যেভাবে ধারাবাহিক সাফল্য ধরে রেখেছে নরসিংদীর নাছিমা কাদির মোল্লা হাই স্কুল

নরসিংদী
ফলাফল প্রকাশের পর উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা। ছবি: সংগৃহীত

এসএসসির ফলে এবারও সাফল্য অব্যাহত আছে নরসিংদীর নাছিমা কাদির মোল্লা (এনকেএম) হাই স্কুল অ্যান্ড হোমসের। এ বছর এই স্কুলের ২৯৫ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে, পাস করেছে শতভাগ। ২৯৫ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ২৯৪ জন পেয়েছে জিপিএ ৫, আর বাকি একজন পেয়েছে জিপিএ ৪.৯৪।

আজ রোববার এসএসসির ফলাফল ঘোষণার পর এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. ইমন হোসেন।

ফল প্রকাশের পর উচ্ছ্বাসিত এই স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

স্কুল কর্তৃপক্ষ জানায়, নাছিমা কাদির মোল্লা হাই স্কুল অ্যান্ড হোমস ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে জেএসসি ও এসএসসিতে টানা শতভাগ পাসসহ ফলাফলের ভিত্তিতে প্রায় প্রতি বছরই বোর্ডে অন্যতম সেরা স্থান দখল করে আসছে।

এরই ধারাবাহিকতায় এবার এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ২৯৫ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে শতভাগ পাসসহ ২৯৪ শিক্ষার্থী জিপিএ ৫ ও বাকি একজন জিপিএ ৪.৯৪ পেয়েছে। এর আগে ২০২৩ সালে ২৭৮ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে শতভাগ পাসসহ ২৭০ জন জিপিএ ৫ পেয়েছিল।

এ ছাড়া ২০২২ সালে ২৬৬ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে শতভাগ পাসসহ ২৬৬ জনই জিপিএ ৫ পেয়েছিল। ২০২১ সালে ২৪৭ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে শতভাগ পাসসহ ২৩৭ জন জিপিএ ৫ পেয়েছিল। ২০২০ সালে ২১৪ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে শতভাগ পাসসহ ২০০ জন জিপিএ ৫ পেয়েছিল।

২০১৯ সালে সালে ১৭১ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে শতভাগ পাসসহ ১৬৮ জন জিপিএ ৫ পেয়েছিল। ২০১৮ সালে ১৩৯ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে শতভাগ পাসসহ  ১৩৭  জন জিপিএ ৫ পেয়েছিল এবং ২০১৭ সালের এসএসসি পরিক্ষায় ১৬৪ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে সবাই জিপিএ ৫ পেয়েছিল।

১৭৩ জন শিক্ষক-শিক্ষিকার সার্বিক তত্ত্বাবধানে স্কুলটি কঠোর শৃঙ্খলার মধ্যে দিয়ে পরিচালিত হয়ে আসছে। বর্তমানে স্কুলটির শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার ৬০০ জন।

জিপিএ ৫ পাওয়া সাদিয়া নওরীন প্রভা বলে, 'আমাদের বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় শিক্ষকদের অক্লান্ত পরিশ্রম, সঠিক দিক-নির্দেশনা, নিয়মিত ক্লাস, বিশেষ ক্লাস, গাইড টিচারের মাধ্যমে নিয়মিত হোম ভিজিট, টিউটেরিয়াল ও মাসিক পরীক্ষার কারণেই এই ভালো ফল সম্ভব হয়েছে।'

জিপিএ ৫ পাওয়া আবিদ নূর বলে, 'শিক্ষকদের কঠোর নজরদারিতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে মনে হয়েছে আমার নয়, শিক্ষকদেরই পরীক্ষা। প্রতিটা বিষয়ে যেখানে সমস্যা সেখানেই হাতেকলমে ধরে দিয়েছেন তারা। কৃতজ্ঞতা তাদের প্রতি।'

জিপিএ-৫ পাওয়া আরেক শিক্ষার্থী কারিমা জামান রিনভীর বাবা আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, 'শিক্ষকরা নিয়মিত তদারকি করতেন। পড়া না পারলে আমাদেরও স্কুলে ডেকে নিয়ে পরামর্শ দিতেন। পরীক্ষার আগে আমার মেয়েও অনেক পরিশ্রম করেছে। তার সাফল্যে আমরা অনেক খুশি।'

স্কুলের ইংরেজি শিক্ষক আবু মুসা বলেন, 'ভালো ফলাফলের কারণ হচ্ছে, নিয়মিত দুর্বল শিক্ষার্থীদের তদারকি করা এবং তার দুর্বল জায়গাগুলো কাটিয়ে উঠার জন্য তাদের পাশাপাশি শিক্ষাকদেরও তাদের পেছনে শ্রম দেওয়া। প্রতি সপ্তাহে একজন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের বাসায় খোঁজ নেন এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন।'

নাছিমা কাদির মোল্লা হাই স্কুল অ্যান্ড হোমসের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আবদুল কাদির মোল্লা বলেন, 'আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি বরাবরই সেরা ফলাফল করছে। এবারও প্রায় শতভাগ পাসসহ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছে। মূলত নরসিংদীর মতো মফস্বল শহরে মানসম্মত শিক্ষার অঙ্গীকার নিয়েই আমি ও আমার স্ত্রী নাছিমা বেগম স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। আমি সবসময় চেয়েছি সুশিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা মানবসম্পদে পরিণত হোক, যাতে আমাদের সমাজে সার্টিফিকেটধারী শিক্ষিত বেকার তৈরি না হয়।'

স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. ইমন হোসেন বলেন, 'একটি বিদ্যালয়ের ভালো ফলাফলের মূল মন্ত্র হচ্ছে বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদ, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবদের মধ্যে সমন্বয়। আবদুল কাদির মোল্লার সময়োপযোগী সঠিক দিক নির্দেশনা আর এক ঝাঁক তরুণ শিক্ষকের অক্লান্ত পরিশ্রমে আমাদের এই ফলাফল অব্যাহত আছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Locals take it upon themselves to repair road

On Saturday, residents of the two villages began the work to turn the earthen road to a brick road

56m ago