কাল থেকে ইলিশ ধরার ‘উৎসব’
ইলিশের অভয়াশ্রমে মাছ ধরার দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে আজ মঙ্গলবার মধ্যরাতে। ফলে আগামীকাল থেকে আবারও ইলিশ ধরতে নামবেন জেলেরা।
বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য কর্মকর্তা নৃপেন্দ্রনাথ বিশ্বাস আজ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ইলিশ ডিম ছাড়ার পর জাটকা যাতে বড় হতে পারে, সেজন্যই মাছ ধরায় অভয়াশ্রমে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। অভিযানের কারণে এবার নিষেধাজ্ঞা সফল হয়েছে। ফলে ইলিশ মাছের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা এবার পাঁচ দশমিক ৭১ লাখ মেট্রিক টন পূরণ হয়ে পাঁচ দশমিক ৮০ লাখ মেট্রিক টনে পৌঁছাতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
এদিকে নিষেধাজ্ঞা শেষে নৌকা ও জাল নিয়ে প্রস্তুতিতে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে বরিশাল, ভোলাসহ উপকূলীয় অঞ্চলের জেলেদের।
জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুই মাস নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের ধার করে সংসার চালাতে হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়ে আসায় তারা এখন ইলিশ ধরতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এবার ১ মার্চ থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে ৮১৮টি অভিযানে ১২ দশমিক ৪৪ মেট্রিক টন জাটকা ইলিশ জব্দ করা হয়েছে। এই সময়ে মামলা হয়েছে ৫৯৩টি এবং ৬৭৯ জনকে জেল ও আট লাখ ২৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
বরিশাল সদর উপজেলার চন্দ্রমোহন জেলে পল্লীর বাসিন্দা ইউনুস মাঝি বলেন, নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়ে আসায় আমরা এখন মাছ ধরার প্রস্তুতি নিচ্ছি।
এদিকে নিষেধাজ্ঞা ঘিরে জেলে কার্ড ও এই সময়ে চাল দেওয়ার পরিমাণ বাড়ানোর দাবি জানান জেলেরা।
বরিশাল বিভাগের ভোলা সদর উপজেলার মেঘনা নদী তীরের জেলে পল্লীর বাসিন্দা আলাউদ্দিন মিয়া ডেইলি স্টারকে বলেন, স্ত্রী ও তিন ছেলে-মেয়ের পরিবার নিয়ে দুই মাস প্রচণ্ড কষ্ট করে চলতে হয়েছে।
বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অফিসের সহকারী পরিচালক মো. নাসিরউদ্দিন বলেন, দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে যাতে জাটকা মাছ বড় হতে পারে। এবার প্রচার-প্রচারণা ছাড়াও ব্যাপক অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১ মার্চ থেকে দেশের পাঁচ ইলিশ অভয়াশ্রমে মাছ ধরার ওপর দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়, যা ৩০ এপ্রিল মধ্যরাতে শেষ হবে। পদ্মা, মেঘনা, কালাবদর, বিষখালীসহ দেশের বড় বড় নদীতে ইলিশের পাঁচ অভয়াশ্রমে মাছ ধরার এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
চাঁদপুরে রাত থেকে ইলিশ ধরতে নদীতে নামবে জেলেরা
দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে আজ মধ্যরাত থেকে চাঁদপুরের প্রায় ৪৪ হাজার জেলে আবারও ইলিশ ধরতে নদীতে নামবেন।
এজন্য নৌকা এবং জাল মেরামত শেষে প্রস্ততির কথা জানিয়েছেন জেলেরা। তবে নিষেধাজ্ঞার সময়ে অনেকে নানা কারণে জেলে কার্ড পাননি বলেও অভিযোগ করেন তারা।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, চাঁদপুর সদরের পুরানবাজার মেঘনা পাড়ের জেলে পল্লীতে জেলেরা ইলিশ ধরার প্রস্তুতি হিসেবে কেউ জাল, কেউ নৌকা মেরামত করছেন।
হরিসভা এলাকার রুবেল নামে এক জেলে বলেন, আমরা সরকারি দুমাসের অভিযানে নদীতে নামিনি। তবে এসময় আমাদের যে চাল দেওয়া হয়েছে তা দিয়ে সংসার চালানো কষ্ট হয়েছে।
রনগোয়াল এলাকার খোরশেদ নামে আরেক জেলে জানান, আমার মতো অনেক জেলে কার্ড না পাওয়ায় আমরা জাটকা ধরতে বাধ্য হই। ওই এলাকার আরও বেশ কয়েকজন জেলে অভিযোগ করেন যারা কার্ড পেয়েছেন তাদের অনেকেই প্রকৃত জেলে না।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. গোলাম মেহেদী হাসান বলেন, এ বছর আমাদের অভিযান অন্যান্য বছরের চেয়ে অনেকটা সফল হয়েছে। কারণ ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের আওতায় অভয়াশ্রম এলাকায় এবার ১০টি স্পিডবোট দিয়ে অভিযান পরিচালনা করা হয়।
তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যারা নদীতে নেমেছে তাদের মধ্যে ২৪৮ জন জেলেকে আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দিয়েছি। জব্দ করা হয়েছে প্রায় ৫৪ লাখ মিটার নিষিদ্ধ কারেন্ট ও অন্যান্য জাল। এছাড়া প্রায় ৩ মেট্রিক টন জাটকা ও ৪৩টি মাছ ধরার নৌকা জব্দ করা হয়েছে। আটক জেলেদের কাছ থেকে জরিমানা আদায় করা হয়েছে প্রায় সাড়ে ৬ লাখ টাকা।
Comments