ফ্যাশনে কাচের চুড়ির ফিরে আসা
বাঙালিদের কাছে কাচের চুড়ির একটা বিশেষ আবেদন আছে। বিশেষত পহেলা বৈশাখের মতো অনুষ্ঠানে এর কদর যেন আরও বেড়ে যায়। তবে গত কয়েক বছরে ফ্যাশন ট্রেন্ডে পরিবর্তন আসার কারণে কাচের চুড়ির কদর যেন কিছুটা কমে গেছে।
চুড়ির স্থায়িত্ব এবং ডিজাইনের কথা বিবেচনা করে বেশিরভাগ মানুষ এখন মেটালিক চুড়ির দিকে বেশি ঝুঁকছেন। তবে হাতভর্তি এক ডজন কাচের চুড়ি পরে হেঁটে গেলে যেই ঝুনঝুন আওয়াজ হয় সেটির সঙ্গে আর কোনো কিছুর তুলনা হয় না।
যারা কাচের চুড়ি ভালোবাসেন এবং সেই পুরোনো দিনের স্মৃতির কাছে ফিরে গিয়ে কাচের চুড়ি পরতে চান তাদের কথা চিন্তা করে ঢাকায় গড়ে উঠেছে একটি দোকান, যেখানে পাওয়া যায় বিভিন্ন রকম কাচের চুড়ি। এ ধরনের ব্যবসার চিন্তা একেবারেই নতুন এবং কিছুটা অন্যরকম।
চুড়ির দোকান হিসেবে ২০১৮ সালে 'কাচের চুড়ি' ব্যবসা শুরু করে। সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী তৌহিদ হাসান প্রথমে অনলাইনে এই উদ্যোগ নেন।
কাচের চুড়ির প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান তৌহিদ বলেন, 'কাচের চুড়ি এমন একটি উপহার যা কিনতে আপনার মানিব্যাগ খালি হবে না, কিন্তু যাকে দিবেন তিনি বেশ খুশি হবেন। কাচের চুড়ির ৬০ শতাংশ ক্রেতাই পুরুষ। তারা তাদের প্রিয় মানুষ বা বান্ধবীদের জন্য উপহার কিনতে আসেন এখানে। উপহার দেওয়ার জন্য আমাদের এখানে স্পেশাল গিফট বক্স আছে। ৪৯ টাকা থেকে শুরু করে ৩৮০ টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের কাচের চুড়ি পাওয়া যায়।'
বর্তমানে খিলগাঁও, বনশ্রী ও মিরপুরে কাচের চুড়ির আউটলেট রয়েছে।
একবার পুরান ঢাকার চকবাজারে ঘুরতে গিয়ে রংবেরঙের কাচের চুড়ি চোখে পড়ে তৌহিদের। আর তখনই তিনি ভাবেন এই চুড়িগুলো অনলাইনে বিক্রি করা গেলে কেমন হয়? এই ভাবনা থেকেই ১৬৫০ টাকা দিয়ে ১২০ ডজন রেশমি চুড়ি কিনে ফেলে ব্যবসা শুরু করেন তিনি।
'আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে একইসঙ্গে পড়াশোনা এবং এই ব্যবসা সামলাতে হয়েছে। কোভিডের সময় আমার অনলাইন ব্যবসা বেশ ভালো চলেছে। লকডাউনের শুরুর দিকে অনেকেই বিভিন্ন ধরনের অনলাইন ব্যবসা করছিল। আশপাশে অনেকেই তখন চড়া দামে কাচের চুড়ি বিক্রি করা শুরু করে। তখন এই বাজারের অবস্থা কোন দিকে যাবে তা ঠিক বোঝা যাচ্ছিল না। আমি ৬ মাস এসব থেকে দূরেই থাকি। পরে যখন বাকিরা ব্যবসা বন্ধ করে দিচ্ছিল, আমি আবার ফেরত এসে অনলাইন ও অফলাইন দুই জায়গাতেই কার্যক্রম শুরু করি', বলেন তিনি।
বর্তমানে তিনি দিল্লি, মুম্বাই ও ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে এক্সক্লুসিভ সব চুড়ি নিয়ে আসেন। বাংলাদেশি চুড়ির মান ভালো না হওয়ায় তিনি মূলত ভারত থেকেই চুড়ি নিয়ে আসেন।
তৌহিদ বলেন, 'তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে চুড়ি কিনে কাস্টমস ও ভ্যাটের যাবতীয় নিয়মকানুন মেনে আমি দেশে নিয়ে আসি। চুড়ি বিক্রির সঙ্গে আমার এক ধরনের আবেগ জড়িয়ে আছে। আমি নিজে কিছু করতে চেয়েছিলাম, সেখান থেকেই এই ব্যবসার শুরু। ব্যবসা প্রসারিত করতে কিছু টাকা লোন নিয়েছি।'
বৈশাখের সময় তাদের সবচেয়ে বেশি চুড়ি বিক্রি হয়। আসন্ন কিছু উৎসবকে মাথায় রেখে তাদের ৬০ ধরনের নতুন ডিজাইন আসতে চলেছে।
চুড়িপ্রেমী হলে আপনার অবশ্যই কাচের চুড়ি বেছে নেওয়া উচিত। বিশেষ করে যারা তাদের সঙ্গীকে ভিন্ন ধরনের কোন উপহার দিতে চাইছেন তাদের সেই উপহারটি হতে পারে কাচের চুড়ি।
অনুবাদ করেছেন সৈয়দা সুবাহ আলম
Comments