ঈদের সময় যানবাহনের চাপ, কিছু জায়গায় জট হবেই: কাদের
ঈদযাত্রী ফিটনেসহীন গাড়ি রাস্তায় না নামাতে মালিকপক্ষকে আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন উপলক্ষে সড়কপথে যাত্রীদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ করার লক্ষে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর বনানীতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) কার্যালয়ে আয়োজিত প্রস্তুতিমূলক সভায় তিনি এ কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, 'এই সিটিতে লক্কড়-ঝক্কড় মার্কা গাড়ির অনেক কারখানা আছে। আমি নিজেও ভিজিট করেছি, দেখেছি রঙ লাগাচ্ছে। এমন রঙ, ১০ দিন পরে এই রঙ উঠে যাবে। থাকে না, ও আগের অবস্থায় চলে যায়। আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অর্জনের-উন্নয়নের যে উচ্চতায় নিয়ে গেছেন, সেই বাংলাদেশের রাজধানীতে গাড়িগুলো; আপনি কার আর জিপ দেখেন—অত্যাধুনিক কার ব্যবহৃত হচ্ছে, জিপ ব্যবহৃত হচ্ছে কিন্তু এই নগরীতে বাসগুলোর দিকে তাকানো যায় না। মফস্বলের গাড়ি এর চেয়ে অনেক ভালো দেখতে। এমনকি চট্টগ্রাম শহরেও ঢাকা শহরের চেয়ে বেটার। আমাদের উন্নয়ন, আমাদের অর্জন, আমাদের উচ্চতাকে লজ্জা দেয়।'
দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি এবং পরিবহন মালিকদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, 'বহুবার বলেছি শাজাহান ভাই! নেতাদের বলেছি, কোনো কাজ হয়নি। এ লজ্জা থেকে কি বাঁচাবেন?'
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের এক্সিট র্যাম্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে লক্কড়-ঝক্কড় বাস নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, 'ঢাকা শহরে যে বাস, রঙ নাই-চঙ নাই। এ গাড়িগুলো চলে চোখের সামনে। এটা সত্যিই লজ্জার বিষয়। আপনাদের (বাস মালিক) কি লজ্জা লাগে না?'
তিনি বলেন, 'আমাদের দেশ এত এগিয়ে গেল, আর আমাদের গাড়ির এত গরিব গরিব চেহারা। আমি আবারও বলবো, ঈদ উপলক্ষে লোক দেখানোর জন্য নয়, গাড়িগুলোকে মোটামুটি একটা ফিটনেসে রেখে; রঙ দিয়ে লাভ নেই ফিটনেস না থাকলে। আমার দরকার প্রথমে ফিটনেস। রঙও দিতে হবে। বিদেশিরা ঢাকা শহরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিদেশিরা ঢাকা শহরে এসে এখানে মেট্রোরেল দেখে, এলিভেটেড দেখে, এটা সত্য কথা কিন্তু পাশাপাশি রাজধানীতে দেখে বাসগুলো কী! এটার সমাধান নেতাদের কাছে আমি চাই। এভাবে চলতে পারে না। বিআরটিএ ডেকে এনে মিটিং করে, কে শোনে কার কথা!
'আজকে যেসব দুর্বলতার কথা এখানে এসেছে, বিআরটিএ ও হাইওয়ে পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধি না করলে কোনোটাই কার্যকর করা যাবে না। এটা হলো বাস্তবতা, বক্তৃতা দিয়ে এর সমাধান হবে না। সমাধান সক্ষমতা। বিআরটিএর কিছুই নেই। কতজন ম্যাজিস্ট্রেট দরকার, এটা আমাদের গভীরভাবে ভাবতে হবে। ঈদের সময় দুই জায়গা ঠিক করেন, সব ঠিক (হয়ে যাবে),' বলেন তিনি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, 'ফেনী থেকে হানিফ ফ্লাইওভারে আসতে যে সময় লাগে, তার চেয়ে বেশি সময় লাগে হানিফ ফ্লাইওভার পার হতে, সিটিতে ঢুকতে। এখানে একটা সমস্যা আছে ভেতরে। এই সমস্যাটা ফ্লাইওভারের যারা কোম্পানি ও কর্তৃপক্ষ, সিটি করপোরেশন এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করতে হবে। এখন টোল বাড়ানোর জন্য এখানে কোনো কিন্তু সৃষ্টি করা হয় কি না সেটাও ভেবে দেখতে হবে। এখানে এমন অবস্থা মাঝে মাঝে হয়, দেড় ঘণ্টা, দুই ঘণ্টা, আড়াই ঘণ্টা পর্যন্ত মাঝে মাঝে জ্যাম থাকে।'
এ সময় যানজট কমাতে সংশ্লিষ্টদের দিক-নির্দেশনা দেন কাদের।
তিনি আরও বলেন, 'ঈদের আগে দেখেছি গত দুইবার অ্যাক্সিডেন্ট কম, প্রাণহানিও কম কিন্তু ঈদের পর এত অ্যাক্সিডেন্ট! অবাক হয়ে যাই। ঈদের পরে নজরদারি থাকে না। আমরা একটা শিথিল মুড নিয়ে থাকি। তখন অ্যাক্সিডেন্ট হতেই থাকে। এ ব্যাপারে দোষ না চাপিয়ে আমাদের যার যার দায়িত্ব পালন করা উচিত। আর মালিক ভাইরা যারা আছেন, গাড়িগুলো সাফ করে ফিটনেস নিয়ে বের করবেন।'
এ সময় সংশ্লিষ্টদের প্রস্তাব প্রসঙ্গে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী বলেন, 'সিএনজি ফিলিং স্টেশন ঈদের দিনসহ পূর্বের সাত ও পরের পাঁচ দিন খোলা রাখার জন্য অনুরোধ করা হলো।'
পোশাক কারখানা বন্ধের ব্যাপারে শিল্প মালিকদের সঙ্গে আলোচনার আহ্বান জানান ওবায়দুল কাদের।
সড়কে চাঁদাবাজি প্রসঙ্গে কাদের বলেন, 'অতিরিক্ত ভাড়ার বিষয়টা আমাদের মনিটরিংয়ে আছে। থাকলেও যারা অতিরিক্ত ভাড়া নেয় সেই কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করে দিতে প্রয়োজনে বৈঠক করা যেতে পারে।
'চাঁদাবাজি, এটা তো অনেকেরই কাজ। চাঁদাবাজিকে আপনি বন্ধ করতে পারবেন? নিয়ন্ত্রণ করা হয়তো যাবে। এটা হঠাৎ করে...যেমন করাপশন; করাপশন ইজ এ ওয়ে অব লাইফ অ্যাক্রস দ্য ওয়ার্ল্ড। এ তো বাংলাদেশের ব্যাপার না! আমেরিকায় করাপশন হচ্ছে না? কোথায় হচ্ছে না? কিন্তু আমি বলবো নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হবে,' বলেন তিনি।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, 'চাঁদাবাজি (নিয়ে) আজকে প্রধানমন্ত্রীকে পর্যন্ত কথা বলতে হচ্ছে। এটা এমন বাজে জায়গায় গিয়ে উপস্থিত হয়েছে। দেশের প্রধানমন্ত্রীকেও আজকে কথা বলতে হচ্ছে। এই চাঁদাবাজির যে প্রভাব সেটা দ্রব্যমূল্যের ওপর আসে। খুব স্বাভাবিক কারণে প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি তার চেয়ার থেকে বুঝতে পারেন এবং সে কারণে তিনি এ ব্যাপারে কঠিন কথা বলেছেন এবং বলতে বাধ্য হয়েছেন।'
উত্তরবঙ্গের দিকে বিশেষ নজর দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, 'ঈদের সময় অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ, কিছু কিছু জায়গায় যানজট হবেই। একদম যানজটমুক্ত এমনটা দাবি করা সমীচীন হবে না। এটা বাস্তবতা।'
হাইওয়ে পুলিশকে ২২টি সড়ক নিরাপদ রাখার আহ্বান জানান তিনি।
Comments