আ. লীগ এখন জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য সংগঠনে পরিণত হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: বাসস

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দেশের জনগণকে সুন্দর ও উন্নত জীবন দিতে সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে তার দল দেশকে সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যাবে বলে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন।

তিনি বলেন, 'প্রতিবার নির্বাচনের সময় চক্রান্ত হয়, সেটা মোকাবিলা করে আমরা বেরিয়ে আসি। আমাদের তা ধরে রাখতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ রক্ত দিয়ে যে অধিকারগুলো আদায় করেছিল, সেটা আমরা সমুন্নত করতে পেরেছি। কিন্তু আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে।'

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি আজ বৃহস্পতিবার তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে তাকে গণভবনে শুভেচ্ছা জানাতে আসা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে এসব কথা বলেন।

৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর ১৯৮১ সালের ১৭ মে দীর্ঘ প্রবাস জীবন কাটাতে বাধ্য হওয়া শেখ হাসিনা এক রকম জোর করেই দেশে ফিরে আসেন। এর আগে তার অনুপস্থিতিতেই তাকে সর্বসম্মতিক্রমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। সেদিন বিকেল সাড়ে ৪টায় ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে তিনি ভারতের রাজধানী দিল্লি থেকে কলকাতা হয়ে তৎকালীন ঢাকা কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান। ঝড়-ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ সেই দিনে বৈরি আবহাওয়া উপেক্ষা করে লাখো জনতা তাকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানায়।

তিনি যখন দেশে ফেরেন তখন যুদ্ধাপরাধী এবং জাতির পিতার হত্যাকারীরা ক্ষমতায় ছিল। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তার পাশে ছিল বাংলাদেশের জনগণ। তিনি জানতেন তাকেও তার বাবা-মা ও পরিবারের সদস্যদের ভাগ্যবরণ করতে হতে পারে। কিন্তু দেশবাসী ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রতি ছিল তার আস্থা।

শেখ হাসিনা বলেন 'আমি আমার বাবার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলব, আমার সব শক্তি-সাহস মা-বাবার কাছ থেকে পেয়েছি।'

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার সময় এত বড় সংগঠন চালানোর অভিজ্ঞতা তার ছিল না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ এখন দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী, বৃহত্তম এবং জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য সংগঠনে পরিণত হয়েছে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ পঞ্চম মেয়াদে ক্ষমতায় এসেছে। আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ উল্লেখ করে টানা চারবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের যদি রাজনৈতিক চিন্তা-চেতনা না থাকে, দেশপ্রেম না থাকে, সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় না থাকে, তাহলে সেটা এগোতে পারে না। সামনে আরও বদলাতে হবে। কারণ, আমার বাবার একটাই স্বপ্ন ছিল দেশটাকে গড়ার। আমাদের পরিকল্পনা সেটাই আছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ৭৫ এর পর যারা ক্ষমতায় ছিল তারা নিজেদের ক্ষমতা কুক্ষিগত করার চেষ্টা করেছিল। দেশের কোনো উন্নতি করতে পারেনি। তারা বরং শতশত সামরিক কর্মকর্তাকে হত্যা করেছে এবং ক্ষমতায় থাকার জন্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অমানবিক নির্যাতন ও হত্যা করেছে। 

এ সময় প্রতিরাতে কারফিউ বলবৎ রাখার জিয়াউর রহমানের কারফিউ গণতন্ত্রের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে আওয়ামী লীগের অগণিত নেতাকর্মীর গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সংগ্রাম ও আত্মাহুতির কথাও তিনি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী তার উন্নয়নের মূলমন্ত্র তুলে ধরে বলেন, 'কী পেলাম, না পেলাম সেই চিন্তা করেনি। ভবিষ্যৎ কী সেই চিন্তাও করি না। চিন্তা করি দেশের মানুষের ভবিষ্যৎ যেন আরও সুন্দরভাবে গড়ে তুলে দিয়ে যাব। সেটাই আমাদের লক্ষ্য।'

দলীয় নেতাদের আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, 'এটাই মনে রাখবেন একটা দল করি শুধু নেতা হওয়ার জন্য নয়, মানুষের জন্য কতটুকু করতে পারলাম, কী দিতে পারলাম, কী দিয়ে গেলাম, এটাই রাজনৈতিক মানুষের জীবনের বড় কথা। এই কথা মাথায় রাখতে পারলে দেশের মানুষের জন্য অনেক কিছুই করা যেতে পারে।'

সংগঠনকে শক্তিশালী করার তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, 'আর যেন যুদ্ধাপরাধী, খুনিরা বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে, এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে, বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে হবে।'

দেশের মানুষ রক্ত দিয়ে যে অধিকার পেয়েছিল, তা তারা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছেন উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, 'দেশের ইতিহাস বিকৃত করার চেষ্টা হয়েছিল এবং বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ প্রচার ও জয় বাংলা শ্লোগানের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। কিন্তু জয়বাংলা শ্লোগান আবার ফিরে এসেছে এবং জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ বিশ্ব ঐতিহ্যের প্রামাণ্য দলিলে যেমন স্থান করে নিয়েছে। তেমনি অমর একুশে ফেব্রুয়ারি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি অর্জন করেছে।'

এর আগে, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা তাদের দলীয় প্রধান শেখ হাসিনাকে ৪৪তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে গণভবনে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।

এ সময় আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের নেতাকর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন।

Comments

The Daily Star  | English
Anti-Discrimination Students Movement

Students to launch political party by next February

Anti-Discrimination Student Movement and Jatiya Nagorik Committee will jointly lead the process

9h ago