যেভাবে এসি ব্যবহারে কমবে বিদ্যুৎ বিল

তাপপ্রবাহ, এয়ার কন্ডিশনার, এসি,
অলঙ্করণ: বিপ্লব চক্রবর্তী

এপ্রিলের শুরু থেকে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তাপপ্রবাহের কারণে মানুষ এয়ার কন্ডিশনারের (এসি) ওপর আগের চেয়ে বেশি নির্ভরশীল হচ্ছে। পাশাপাশি, স্থানীয়ভাবে উৎপাদন ও সংযোজনের ফলে বাসাবাড়ির এই অনুসঙ্গের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। ফলে আগের চেয়ে আরও বেশি ভোক্তাদের বাজেটবান্ধব হয়ে উঠেছে এসি, তাই বাজারও বেড়েছে।

তবে, এসির শীতল বাতাস এই গরমে আরাম দিলেও এগুলো প্রচুর বিদ্যুৎ টানে। তাই এসির ব্যবহারে বিদ্যুৎ বিল বেশি হয়, যা জীবনযাপনকে আরও ব্যয়বহুল করে। এদিকে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে ইতোমধ্যে মানুষ জীবনযাপনের ব্যয় মেটাতে চাপের মধ্যে আছে।

তাই ব্যয় কমাতে এসি কেনার পর অনেকে বিদ্যুৎ বিল কমানোর চেষ্টা করেন, কিন্তু সঠিক উপায় জানেন না। অবশ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, সঠিকভাবে এসি ব্যবহার করলে বিদ্যুৎ বিল কমতে পারে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক আয়নাল হক বলেন, এসি ব্যবহারের সবচেয়ে ভালো উপায় হলো- এসির শীতল বাতাস যেন বাইরে বের না হয়, এমন একটি এয়ারটাইট রুম বেছে নিতে হবে এবং নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় এসি চালু রাখতে হবে।

আয়নাল হকের মতে, এসির জন্য উপযুক্ত দেওয়াল বেছে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। যেমন- বেলকনির উল্টো দেওয়ালে ও পশ্চিমমুখী দেওয়াল বাদে এসি বসালে ঘর দ্রুত ঠান্ডা হবে এবং বিদ্যুৎ খরচ কমতে পারে।

তিনি আরও বলেন, ইনভার্টার-যুক্ত এসিগুলো চালুর পরপরই বেশি বিদ্যুৎ খরচ হয়, কিন্তু একবার পুরো গতিতে চালু হলে কম বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়। ফলে নন-ইনভার্টার এসির তুলনায় এ ধরনের এসির সামগ্রিক বিদ্যুৎ খরচ কম।

ওয়ালটন এয়ার কন্ডিশনারের গবেষণা ও উদ্ভাবন বিভাগের প্রধান আরিফুল ইসলাম বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে এসির তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি ঘরের জানালাগুলো শক্তভাবে বন্ধ করার পরামর্শ দেন, যেন শীতল বাতাস ঘরের মধ্যে আটকে থাকে এবং বাইরে থেকে গরম হাওয়া ভিতরে প্রবেশ করতে না পারে।

আরিফুল ইসলাম ইসলামের মতে, এসির নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে, যেমন এয়ার ফিল্টার পরিবর্তন করা।

তিনি আরও বলেন, নিয়মিত চেক-আপ করে নিশ্চিত করতে হবে এসি ভালোভাবে কাজ করছে।

তিনি জানান, নতুন এসিতে এমন ফিচার আছে যেগুলো বিদ্যুৎ সাশ্রয় করে, যেমন ভেরিয়েবল-স্পিড মোটর যা কম বিদ্যুৎ খরচ করে।

কীভাবে বেশি বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা যেতে পারে তা জানতে নিয়মিত এসি ব্যবহার পর্যবেক্ষণ ও বিদ্যুৎ বিল বিশ্লেষণ করারও পরামর্শ দেন তিনি।

ওয়ালটনের দেড় টনের ইনভার্টার এসির উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, 'এই এসি আট ঘণ্টা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস গতিতে চললে বিদ্যুৎ বিল আসবে ৩৪ টাকা। প্রচলিত এসির ক্ষেত্রে বিল আসবে প্রায় ৪৬ টাকা, অর্থাৎ ইনভার্টার এসি ব্যবহারে প্রতিদিনি ১২ টাকা সাশ্রয় হবে।'

তার কথার সঙ্গে সুর মিলিয়ে সিঙ্গার বাংলাদেশ লিমিটেডের প্রোডাক্ট ম্যানেজার (হোম কমফোর্ট) সানজানা মাহমুদ বলেন, আদর্শ পরিবেশে একই ক্ষমতার নন-ইনভার্টার এসির তুলনায় গ্রিন ইনভার্টার প্রযুক্তি ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে পারে।

তিনি পরামর্শ দেন, এসির তাপমাত্রা ২৪-২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখতে হবে, নিয়মিত এয়ার ফিল্টার পরিষ্কার করতে হবে এবং মাঝে মাঝে এসি সার্ভিসিং করাতে হবে।

ইলেক্ট্রো মার্ট বাংলাদেশের অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপক (উৎপাদন) মাজহারুল ইসলাম বলেন, ইনভার্টার প্রযুক্তি জ্বালানি সাশ্রয় করে।

ইনভার্টার প্রযুক্তি আধুনিক সব প্রযুক্তির মধ্যে সবচেয়ে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'টার্গেট তাপমাত্রা অর্জনের পর ইনভার্টার প্রযুক্তির এসি খুব কম পরিমাণে বিদ্যুৎ খরচ করে, এ ধরনের এসি বিদ্যুৎ খরচ কমায়।'

তিনি শীতল বাতাস পুনরায় সঞ্চালনে সহায়তার জন্য সিলিং ফ্যান চালু রাখার পরামর্শ দেন। তাহলে রুমগুলো অল্প সময়ে ঠান্ডা হবে এবং বিদ্যুতের খরচ কমতে সহায়ক হবে।

চারজন বিশেষজ্ঞই বলেছেন, এসির এমন অনেক সুবিধা আছে, যা আরাম ও সুস্থতা বাড়ায়। তাদের মতে, এসি কেবল ঘর ঠান্ডা করার চেয়ে আরও বেশি কিছু করে, যেমন- আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে।

তারা বলেন, তীব্র তাপপ্রবাহের সময় মানুষকে নিরাপদ ও সুস্থ রাখতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ।

তাদের মতে, উচ্চ তাপমাত্রা গরমজনিত অসুস্থতার কারণ হতে পারে। বিশেষ করে বয়স্ক এবং শিশুদের জন্য। সুতরাং, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ঘরের বাতাস শীতল ও আরামদায়ক রেখে এসব অসুস্থতা প্রতিরোধে সহায়তা করে।

এছাড়া এসি পর্যাপ্ত ঘুমের পরিবেশ তৈরি করে জীবনের মান উন্নত করে। তবে তারা স্বীকার করেছেন, এসি ব্যবহারের কিছু পরিবেশগত উদ্বেগও আছে।

যেহেতু এসি মূলত বিদ্যুতে চলে তাই গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের দিকে নিয়ে যায়, ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের আশঙ্কা থাকে। কিছু এসিতে রেফ্রিজারেন্ট ব্যবহার করা হয় যা ওজোন স্তরের জন্য ক্ষতিকর।

Comments

The Daily Star  | English
explanations sought from banks for unusual USD rates

Explanations sought from 13 banks for higher dollar rate

BB issued letters on Dec 19 and the deadline for explanation ends today

3h ago