ ছিল না। মশার ওষুধের গুণগত মানগুলো ঠিক করা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আমি চেষ্টা করে গেছি। এই যে মৃত্যু হয়েছে, সব সময় আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায়।

'আমি খুব দুঃখ পেলাম, কষ্ট পেলাম দুতিন দিন আগে বর্তমান যে কর্তৃপক্ষ, তিনি বললেন ১৯ সালের তুলনায় ২৩ সালে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ছিল এবং আক্রান্তের সংখ্যা ৪১ হাজার কম ছিল। আমি কষ্ট পেয়েছি, নগরবাসী হতভম্ব হয়েছে। নগরবাসী অবাক হয়েছে, কারণ আমরা গত বছর দেখেছি পত্র-পত্রিকার রিপোর্টিংয়ে—২২ বছরের সব রেকর্ড ভেঙে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা তিন লাখের বেশি ছিল এবং সারা দেশে মৃতের সংখ্যা ছিল এক হাজার ৭০৫ জন। এটা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সূত্র মতে,' বলেন তিনি।

দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকা দেখিয়ে সাঈদ খোকন বলেন, 'সেই সূত্র ধরে পরদিন নিউজটি প্রকাশিত হয়, যেখানে বলা হয়, ২০১৯ এর চেয়ে ২০২৩ সালে ঢাকায় ডেঙ্গু রোগী বেশি ছিল।

'গত বছর ৪২ হাজার রোগী কম থাকার যে তথ্য বর্তমান কর্তৃপক্ষ দিয়েছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে তা অসত্য,' বলেন তিনি।

গতকালের পত্রিকা দেখিয়ে তিনি আরও বলেন, 'এখনো ডেঙ্গুর মৌসুম শুরু হয়নি। ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১৬ মে আক্রান্ত দুই হাজার ৫৫৯ জন, মৃত ৩২ জন। আজকের পত্রিকার তথ্য অনুসারে, গতকাল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু হয়। এর আগে বুধবার একদিনে মারা যাওয়া তিনজন ডেঙ্গু রোগীও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।

'একটি সমস্যা আসতে পারে। সেটিকে মোকাবিলা করা আমাদের প্রয়োজন। আমরা যারা রাজনীতি করি, আমরা সে বিষয়টিকে মোকাবিলা করব। আরেকজনের ঘাড়ে চাপিয়ে নিজের ব্যর্থতাকে ঢাকার চেষ্টা না করে আসুন, আমরা এই ধরেন আচরণ না করে সামনে যে একটা ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি হতে চলেছে সেটা মোকাবিলার জন্য সর্বস্তরের নাগরিক, কর্তৃপক্ষ এবং আমাদের যে অভিজ্ঞতা রয়েছে...সবাই মিলে আগামী দিনের পরিস্থিতি আমরা মোকাবিলা করি,' বলেন খোকন।

তিনি আরও বলেন, 'আমরা একে অপরকে দোষারোপ না করি। ইতোমধ্যে ৩২ জন মারা গেছেন। বুঝতেই পারছেন, আগামীতে কী অবস্থা হতে পারে।'

মেয়রের দায়িত্ব পালনকালের স্মৃতি তুলে ধরে তিনি বলেন, 'নাগরিক হিসেবে আমরা আশা করব, যে কোনো ইতিবাচক কাজের সূচনা; যদি নতুন নেতৃত্ব আসে, সেটাকে এগিয়ে নিয়ে জনগণের সেবায় নিয়জিত করাই হোক তাদের উদ্দেশ্য। কোনোভাবেই রাজনৈতিক কিংবা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে আরেকজনকে অযথা প্রশ্নের সম্মুখীন, বিভিন্নভাবে অপবাদ দেওয়া, অপরাজনীতি করা এই শহরের জনগণ আশা করে না—এটা কাম্য নয়।'

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

13h ago