‘স্টার্ককে অন্তত এক ম্যাচ হলেও একাদশের বাইরে রাখা দরকার’
ম্যাচ জিততে শেষ ওভারে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর দরকার ছিলো ২১ রান। ৮ উইকেট পড়ে যাওয়ায় তখন কোন ব্যাটার ক্রিজে নেই। ম্যাচ নিশ্চিতভাবেই ছিলো কলকাতা নাইট রাইডার্সের পকেটে। মিচেল স্টার্কের বাজে বোলিংয়ে সেই ম্যাচই কিনা প্রায় হারতে বসেছিলো তারা। শেষ পর্যন্ত কলকাতা ১ রানে জিতলেও স্টার্কের পারফরম্যান্স নিয়ে উঠছে জোরালো প্রশ্ন।
স্টার্কের করা শেষ ওভারে স্ট্রাইকে ছিলেন বেঙ্গালুরুর টেল এন্ডার করন শর্মা। আউট হওয়ার আগে যাকে কিনা স্ট্রাইক দেওয়ারই ভরসা পাননি দীনেশ কার্তিক। সেই করন স্টার্কের প্রথম বল উড়ান ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে ছক্কা। এক বল পর তৃতীয় বলে এক্সট্রা কাভার ও চতুর্থ বলের ফের পয়েন্ট দিয়ে ছক্কা মেরে ম্যাচ বেঙ্গালুরুর মুঠোয় নিয়ে আসেন তিনি।
পঞ্চম বলে কট এন্ড বোল্ড হয়ে তার বিদায়ের পর শেষ বলে ৩ রান নেওয়ার সমীকরণ মেলাতে পারেনি বেঙ্গালুরু।২২২ রানের লক্ষ্যে থামে ২২১ রনানে। তবে এতেও স্টার্কের বাজে পারফরম্যান্স আড়ালে পড়ছে না। তার ৩ ওভার থেকেই যে এসেছে ৫৫ রান, উইকেট পেয়েছেন একটি।
এবার আইপিএলের নিলামে তাকে ইতিহাসের সর্বোচ্চ ২৪ কোটি ৭৫ লাখ রুপি দিয়ে দলে নেয় কলকাতা। অথচ ৭ ম্যাচ থেকে ৬ উইকেট নিতে স্টার্ক ওভারপ্রতি খরচ করেছেন ১১.৪৮ রান করে।
ক্রিকেট পোর্টার ক্রিকবাজের টক শোতে তাই স্টার্ককে বিশ্রামে পাঠানোর আলাপ করেছেন বিশ্লেষক জয় ভট্টাচার্য ও সাবেক কিউই ক্রিকেটার সাইমন ডুল। এই পারফরম্যানের পর কলকাতা পরের ম্যাচে স্টার্ককে বিশ্রামে পাঠাবে বলে মত জয়ের, 'আমার মনে হয় স্টার্ককে বিশ্রাম দিবে এবার। তাদের (দুশমন্ত) চামিরা আছে, চেতন সাকারিয়া আছে, বিকল্প আছে। স্টার্কের নিজের জন্যই বিশ্রাম দরকার। অনেক চাপ নিয়ে ফেলেছে। সতেজ হওয়া উচিত, কয়েকদিনের বিশ্রাম দরকার তার। প্রথম ওভারে এত রান দিলে মানা যায় যে এমন হয়ে যায়। কিন্তু শেষ ওভারে সে যে লেন্থে বল করল সেটা সত্যিই চিন্তার কারণ। হ্যাঁ ভালো একটা ক্যাচ নিয়ে পরে ম্যাচ এনেছে। কিন্তু ওই অবস্থায় ম্যাচ গিয়েছে তার জন্য।'
জয়ের সঙ্গে কণ্ঠ মেলান ডুল, 'তার ইয়র্কার কাজ করছে না। হাফ ভলি হচ্ছে যেটা তার সঙ্গে যায় না। তাকে অন্তত এক ম্যাচ হলেও একাদশের বাইরে রাখা দরকার। সে অনেক দামি খেলোয়াড় এই চাপ থাকতে পারে তার মাথার ভেতর। আইপিএলে অনেক উচ্চ মানের ব্যাটার আছে। কিন্তু করন শর্মা ওই মানের কেউ ছিলো না। সে লোয়ার অর্ডার ব্যাটার।'
কিউই সাবেক পেসার মনে করেন রিভার্স স্যুইং করাতে পারলে স্টার্ক কার্যকর হতেন। তাকে তাই ভিন্নভাবে ব্যবহার করে দেখতে পারে কলকাতা, 'আপনি যখন এত দাম নিয়ে একজন খেলোয়াড়কে কিনবেন আপনার আশা থাকবে যে তার সেরা দিনে দুর্দান্ত কিছু হবে। মিচেল স্টার্ক আসলেই খুব ভালো লাইন ও লেন্থ বোলার এটা আমি ভাবি না। বল যখন রিভার্স করে সে দুরন্ত।'
রিভার্স স্যুইংয়ের কথা বলতে গিয়ে অজিদের খোঁচাও দেন কিউই তারকা, 'যখন অস্ট্রেলিয়া শিরিষ কাগজ দিয়ে বল ঘষত সে দুর্দান্ত ছিলো টেস্ট ম্যাচে (হাসি)। টেস্ট ম্যাচে অবিশ্বাস্য ছিলো।'
মজা করার পরও আবার সিরিয়াস হয়েও স্টার্কের ধরণ ও তাকে ব্যবহার করা নিয়ে পরামর্শ দেন তিনি, 'আমার মনে হয় সে সাদা বলে দুর্দান্ত বোলার, বিশেষ করে ৫০ ওভারে। উইকেট আছে, তীব্র গতি আছে। কিন্তু আমি তাকে খুব ভালো লাইন-লেন্থ বোলার হিসেবে পাইনি। এমনকি টেস্ট ক্রিকেটে অফ স্টাম্পের বাইরে প্যাট কামিন্স, জশ হ্যাজেলউড যেভাবে টানা বল ফেলতে থাকে সে এমন না।'
'তাকে ভিন্নভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। পাওয়ার প্লেতে এক ওভার করিয়ে শেষের দিকে তিন ওভার করানো যায়। আমি জানি সে শেষ দিকেও খরুচে। কিন্তু শেষ দিকে হয়ত বল মাঝেমাঝে রিভার্স করতে পারে শুস্ক উইকেটে খেলা হলে।'
ডুলের মতে অত্যধিক দামের ব্যাপারটা স্টার্ককে চাপে ফেলে দিয়েছে, তিনি তার সামর্থ্যের জায়গা থেকে সরে গেছেন তাই, 'সে চাপে আছে বলতে হয়। এই দামটা অনেক চাপ তৈরি করে। সে একটা ম্যাচে খুব ভালো খেলেছে, আরেকটাতে মোটামুটি ছিলো বাকি ম্যাচগুলোতে সে তার সেরাটা দিতে পারেনি। একটু সংগ্রাম করছে। তার গতি আছে, গতি কাজে লাগিয়ে লেন্থে বল হিট করানো উচিত।'
Comments