চাঁদা না পেয়ে পায়রা বন্দরে ঠিকাদারের লোকজনের ওপর ছাত্রলীগের হামলা, নির্মাণকাজ বন্ধ

পায়রা বন্দর
পায়রা বন্দর। স্টার ফাইল ফটো

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় পায়রা সমুদ্র বন্দরের প্রথম টার্মিনালের ঠিকাদারের কাছে মাসে ৩০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজনের ওপর হামলার অভিযোগও পাওয়া গেছে।

হামলায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীসহ ৫ জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কলাপাড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশিক তালুকদারের নেতৃত্বে গত শুক্রবার এ হামলা হয়। ঘটনার প্রতিবাদে নির্মাণ কাজ বন্ধ রেখেছে পায়রা বন্দরের বাংলাদেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়াটার বিল্ডার্স লিমিটেড। 

প্রতিকার চেয়ে ওয়াটার বিল্ডার্স লিমিটেডের পাশাপাশি চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিএসআইসি ইন্টারন্যাশনাল ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেডের পক্ষ থেকে বন্দরের চেয়ারম্যানের কাছে রোববার লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

পায়রা বন্দর পরিচালনা বোর্ডের পরিচালক মো. আব্বাস উদ্দিন লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন বলে দ্য ডেইলি স্টারকে নিশ্চিত করেছেন।

লিখিত অভিযোগে বাংলাদেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র প্রজেক্ট ম্যানেজার মো. জাহিদুল ইসলাম জানান, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৩টার দিকে ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন প্রভাবশালী লোকজন নির্মাণাধীন পায়রা বন্দরের প্রথম টার্মিনালের কাজের সাইটে যান এবং জোরপূর্বক ঠিকাদারের কাজ বন্ধ করে দেন। তারা দলের ঊর্ধ্বতন নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। এতে ২৬ ও ২৭ ফেব্রুয়ারি বন্দরের নির্মাণকাজ বন্ধ থাকে। 

২৮ ফেব্রুয়ারি আবার কাজ শুরু করা হলে ১ মার্চ সকাল ১১টার দিকে ৩০টি মোটরসাইকেলে ৭০-৮০ জন বহিরাগত সাইটে গিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের মারধর করে, অফিস ভাঙচুর করে এবং অস্ত্র দিয়ে ভয়ভীতি দেখায়। তারা অনৈতিক সুবিধা দাবি করে বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা ডেইলি স্টারকে জানায়, ২৬ ফেব্রুয়ারি বিকেলে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশিক তালুকদারের নেতৃত্বে ছাত্রলীগকর্মী জিতু, রনি, সজীব মৃধা, বাশার, রাজা, তুহিন তালুকদার, উজ্জ্বল তালুকদার, জুয়েল তালুকদারসহ ৭০-৮০ জনের একটি দল পায়রা বন্দরের প্রথম টার্মিনালের নির্মাণকাজের সাইটে যান।

এ সময় তারা দেশীয় ও চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রতি মাসে ৩০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। টাকা না পেলে বন্দরে কাজ করতে দেওয়া হবে না বলে তারা হুমকি দেয়। কিন্তু, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন চাঁদা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

পরে গত শুক্রবার ছাত্রলীগকর্মীরা আবার সেখানে গিয়ে হামলা চালায়। এতে ওয়াটার বিল্ডার্স লিমিটেডের সিনিয়র প্রজেক্ট ম্যানেজার প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম, স্টোরকিপার মনির হোসেন, ড্রাইভার দুলাল মৃধাসহ ৫ জন আহত হয়। 

যোগাযোগ করা হলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়াটার বিল্ডার্সের প্রধান প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'হামলার পর থেকে পায়রা বন্দরের উন্নয়ন কাজ বন্ধ আছে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সবসময় আমাদের কাজের সাইটে পাহারা দিচ্ছে। তাই কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। ঘটনার পর আমরা ও চায়নিজ কোম্পানি পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো সুরাহা হয়নি, কাজও চালু করা সম্ভব হয়নি।' 

জানতে চাইলে কলাপাড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশিক তালুকদার চাঁদা দাবির অভিযোগ অস্বীকার করে ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা কোনো চাঁদা চাইনি। পায়রা বন্দরে আমাদের জমি গেছে। তাই এখানে আমরা কিছু কাজ চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের কোনো কাজ দেওয়া হয়নি। এটা নিয়ে আমাদের সঙ্গে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ঝামেলা হয়েছে।'

যোগাযোগ করা হলে বন্দরের প্রধান প্রকৌশলী মো. নাসিরউদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পায়রা বন্দর প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত। বন্দরের প্রথম টার্মিনালের কাজ আগামী জুনের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য। তবে কাজ বন্ধ থাকায় সমস্যা হচ্ছে। কাজে বিঘ্ন ঘটলে যথাসময়ে এটি উদ্বোধন করা যাবে না।'

এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল আবদুল্লাহ আল মামুন চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। 

তবে যোগাযোগ করা হলে বন্দরের পরিচালনা বোর্ডের পরিচালক মো. আব্বাস উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা প্রকল্পের কাজে নিয়োজিত দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগগুলোর বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নিতে কলাপাড়া থানার ওসিকে অনুরোধ করেছি। বিষয়টি জেলা পুলিশ সুপারকেও জানিয়েছি।'

তিনি আরও বলেন, 'আমি বর্তমানে ছুটিতে আছি। আগামী সপ্তাহে অফিসে ফিরে বন্দরের চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।'

Comments

The Daily Star  | English

Ending impunity for crimes against journalists

Though the signals are mixed we still hope that the media in Bangladesh will see a new dawn.

13h ago