টংক আন্দোলনের নেত্রী কুমুদিনী হাজং আর নেই

কুমুদিনী হাজং দুর্গাপুরবাসীর কাছে গর্ব ও গৌরবের সংগ্রামী মুখ হিসেবে পরিচিত।
কুমুদিনী হাজং। ছবি: সংগৃহীত

নেত্রকোনার দুর্গাপুরে ব্রিটিশ বিরোধী ও টংক আন্দোলন তথা হাজং বিদ্রোহের একমাত্র সংগ্রামী মুখপাত্র কমরেড কুমুদিনী হাজং (৯২) আর নেই।

আজ শনিবার দুপুরে বার্ধক্যজনিত কারণে দুর্গাপুরে নিজ বাড়ি বহেড়াতলীতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

তার মৃত্যুকে শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন সবস্তরের মানুষ। মৃত্যুকালে তিনি দুই ছেলে ও দুই মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

আগামীকাল সকালে স্থানীয় শশ্মানঘাটে কুমুদিনী হাজংয়ের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হবে।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) ময়মনসিংহের সভাপতি এমদাদুল হক মিল্লাত জানান, টংক আন্দোলনের সর্বশেষ জীবিত ব্যক্তি ছিলেন কুমুদিনী হাজং।

দুর্গাপুরের সীমান্তবর্তী কুল্লাগড়া ইউনিয়নের বহেড়াতলী গ্রামে পাহাড়ি অঞ্চলের এক টিলায় বসবাস করতেন কুমুদিনী হাজং।

হাজং বিদ্রোহের সাক্ষী কুমুদিনী হাজং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, টংক আন্দোলন, ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন, পাকিস্তানি জুলুম বৈষম্য ও নিপীড়ন, ১৯৬৪ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, স্বাধীনতা আন্দোলনসহ বিভিন্ন আন্দোলনের কালের সাক্ষী ছিলেন কুমুদিনী হাজং।

হাজং মাতা রাশিমনি কল্যাণ পরিষদের সভাপতি মতিলাল হাজং জানান, টংক আন্দোলনকারীদের খোঁজ করার নামে হাজং নেতা লংকেশ্বর হাজংকে ঘরে না পেয়ে ব্রিটিশ পুলিশ তার নববধূ কুমুদিনী হাজংকে জোর করে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছিল দুর্গাপুর সেনা ছাউনির দিকে।

এ খবর পেয়ে বহেরাতলী গ্রামের রাশিমনি হাজং শতাধিক নারী-পুরুষ নিয়ে দা, ঝাড়ু, বল্লম, লাঠি, তীর-ধনুকসহ সোমেশ্বরী নদীর তীরে কুমুদিনী হাজংকে ছেড়ে দিতে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। কিন্তু পুলিশ কোনো কথা না শুনে কুমুদিনীকে দুর্গাপুরের সেনা ছাউনির দিকে নিয়ে যাচ্ছিল।

এ সময় রাশিমনি হাজং দা নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালান। তার এলোপাতারি দায়ের কোপে এক পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলেই মারা যায়। এ সময় পুলিশের গুলিতে রাশিমনি ঘটনাস্থলেই নিহত হন।

সহযোদ্ধা সুরেন্দ্র হাজং গুলি করা সেই পুলিশের ওপর হামলা করেন এবং তাকে হত্যা করেন। পরবর্তীতে পুলিশের গুলিতে ২২ জন হাজং কৃষক নারী-পুরুষ মারা যান। একপর্যায়ে পরিস্থিতি বেগতিক দেখে পুলিশ চলে যায়। তারা নিহতদের মরদেহ সোমেশ্বরী নদীতে ভাসিয়ে দেয়। পরদিন ব্রিটিশ পুলিশ বহেরাতলী গ্রামে তাণ্ডব চালায় এবং পুরো গ্রাম তছনছ করে ফেলে।

কুমুদিনী হাজংয়ের স্বামী মারা যান ২০০০ সালে। কুমুদিনী হাজং দুর্গাপুরবাসীর কাছে গর্ব ও গৌরবের সংগ্রামী মুখ হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

কুমুদিনী হাজং বেশ কিছু পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন। তার মধ্যে ১৯৯৯ সালে তেভাগা কৃষক আন্দোলনের ৫০ বছর পূর্তিতে পুরস্কার, ২০০৩ সালে অনন্যা শীর্ষ দশ নির্বাচিত পুরস্কার, ২০০৫ সালে স্বদেশ চিন্তা সংঘ ড. আহম্মদ শরীফ স্মারক পুরস্কার, ২০০৭ সালে মণি সিংহ স্মৃতিপদক, ২০১০ সালে সিধু কানহু ফুলমনি পদক, ২০১৪ সালে জলসিঁড়ি পদক, ২০১৮ সালে হাজং জাতীয় পুরস্কার, ২০২১ সালে নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক সম্মাননা, ২০২২ সালে পথ পাঠাগার সম্মাননা অন্যতম।

Comments