বিদেশি সাহায্যের প্রকল্প দ্রুত শেষ করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

বৃহস্পতিবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: বাসস

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়নের গতি আরও ত্বরান্বিত করতে বৈদেশিক সাহায্য ও অনুদানপ্রাপ্ত প্রকল্পগুলো দ্রুত সম্পন্ন করতে অতিরিক্ত প্রচেষ্টা চালাতে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন।

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে বৃহস্পতিবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় সভাপতিত্বকালে প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশনা দেন। এনইসি আগামী অর্থবছরের (অর্থবর্ষ২৫) জন্য ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন করেছে।

বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব সত্যজিৎ কর্মকার বলেন, প্রধানমন্ত্রী প্রকল্প পরিচালক ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ শেষে তাদের বিশেষায়িত এলাকায় পুনর্নিয়োগের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।

ব্রিফিংকালে পরিকল্পনামন্ত্রী মেজর জেনারেল (অব.) আবদুস সালাম, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মো. শহীদুজ্জামান সরকার, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ও সংশ্লিষ্ট সচিবরা উপস্থিত ছিলেন।

সত্যজিৎ বলেন, প্রধানমন্ত্রী ছোট প্রকল্প গ্রহণের পরিবর্তে জেলা ভিত্তিক প্রকল্প গ্রহণ এবং এভাবে সেই প্রকল্পগুলো তত্ত্বাবধানের জন্য জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়োগ করার পরামর্শ দিয়েছেন।

পুনরায় প্রকল্প পরিচালকদের একটি পুল তৈরির আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা যেসব প্রকল্প পরিচালক ও কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে, তাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়ার ওপর আবারও গুরুত্বারোপ করেন।

বৈদেশিক সাহায্যপ্রাপ্ত প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন হারে গতিশীলতা বাড়াতে প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে সহায়তাপ্রাপ্ত প্রকল্পগুলোর প্রতি তিন মাসে তাদের বাস্তবায়ন অগ্রগতি সম্পর্কে একনেকে অবহিত করতে বলেন।

প্রধানমন্ত্রী ইমপ্লিমেন্টেশন, মনিটরিং অ্যান্ড ইভালুয়েশন ডিভিশনকে (আইএমইডি) যেসব ফার্ম সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা করে, তাদের একটি নিবন্ধন প্রক্রিয়ার আওতায় আনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন, যেন বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানসম্পন্ন সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা যায়।

পরিকল্পনামন্ত্রী আবদুস সালাম জানান, এনইসি সভায় গত ৭ মে অনুষ্ঠিত বর্ধিত সভার সব প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, যেহেতু অধিকাংশ প্রকল্প উপজেলাভিত্তিক নেওয়া হয়, তাই এতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে সমন্বয়হীনতা দেখা যায়। সভায় জেলাভিত্তিক প্রকল্প গ্রহণের প্রস্তাব করা হয় এবং এনইসি সভায় তা ইতিবাচকভাবে আলোচনা হয়। 

তিনি বলেন, সংসদ সদস্যরা জেলাগুলোর জন্য পাঁচ বছর পর্যন্ত জেলাভিত্তিক অংশগ্রহণমূলক মাস্টার প্ল্যান প্রণয়নে নিযুক্ত থাকবেন এবং সেগুলোকে বাস্তবসম্মত করা হবে। 

এমনকি উপজেলা চেয়ারম্যানরাও এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকবেন বলেও জানান মন্ত্রী।

সালাম আরও বলেন, গ্রামীণ অবকাঠামো, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে আরও উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।

তিনি বলেন, প্রকল্প নির্বাচনের ক্ষেত্রে ফিল্টারিং এখন অনেক শক্তিশালী। ফলে কোনো অপ্রয়োজনীয় বা অর্থহীন প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে না। 

দেশে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ দারিদ্র বিমোচনের হারকে একটি বড় ধরনের অর্জন হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সবার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের 'সোনার বাংলা' হবে।

পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মো. শহীদুজ্জামান সরকার আশা প্রকাশ করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নের 'স্মার্ট বাংলাদেশ' গড়তে সংশ্লিষ্ট সবাই সরকারের প্রচেষ্টাকে বাস্তবে পরিণত করবে।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, নতুন এডিপিতে যেন কোনো অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প হাতে না নেওয়া হয়, সে ব্যাপারে পরিকল্পনা কমিশন এবার যথেষ্ট সতর্ক ছিল। 

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সরকারের চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে কেউ যেন পিছিয়ে না থাকে, তা নিশ্চিত করা।

পরিকল্পনা সচিব সত্যজিৎ কর্মকার বলেন, আগামী অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়ন যেন আরও ভালো হয়, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী পরিকল্পনা কমিশনকে কঠোরভাবে মনিটরিং করার নির্দেশ দিয়েছেন।

তিনি বলেন, আগামী অর্থবছরের বাজেটের লক্ষ্য মুদ্রানীতি ও রাজস্ব নীতির মধ্যে সমন্বয় নিশ্চিত করার মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা। 

অতীতের তুলনায় সাহায্যপ্রাপ্ত প্রকল্পের অনুপাত ও হার এখন প্রায় একই রয়ে গেছে উল্লেখ করে সত্যজিৎ বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি ও কভারেজ আগামী অর্থবছরে আরও প্রসারিত করা হবে যেন সাধারণ মানুষকে মুদ্রাস্ফীতি চাপ থেকে স্বস্তি দেওয়া যায়। 'এটি প্রধানমন্ত্রীর অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন দর্শনের সাথেও সম্পৃক্ত।'

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শতকরা হারে অতীতের তুলনায় বৈদেশিক সাহায্যপ্রাপ্ত প্রকল্পের ওপর সরকারের নির্ভরশীলতা বাড়েনি, তবে এ ধরনের প্রকল্পের সংখ্যা ও পরিমাণ বেড়েছে।

সত্যজিৎ বলেন, উন্নয়ন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে ২০২৬ সালের মধ্যে সরকারের পক্ষে যতটা বিদেশি ঋণ ও অনুদান ব্যবহার সম্ভব হবে, তত ভাল হবে, কারণ, দেশটি তার স্বল্পোন্নত থেকে উন্নীত হওয়ার কারণে ২০২৬ সালে দেশ বিদ্যমান অনেক সুবিধা হারাবে।

তিনি বলেন, যদিও কোভিড-১৯ এর প্রভাব, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নতুন এডিপিতে কিছু অমিল আছে, তবে গত অর্থবছরের তুলনায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতে বরাদ্দ এবার বেড়েছে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনা সচিব বলেন, অর্থবছর পরিবর্তনের বিষয়টি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ব্যাপার।

আইএমইডি সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সব সচিবকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের হার আরও বাড়াতে তাদের আরও বেশি কিছু করতে হবে।

তিনি আরও জানান, চলতি অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়কালে এডিপি বাস্তবায়নের হার ৪৯ দশমিক ২৬ শতাংশ, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৫০ দশমিক ৩৩ শতাংশ।

Comments

The Daily Star  | English

Lease land, grow your own veggies, grains

It all began with a surprise addition to lunch -- long bean mash.

16h ago