তীব্র তাপদাহের মধ্যে পাবনায় পানি সংকট

তীব্র তাপদাহে সারাদেশের মতো পাবনায়ও জনজীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে। গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে পাবনায় তাপপ্রবাহ ৪০ ডিগ্রির কাছাকাছি। তীব্র গরমের মধ্যে পানি সংকটের কারণে ভোগান্তি এখানে দ্বিগুণ।
ছবি: আহমেদ হুমায়ুন কবির তপু/স্টার

পাবনা সদর উপজেলার জোতআদম এলাকার বাসিন্দা দিনমজুর লুৎফর রহমান প্রায় এক সপ্তাহ ধরে শহরের তার কর্মস্থলে সময়মতো পৌঁছাতে পারছেন না। বাড়ির টিউবওয়েল দিয়ে গত প্রায় ১০ দিন ধরে পানি না ওঠায় ভোগান্তিতে পড়েছেন তিনি। এমনকি গ্রামের পাম্পেও ঠিকমতো পানি পাওয়া যাচ্ছে না।

কাজে বের হওয়ার আগে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে একটি পুকুরে গোসল সেরে আরও কিছু দূরের ডিপ টিউবওয়েল (সেচ পাম্প) থেকে বাড়ির সারাদিনের জন্য প্রয়োজনীয় পানি সংগ্রহ করে কাজে বের হতে প্রতিদিনই দেরি হচ্ছে তার।

তীব্র তাপদাহে সারাদেশের মতো পাবনায়ও জনজীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে। গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে পাবনায় তাপপ্রবাহ ৪০ ডিগ্রির কাছাকাছি। তীব্র গরমের মধ্যে পানি সংকটের কারণে ভোগান্তি এখানে দ্বিগুণ।

পাবনা শহরের বিভিন্ন মার্কেটে প্রায় চার দশক ধরে বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহের কাজ করছেন মো. বোদ্দিন। শীতে-গরমে সবসময়ই বিভিন্ন দোকান ও মার্কেটে পানি বয়ে নিয়ে যান তিনি। তবে এবারের খরায় পানিবাহক বোদ্দিনকেও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

বোদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শহরের বিভিন্ন টিউবওয়েল থেকে পানি সংগ্রহ করে বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে থাকলেও, গত কয়েকদিনের তীব্র তাপদাহে বেশিরভাগ টিউবওয়েল থেকে পানি উঠছে না। যে কয়েকটি স্থানে টিউবওয়েলে পানি পাওয়া যাচ্ছে, সেখানে পানি নেওয়ার জন্য ভিড় লেগেই থাকে। এছাড়াও এক জার পানি ভরতে আগে ৫০ থেকে ৫৫টি চাপ দেওয়া লাগলেও, এখন ১০০ চাপেও এক জার পানি ওঠে না।'

এ অবস্থায় বাধ্য হয়ে দূরের সাব-মার্সিবল পাম্প থেকে পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে তাকে।

বোদ্দিন জানান, এর আগে প্রতিদিন ২৫-৩০ জার পানি সরবরাহ করলেও বর্তমান সময়ে তীব্র তাপদাহের কারণে এখন দিনে তাকে প্রায় ৫০ জার পানি সরবরাহ করতে হচ্ছে।  

তীব্র তাপদাহের মধ্যে শহরাঞ্চলে বাড়িতে বাড়িতে সাব-মার্সিবল পাম্পের পানি ও পৌরসভার সাপ্লাই লাইনের পানি পাওয়াটা সহজ হলেও, গ্রামের মানুষের কাছে বিশুদ্ধ পানির জন্য সবসময় লড়াই করতে হচ্ছে।

পাবনা জনস্বাস্থ্য বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আতিকুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পুরোনো পদ্ধতির প্রায় ৫ হাজার টিউবওয়েল থেকে পানি উঠছে না। তবে এখন বেশিরভাগ এলাকায় টিউবওয়েলে তারা পাম্প বসানো হয়েছে। এ পাম্প দিয়ে ৩৫ মিটার গভীর থেকে পানি তোলা যায়। তবে বিভিন্ন এলাকায় পানির গভীরতা ৩৫ মিটারের নিচে চলে যাওয়ায় সংকট সৃষ্টি হয়েছে।'

'কোথাও পানির অভাব নেই,' বলে দাবি করেন এই কর্মকর্তা।

এদিকে শুধু খাবার পানি নয় সেচের পানিরও সংকট দেখা দিয়েছে পাবনার বিভিন্ন এলাকায়।

সদর উপজেলার মাহমুদপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল আলীম ডেইলি স্টারকে জানান, দুই বিঘা জমিতে ধানের আবাদ করে এখন সেচ দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে।

তিনি আরও জানান, ছোট শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি তোলা যাচ্ছে না। বড় শ্যালো মেশিন ভাড়া করে দূর থেকে সেচের পানি নিয়ে আসতে খরচ ও সময় দুটোই বেশি লাগছে। এক বিঘা জমিতে সেচ দিতে প্রায় তিন ঘণ্টার বেশি সময় লেগে যাচ্ছে, ফলে সেচের খরচ বাড়ছে।

পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক মো. জামাল উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পাবনার নয়টি উপজেলায় বিদ্যুৎচালিত ও ডিজেলচালিত সেচযন্ত্রের সংখ্যা প্রায় ২২ হাজার। এর মধ্যে ৯২৭টি বিদ্যুৎচালিত ডিপ টিউবওয়েল এবং ৪ হাজার ৯০৪টি বিদ্যুৎচালিত শ্যালো পাম্প। বাকিগুলো ডিজেলচালিত।'

সেচযন্ত্রের মাধ্যমে পাবনার প্রায় ৫৬ হাজার ৮৩২ হেক্টর জমির ধান আবাদ হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি বলেন, 'কিছু এলাকায় শ্যালো মেশিন কাজ না করায়, আমরা কৃষকদের কিছুটা নিচু করে শ্যালো মেশিন স্থাপনের পরামর্শ দিয়েছি।'

চলমান তাপদাহের মধ্যে প্রয়োজনীয় বৃষ্টি না হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তবে সেচ সংকটের কারণে কোথাও আবাদ ব্যাহত হচ্ছে না বলে দাবি করেন এই কৃষি কর্মকর্তা।

দুয়েকদিন বৃষ্টি হলেই পানির কোনো সংকট থাকবে না বলে মনে করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Babar Ali becomes 5th Bangladeshi to summit Mount Everest

Today, at 8:30am local time (8:45am Bangladesh time), Babar Ali successfully summited Mount Everest, the highest peak in the world. He is the 5th Bangladeshi to achieve this feat

7m ago