শরীয়তপুর

এমপির মধ্যস্থতায় চিকিৎসকের পা ধরে মাফ চাইলেন শ্রমিক নেতা

দুই চিকিৎসকের পা ধরে মাফ চাইছেন এলিম পাহাড়। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসকের গায়ে হাততোলা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা এলিম পাহাড় স্থানীয় সংসদ সদস্যের মধ্যস্থতায় ওই চিকিৎসকদের পা ধরে মাফ চেয়েছেন।

সম্প্রতি এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

গত শনিবার শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. শেহরিয়ার ইয়াছিনের গায়ে হাত তোলেন জেলা শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যনির্বাহী সভাপতি এলিম পাহাড়। এ সময় তিনি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হাবিবুর রহমানকেও লাঞ্ছিত করেন।

শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল ও সদর থানা সূত্রে জানা যায়, মারামারি করে মাথা ফেটে আহত ছেলে অভি পাহাড়ের (১৫) চিকিৎসার জন্য শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যান এলিম পাহাড়। ওই সময় হাসপাতালে জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসক ছিলেন ডা. লিমিয়া সাদিয়া এবং ডা. শেহরিয়ার জরুরি বিভাগে বসে একটি মরদেহের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট তৈরি করছিলেন।

এলিম পাহাড় তার ছেলের চিকিৎসার জন্য ডাকলে ডা. শেহরিয়ার জানান, তিনি দায়িত্বে নেই, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট তৈরি করছেন। তবে, একটু অপেক্ষা করলে তিনিই দেখে দেবেন।

ছেলের চিকিৎসায় দেরি করার অভিযোগ তুলে চিকিৎসকদের গালাগাল করতে থাকলে ডা. শেহরিয়ার তাকে থামতে অনুরোধ করেন। এক পর্যায়ে ডা. শেহরিয়ারকে জরুরি বিভাগে সবার সামনেই থাপ্পড় দেন এলিম পাহাড়।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হাবিবুর রহমান বাকবিতণ্ডা শুনে এগিয়ে এলে তার গায়েও হাত তোলেন এলিম পাহাড়। এ ঘটনায় ঘণ্টাব্যাপী হাসপাতালে সব কার্যক্রম বন্ধ রাখেন চিকিৎসকরা।

এ ঘটনায় ডা. শেহরিয়ার বাদী হয়ে পালং মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ করলে পুলিশ এলিম পাহাড়কে আটক করে। পরবর্তীতে শরীয়তপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মো. ইকবাল হোসেনের মধ্যস্থতায় ঘটনাটি মীমাংসা হওয়ায় অভিযোগ প্রত্যাহার করেন ওই চিকিৎসক। পরে পুলিশ আটককৃত এলিম পাহাড়কে ছেড়ে দেয়।

সামাজি যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ১ মিনিট ৪ সেকেন্ডের মীমাংসার ভিডিওতে দেখা যায়, সংসদ সদস্যর বাসভবনে ডা. শেহরিয়ার ও হাবিবুর রহমানসহ কয়েকজন চিকিৎসক বসে আছেন। সংসদ সদস্য মো. ইকবাল হোসেন এলিম পাহাড়কে তাদের পা ধরে মাফ চাইতে বলছেন। তখন এলিম পাহাড় প্রথমে ডা. শেহরিয়ার এবং এরপর ডা. হাবিবুর রহমানের পা ধরে মাফ চান।

ভিডিওতে আরও দেখা যায়, এরপর এলিম পাহাড় সংসদ সদস্যের পা ধরে মাফ চাইতে গেলে তিনি তাকে সরিয়ে দেন এবং রুম থেকে বের হয়ে যেতে বলেন।

ওই ভিডিওতে পালং মডেল থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেজবাউদ্দিন আহমেদ, যুবলীগ নেতা ও প্যানেল মেয়র বাচ্চু বেপারী, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সিদ্দিক পাহাড় ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) শরীয়তপুর জেলা শাখার সভাপতি ডা. মনিরুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজনকে দেখা যায়।

মীমাংসার বিষয়ে সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হাবিবুর রহমান বলেন, 'স্থানীয় সংসদ সদস্য হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা কমিটির সভাপতি। ঘটনাটি না বাড়িয়ে মীমাংসা করার জন্য তিনি অনুরোধ করেছেন। তাই তার উপস্থিতিতে ওই ব্যক্তি ক্ষমা চেয়েছেন।'

ডা. শেহরিয়ার ইয়াছিন বলেন, 'স্থানীয় সংসদ সদস্যের অনুরোধে আমি মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করতে বাধ্য হয়েছি।'

তিনি বলেন, 'আমার কানের পর্দা ও কণ্ঠনালীতে আঘাত লেগেছে। নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞর পরামর্শে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে দিয়েছি।'

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এলিম পাহাড় মুঠোফোনে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শরীয়তপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য আমাদের মুরুব্বি। মুরুব্বি বলেছেন, তাই মীমাংসা হয়ে গেছে। আমি আর এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি করিনি। আমার ছেলেকে অন্য জায়গায় চিকিৎসা করাচ্ছি।'

তিনি বলেন, 'আমি যে ডাক্তারদের মেরেছি, এ নিয়ে যত নিউজ হয়েছে প্রত্যেকটার কমেন্টে মানুষ আমাকে বাহবা দিয়েছেন। আমি নাকি উচিত কাজটি করেছি। এই ঘটনার মধ্যে দিয়ে ডাক্তারদের একটা উচিত শিক্ষা হলো। তারা হয়তো এবার ঠিক হয়ে যাবেন। কারো চিকিৎসায় অবহেলা করবেন না।'

চিকিৎসকের পা ধরে মাফ চাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'ভিডিও ভাইরাল হয়েছে তো কী হয়েছে? দু-তিন দিন ফেসবুকে মানুষ দেখব, তারপর সব ভুলে যাবে। আমি শ্রমিক নেতা এলিম পাহাড়, এলিম পাহাড়ই থাকব। আমার মান-সম্মান একটুও কমবো না।'

শরীয়তপুর জেলা পুলিশ সুপার মো. মাহবুবুল আলম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সদর হাসপাতালে চিকিৎসককে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পাওয়ার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই আসামি এলিম পাহাড়কে গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তীতে ভুক্তভোগী অভিযোগ তুলে নিলে মামলা হিসেবে সেটি গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি।'

Comments

The Daily Star  | English

Matarbari project director sold numerous project supplies

Planning Adviser Prof Wahiduddin Mahmud today said the Matarbari project director had sold numerous project supplies before fleeing following the ouster of the Awami League government on August 5.

1y ago