ডলার সংকটেও রমজানে বেড়েছে ফল আমদানি

ফল আমদানি, আমদানি, আমদানি নিয়ন্ত্রণ, ডলার, রিজার্ভ, রমজান মাস, ইফতার,
স্টার ফাইল ফটো

দুই বছর আগে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমতে শুরু করলে আমদানি নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ নিতে শুরু করে সরকার, যার প্রথম প্রভাব পড়েছিল ফল আমদানিতে।

২০২১-২২ সালে বাংলাদেশ প্রায় ৪৫০ মিলিয়ন ডলারের ফল আমদানি করেছিল।

মূলত ডলার ঘাটতি মোকাবিলায় সরকারি সংস্থাগুলো ফল আমদানির ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে।

উদাহরণ হিসেবে এখানে বলা যেতে পারে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নিয়ন্ত্রক শুল্ক ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৩ শতাংশ করেছিল। অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক শর্ত দিয়েছিল, ফলসহ অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করতে হলে আমদানিকারকদের পুরো ব্যয় অগ্রিম পরিশোধ করতে হবে।

অবশ্য পরবর্তী দুই বছর এই উদ্যোগ কাজ করেছিল, কারণ ঋণপত্র (এলসি) খোলা ও নিষ্পত্তি কমে যায়। তবে, ডলার সংকট অব্যাহত থাকলেও পুষ্টিকর পণ্য আমদানি বাড়ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে ২৪ কোটি ৭২ লাখ ৬০ হাজার ডলারের এলসি খুলেছেন ব্যবসায়ীরা, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ২৫ দশমিক ৮১ শতাংশ বেশি।

আমদানিকারকরা বলছেন, আগের চেয়ে মার্কিন ডলারের দাম কমায় ব্যাংকগুলো আমদানিতে উদার হয়েছে এবং ফল ব্যবসায়ীরা পুরো দাম অগ্রিম পরিশোধ করে কিনতে আগ্রহী হয়েছেন।

করোনা মহামারির কারণে ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে ঋণপত্র খোলার হার কম ছিল।

বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, 'চলতি অর্থবছরে ঋণপত্র খোলার শর্ত শিথিল করা হয়েছে। ঋণপত্র খোলার হার বাড়ার পেছনে রমজানের বড় ভূমিকা আছে।'

অন্যান্য সময়ের তুলনায় রোজার মাসে ফলের চাহিদা যথেষ্ট বাড়ে। কারণ, রোজাদাররা খেজুর ও পানির পাশাপাশি ফল দিয়ে ইফতার করতে পছন্দ করেন।

স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ফলের সরবরাহ কমে যাওয়ায় সেপ্টেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত আমদানি করা ফলের চাহিদা বেশি থাকে বলেও জানান তিনি।

তিনি জানান, ফল আমদানি কম হওয়ার অন্যতম কারণ ছিল ২০২২-২৩ অর্থবছরে মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য ২৫ শতাংশ কমেছে। এছাড়া প্রবাসী ও রপ্তানি আয় কমায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও কমেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ১৯ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালের আগস্টে যা ছিল ৪০ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার। ২০২২-২০২৩ অর্থবছর শেষে দেশে রিজার্ভ ছিল ৩১ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার এবং ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে ৩৩ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার।

পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নানা উদ্যোগের কারণে রিজার্ভ পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে।

তিনি বলেন, 'ডলারের দর এখন মোটামুটি সহনীয়। ফলে ঋণপত্র খোলা ও আমদানি বেড়েছে।'

তবে, মূল্যস্ফীতি বেশি হওয়ায় ফলের দাম আগের তুলনায় অনেক বেশি। ২০২১-২২ অর্থবছরে ভোক্তা মূল্য সূচক ছিল ৬ দশমিক ১৫ শতাংশ, ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা বেড়ে হয়েছে ৯ দশমিক ০২ শতাংশ। কিন্তু উচ্চ মূল্যস্ফীতি কমার কোনো প্রবণতা দেখা যাচ্ছে না, এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে মূল্যস্ফীতির গড় ছিল ৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ।

রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা মোজাম্মেল হক (৩২) বলেন, এ বছর আমদানি করা ফলের দাম অনেক বেড়েছে। তাই তিনি ফল কেনা ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কমিয়েছেন।

কিছু ফলের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত মুনাফা করছেন কি না তা খতিয়ে দেখার জন্য সরকারি সংস্থাগুলোর কাছে অনুরোধ জানান তিনি।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ফলের চাহিদার প্রায় ৪০ শতাংশ স্থানীয়ভাবে মেটানো হয়, বাকিটা আসে আমদানি থেকে।

বাংলাদেশ আপেল আমদানি করে দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিল, চীন ও অস্ট্রেলিয়া থেকে, ভারত থেকে ডালিম, পাকিস্তান থেকে নাশপাতি, মিশর থেকে মিষ্টি কমলা, চীন ও ভারত থেকে মাল্টা এবং ভারত থেকে আঙুর।

Comments

The Daily Star  | English

‘Shockingly insufficient’

"The proposed decision to allocate USD 250 billion per year for all developing countries is shockingly insufficient," said the adviser

2h ago