আমার সাথে হয়তো আর যোগাযোগ হবে না: জাহাজ থেকে জানিয়েছিল ছেলে
গতকাল রমজানের প্রথম দিনে চট্টগ্রামে ইফতার করতে বসেছিলেন পরিবারটির সবাই। ঠিক সেইসময় ছেলের ফোন আসে।
বাংলাদেশের পতাকাবাহী পণ্যবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর চিফ অফিসার মোহাম্মদ আতিকুল্লাহ খান মাকে কল করেন। ভারত মহাসাগরে সোমালি জলদস্যুরা ততক্ষণে জাহাজটি ছিনতাই করেছে। সেখান থেকে কোনোভাবে মাকে ফোন করেন তিনি।
আজ সোমবার সকালে চট্টগ্রাম নগরীর নিজ বাসায় দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে ৬২ বছর বয়সী শাহনূর বেগম বলেন, 'আমার ছেলে ২০০৮ সাল থেকে জাহাজে কাজ করছে। আমি বেশ কয়েকবার সোমালিয়ান জলদস্যুদের জাহাজ ছিনতাইয়ের খবর দেখেছি। ২০১০ সালে আরেকটি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি জাহান মনির ছিনতাইয়ের খবরেরও খোঁজ রাখতাম। তখন অপহৃত নাবিকদের উদ্ধারের জন্য প্রাণ ভরে দোয়া করতাম।'
'কিন্তু আমার ছেলে যে এমন অপহরণের শিকার হবে, তা কখনও ভাবিনি। আমার পরিবার যে এমন বিপদের মধ্যে দিয়ে যাবে তা কখনও ভাবিনি,' বলছিলেন এই মা।
'আমরা পরিবারের সবাই মিলে গতকাল যখন ইফতার করতে বসি তখন আমার ছেলে ফোন করে জানায় 'আমাদের সবাইকে বন্দি করে ফেলছে সোমালিয়ার জলদস্যুরা। আমরা আপাতত সেফ আছি, মানে আমাদের কোনো ক্ষতি করে নাই। কিন্তু ওরা বন্দুক নিয়ে আমাদের চারদিকে টহল দিচ্ছে। যে কোনো মুহূর্তে যে কোনো কিছু ঘটে যেতে পারে। খুব টেনশনে আছি। আপনারা সবাই দোয়া করবেন,' চোখে পানি নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন তিনি।
ছেলের কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন শাহনূর বেগম। বলেন, এরকম শোনার পর আমরা তো খালি চিন্তা করছি।
'তার ২০ মিনিট পর ছেলে একটা ভয়েস মেসেজ পাঠায়। বলে, "আমাদের মোবাইল ফোন কেড়ে নিচ্ছে। আমার থেকেও নিয়ে ফেলবে। আমার সাথে হয়তো আর যোগাযোগ হবে না। আপনারা দোয়া করেন শুধু।" এটুকু বলেছে।'
নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে তিনি বলেন, 'আমার পুত্রবধূ অন্তঃসত্ত্বা। এই খবর শুনে সে অসুস্থ হয়ে পড়েছে।'
শাহনুর তার ছেলে এবং অন্য ২২ জন ক্রুকে নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনতে জাহাজের মালিকানাধীন কোম্পানি এবং সরকারের প্রতি সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।
সোমালিয়ার জলদস্যুরা গতকাল সোমালিয়ার উপকূল থেকে ৫০০ নটিক্যাল মাইল দূরে এমভি আবদুল্লাহ জাহাজ ছিনতাই করে।
মোজাম্বিকের মাপুতো থেকে ৫৮ হাজার টন কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হামরিয়ার উদ্দেশে যাওয়ার সময় জলদস্যুরা জাহাজটি ছিনতাইয়ের শিকার হয়।
এমভি আব্দুল্লাহর মালিক কেএসআরএম গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এসআর শিপিং লিমিটেড।
Comments