চোখের সামনে ঘর পুড়ল, সন্তান রক্ষা পেয়েছে তাতেই স্বস্তি শাহিনুরের

সন্তান কোলে শাহিনুর। ছবি: স্টার

কড়াইল বস্তিতে চারপাশের ঘরগুলোতে ততক্ষণে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। ১৮ মাসের মেয়েকে নিয়ে ঘর থেকে বের হয়েই শাহিনুর বেগম দেখলেন বের হওয়ার রাস্তাটির দুইপাশের ঘরগুলোতে আগুন জ্বলছে। ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে গেছে চারপাশ। বেশি দূরেও দেখা যাচ্ছে না। বাঁচার তাড়নায় মেয়ে উর্মিতাকে জাপটে ধরে ঘরের পেছনের খালে ঝাপ দেন তিনি। খালের পানিতে পড়ে কোলছুট হয়ে যায় শিশুটি। তবে শেষ পর্যন্ত তার বড় কোনো ক্ষতি হয়নি। প্রায় অক্ষত অবস্থাতেই উর্মিতাকে উদ্ধার করেন প্রতিবেশীরা।

রোববার সন্ধ্যায় পোড়া ঘরের পাশে সন্তানকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন শাহিনুর। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, তার ১২ বছরের সংসারের সব মালামাল পুড়ে গেছে। কিছুই রক্ষা করা যায়নি। কিন্তু চোখের সামনে সমূহ বিপদ থেকে সন্তানসহ রক্ষা পেয়েছেন, তাতেই তার আর কোনো আক্ষেপ নেই।

রোববার বিকেলে বস্তিতে যখন আগুন লাগে, শাহিনুর তখন ঘরে ভাত রান্না করছিলেন। বিছানায় শুয়ে ছিল শিশু উর্মিতা। লোকজনের চিৎকার শুনে বুঝতে পারেন বস্তিতে আগুন লেগেছে। কিন্তু আগুন যে তার ঘরের এত কাছে পৌঁছে গেছে, সেটি ঠাহর করে উঠতে পারেননি। বাচ্চাকে কোলে নিয়ে ঘরে থাকা মূল্যবান সামান্য যাকিছু সঙ্গে নেওয়া যায়, সেই চেষ্টাই করেছিলেন। কিন্তু ঘর থেকে বের হয়ে বিপদের আঁচ পান তিনি। ধোঁয়ার সঙ্গে প্রচণ্ড তাপে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলেন না। বুঝতে দেরি থাকে না রাস্তা দিয়ে বের হওয়ার উপায় আর নেই। ঘরের পেছনে যে নোংরা খালটি আছে, সেদিকে দৌড় দেন তিনি। কিছু না ভেবেই খালের পানিতে লাফ দেন। হাতের ব্যাগের সঙ্গে তার সন্তানও পানিতে পড়ে যায়। আগুন নেভানোর পানি সংগ্রহ করতে ততক্ষণে খালে নেমে গেছেন অনেকেই। তারাই তার মেয়েকে পানি থেকে অক্ষত অবস্থায় তুলে দেন।

এই খালে ঝাপ দিয়েছিলেন শাহিনুর। ছবি: স্টার

শাহিনুর বলেন, ঘটনার সময় আমার স্বামী ও নয় বছরের বড় মেয়ে বাইরে ছিল বলে রক্ষা পেয়েছে। খালের পাড় থেকে দাঁড়িয়ে থেকে নিজের ঘর পুড়ে যেতে দেখলাম। কিন্তু এতে আমার অতটা আক্ষেপ নেই। বস্তিতে আগুন কোনো নতুন ঘটনা না। অনেকে সর্বস্বান্ত হয়ে আবার ঘুরে দাঁড়ায়। ঘরের মালামাল আবার কেনা যায়। কিন্তু মেয়ের কিছু হয়ে গেলে সইতে পারতাম না।

রোববার বিকেল ৪টা ৫ মিনিটের দিকে কড়াইল বস্তিতে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিটের চেষ্টায় বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

ঘটনাস্থল থেকে ডেইলি স্টারের প্রতিবেদক জানান, আগুনে অন্তত ২০০টি ঘর পুড়ে গেছে। আগুন যাতে ছড়াতে না পারে, সেজন্য আশেপাশের কয়েকশ ঘর ভেঙে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Beximco workers' protest turns violent in Gazipur

Demonstrators set fire to Grameen Fabrics factory, vehicles; properties vandalised

3h ago