পদ্মা সেতুর জমি অধিগ্রহণে দুর্নীতি: জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিবের শাস্তি যখন পদাবনতি

প্রমথ রঞ্জন ঘটক। ছবি: সংগৃহীত

সরকারি কোষাগার থেকে প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকা আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত থাকার শাস্তি কী হতে পারে?

জড়িত ব্যক্তি যদি সরকারি কর্মকর্তা হন, তাহলে এর শাস্তি হতে পারে কেবল পদাবনতি।

গত ৪ এপ্রিল মাদারীপুরের সাবেক ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা প্রমথ রঞ্জন ঘটককে জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব থেকে পদাবনতি দিয়ে সহকারী সচিব করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এই সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনের একটি কপি দ্য ডেইলি স্টারের হাতে এসেছে।

মাদারীপুরের মাগুরখ এলাকায় পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ করার জন্য প্রমথ ২০২১ সালের জুনে পাঁচ ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে সাত কোটি ৩৫ লাখ টাকা দেন।

তবে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তদন্তে দেখা গেছে, সেই জমি কখনোই ওই পাঁচজনের ছিল না। বরং, জমিটি ছিল সরকারি, যার জন্য কাউকেই কোনো অর্থ দেওয়ার কথা নয়। আর ক্ষতিপূরণের বিষয়টি তো প্রশ্নাতীত।

২০২০ সালেন জুন থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত মাদারীপুরের ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা ছিলেন প্রমথ রঞ্জন ঘটক।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, 'ইস্যুকৃত চেক সমূহের ক্ষমতাপত্র সম্পাদন ১১-০৭-২০২১ তারিখে হলেও তিনি (প্রমথ রঞ্জন ঘটক) পেছনের তারিখ ৩০-০৬-২০২১ ...উল্লেখপূর্বক চেকে স্বাক্ষর করেছেন।' অর্থাৎ মাদারীরপুর জেলায় তার শেষ কর্ম দিবসের তারিখ উল্লেখ করে চেক স্বাক্ষর করে প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকার দুর্নীতির কাজে সহায়তা করেছেন।

প্রমথ বর্তমানে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনে কর্মরত। শাস্তির কারণে ষষ্ঠ গ্রেডে থাকা এ কর্মকর্তা আগামী তিন বছরের জন্য নবম গ্রেডের বেতন-ভাতা পাবেন।

বিষয়টি নিয়ে জানতে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রমথ রঞ্জন ঘটকের নম্বরে ফোন করলে তিনি কেটে দেন।

পদ্মা সেতুর মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে দুর্নীতি প্রমাণিত হওয়ার পরও প্রমথ রঞ্জনকে চাকরিতে রাখার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সচিবালয়ের একাধিক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। তারা বলছেন, সন্দেহাতীতভাবে 'দুর্নীতি' প্রমাণিত হওয়ার পরও এ কর্মকর্তাকে কার্যত 'অসদাচরণ'র শাস্তি দেওয়া হয়েছে।

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, তিন বছর পর আবারও আগের পদ (জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব) ফিরে পাবেন প্রমথ।

সচিবালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা বলছেন, দুর্নীতিবাজ এ কর্মকর্তাকে নিম্ন পদে অবনতিকরণ, অর্থাৎ দুর্বল গুরুদণ্ডের শাস্তি দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

সরকারি চাকরি আইন অনুযায়ী চার ধরনের গুরুদণ্ড আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে সবচেয়ে দুর্বল দণ্ড হচ্ছে নিম্ন পদে অবনতিকরণ। আরও তিনটি গুরুদণ্ডের মধ্যে রয়েছে—বাধ্যতামূলক অবসর, চাকরি থেকে অপসারণ ও চাকরি থেকে বরখাস্ত।

বিষয়টি নিয়ে একজন যুগ্মসচিব ডেইলি স্টারকে বলেন, সরকারি চাকরিতে সাধারণত দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মচারীদের শাস্তি দেওয়ার প্রবণতা কম। দুয়েকটা ঘটনা তদন্তে প্রমাণ হওয়ার পরও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হয় না। এ কারণে প্রশাসন দিনকে দিন দুর্বল হচ্ছে। দুর্নীতিবাজরা এখান থেকে বার্তা পাবে যে, ঘটনা যাই হোক, চাকরি যাবে না।

জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া। ছবি: সংগৃহীত

জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ফিরোজ মিয়া ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এমন দুর্নীতির ঘটনায় দুর্বল শাস্তি দিলে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা দুর্নীতি করতে আরও উৎসাহিত হবে।'

তিনি আরও বলেন, 'দুর্নীতির বিরুদ্ধে ১৯৮৫ সালের শৃঙ্খলা ও আপিল বিধিমালা কঠোর ছিল। ওই বিধিমালা বহাল থাকলে দুর্নীতিবাজ প্রমাণিত হওয়া কর্মচারীকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠাতে হতো। কিন্তু ২০১৮ সালে বিধিমালাটি দুর্বল করে ফেলায় দুর্নীতি করেও কঠোর শাস্তি পাচ্ছে না দুর্নীতিবাজরা। এটা প্রশাসনের জন্য ইতিবাচক ফল আনবে না।'

Comments

The Daily Star  | English

Not for kidney patient, they tried to rob bank for iPhones

Police say three robbers fabricated a story claiming that the robbery was to save a kidney patient

28m ago