উদ্ধারের ১০ বছর পরেও সুচিত্রা সেনের পৈত্রিক বাড়িতে গড়ে ওঠেনি সংগ্রহশালা

ছবি: স্টার

বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের ৯৩তম জন্মদিন আজ। এ উপলক্ষে প্রতিবারের মতো এ বছরও তার জন্মস্থান পাবনায় শ্রদ্ধা নিবেদনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে।

এ বছরই প্রথমবারের মতো মহানায়িকা স্মরণে যুক্তরাষ্ট্রে আন্তর্জাতিক সুচিত্রা সেন চলচ্চিত্র উৎসব আয়োজিত হতে যাচ্ছে। গত ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মলনে নিউইয়র্কের জ্যামাইকা পারফর্মিং আর্টস সেন্টারে আগামী ২০ ও ২১ এপ্রিল এই চলচ্চিত্র উৎসব হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়।

'বিশ্বজুড়ে বাংলা ছবি' এই স্লোগানে পাবনায় সুচিত্রা সেনের পৈত্রিক বাড়ি উদ্ধার আন্দোলনের ইতিহাস-প্রেক্ষাপট এবং বরেণ্য অভিনেত্রীর প্রতি আবেগ-ভালবাসার স্থান থেকে এই আন্তর্জাতিক উৎসবের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সংবাদ সম্মেলন থেকে জানানো হয়।

তবে, মহানায়িকা সুচিত্রা সেনকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগকে সাধুবাদ জানালেও তার জন্মস্থান পাবনায় তার পৈত্রিক বাড়িতে পরিপূর্ণ সংগ্রহশালা না হওয়ায় হতাশ পাবনাবাসী।

বাংলা চলচ্চিত্রের অতীত, ঐতিহ্য ও সুচিত্রা সেনকে আগামী প্রজন্মের সামনে সঠিকভাবে তুলে ধরতে তার পৈত্রিক বাড়িতে সংগ্রহশালা গড়ে তোলা জরুরি বলে মনে করেন সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি ডা. রাম দুলাল ভৌমিক।

ছবি: স্টার

সুচিত্রা সেন চলচ্চিত্র সংসদের সভাপতি জাকির হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাংলা চলচিত্রে সুচিত্রা সেনের অবদান এখন বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত। তার জন্মস্থান পাবনার মানুষ হিসেবে আমরাও গর্বিত। তবে সুচিত্রা সেনের জন্মস্থান পাবনার হেমসাগর লেনের বারিটি আদালতের নির্দেশে দখলমুক্ত হওয়ার ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও ঐতিহাসিক এ বাড়িতে আদালতের নির্দেশ মোতাবেক পরিপূর্ণ সংগ্রহশালা গড়ে না উঠায় আমরা হতাশ।'

বাংলা চলচিত্রের মহানায়িকা সুচিত্রা সেন ১৯৩১ সালের ৬ এপ্রিল তার নানার বাড়িতে জন্ম নেন। সুচিত্রা সেনের শৈশব-কৈশোর কেটেছে পাবনা শহরের হেমসাগর লেনের পৈত্রিক বাড়িতে।

দেশভাগের আগে পরিবারের সঙ্গে ভারতে চলে যান সুচিত্রা সেন। সুচিত্রা সেনের পৈত্রিক বাড়িটি দীর্ঘদিন অবৈধ দখলে ছিল। পাবনাবাসীর দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের পর ২০১৪ সালের ১৬ জুলাই আদালতের নির্দেশে বাড়িটি দখলমুক্ত হয়। এরপর থেকে সুচিত্রা সেনের পৈত্রিক বাড়িটি স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি ডা. রামদুলাল ভৌমিক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দখলমুক্ত হলেও বাড়িটিকে পরিপূর্ণ সংগ্রহশালা হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এ জন্য বারবার তাগিদ দেয়া হলেও কার্যকর উদ্যোগ না নেয়ায় এখনও সংগ্রহশালা গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়নি।'

তবে আশার কথা জানিয়েছে শিল্পকলা একাডেমি। পাবনা জেলা কালচারাল অফিসার মারুফা মঞ্জরি খান সৌমি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সুচিত্রা সেন, রজনীকান্ত সেন, উদয় শংকর, রবি শংকর, ওস্তাদ আলাউদ্দিনসহ দেশের প্রায় ২৪ জন খ্যাতনামা সংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্বের হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি ধরে রাখতে শিল্পকলা একাডেমী একটি মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে।'

করোনার কারণে দীর্ঘদিন ঝুলে থাকার পর মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে এ প্রকল্প নিয়ে কাজ শুরু করেছে। আশা করা হচ্ছে অচিরেই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। প্রকল্পের কাজ শুরু হলে সুচিত্রা সেনের পৈত্রিক বাড়িতে পরিপূর্ণ সংগ্রহশালা গড়ে উঠবে বলে জানান তিনি।

এছাড়া সুচিত্রা সেনের বাড়ি নিয়ে আলাদা প্রকল্পের কথাও ভাবা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের পাবনার পৈত্রিক বাড়িতে স্মৃতি ধরে রাখার মতো এখনও বড় কোনো উদ্যোগ না থাকলেও বাড়িটি দেখার জন্য প্রতিদিন অনেকেই বেড়াতে আসেন।

পাবনা জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় বাড়িটিকে সংরক্ষণ করে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে বলে জানান জেলা কালচারাল অফিসার।

বাংলা চলচিত্রের মহানায়িকা সুচিত্রা সেন ১৯৫২ সালে 'শেষ কোথায়' সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করেন। একে একে বাংলা ও হিন্দি মিলিয়ে প্রায় ৬০টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। তার অভিনয় গুণাবলীর জন্য তিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক একাধিক পুরুস্কার পেয়েছেন। দীর্ঘদিন অন্তরালে থাকার পর ২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি সুচিত্রা সেন বার্ধক্যজনিত জটিলতায় মৃত্যুবরণ করেন।

Comments

The Daily Star  | English

Leather legacy fades

As the sun dipped below the horizon on Eid-ul-Azha, the narrow rural roads of Kalidasgati stirred with life. Mini-trucks and auto-vans rolled into the village, laden with the pungent, freshly flayed cowhides of the day’s ritual sacrifices.

18h ago