কোটা আন্দোলন

ছাত্রলীগের হামলা, পুলিশের নিষ্ক্রিয়তায় ক্ষোভ আন্দোলনকারীদের

বিকেলে ষোলশহরে অবস্থানরত আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হয় চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের একটি অংশ।
ষোলশহর এলাকায় সড়কে পুলিশের অবস্থান। ছবি: রাজীব রায়হান/স্টার

বন্দরনগরী চট্টগ্রামের ষোলশহর এলাকায় কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনা ঘটে। আজ সোমবার বিকেলে এ হামলার সময় পুলিশের নিষ্ক্রিয় ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আন্দোলনকারীরা। 

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, মিছিল নিয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা রেলস্টেশনে এসে অর্তকিত হামলা চালায়। সে সময় কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড (কেজিডিসিএল) ও বাংলাদেশ কৃষি উয়ন্নন করপোরেশন (বিএডিসি) অফিসের সামনে পুলিশের উপস্থিতি ছিল।

সেখানে পুলিশ দাঁড়িয়ে শুধু নিরব দর্শকের ভূমিকায় ছিল বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।

বিকেল ৫টার দিকে ষোলশহরে অবস্থানরত আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হয় নগর ছাত্রলীগের একটি অংশ। তবে ছাত্রলীগের কোন অংশের নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

রেলস্টেশনের ভেতরে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে ককটেল ছোড়ে ছাত্রলীগ। ছবি: রাজীব রায়হান/স্টার

হামলার শিকার শিক্ষার্থীরা স্টেশনের ভেতর থেকে পাথর ছুড়তে ছুড়তে মূল সড়কে বের হয়ে এলে ছাত্রলীগের সঙ্গে তাদের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং ছাত্রলীগের মিছিল থেকে একাধিক ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। এসময় সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

সংঘর্ষে আন্দোলনরত কয়েকজন শিক্ষার্থী, পুলিশের এক কনস্টেবল, দীপ্ত টিভির রিপোর্টার রুনা আনসারী, সারাবাংলা ডট কমের ফটোগ্রাফার শ্যামলসহ বেশ কয়েকজন আহত হন।

আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের উপস্থিতি জেনেও হামলার সুযোগ করে দিয়েছে পুলিশ। কিন্তু, পুলিশের পক্ষ থেকে এ অভিযোগ নাকচ করে দেওয়া হয়েছে।

প্রতক্ষ্যদর্শী ও পুলিশের একাধিক সূত্র জানায়, পাচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা এবং সিএমপির বায়েজিদ জোনের সহকারী কমিশনার বেলায়েত হোসেন ষোলশহর রেলস্টেশনের সামনে বিকেল ৪টা থেকেই ফোর্স নিয়ে অবস্থান করছিলেন। 

দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় রাস্তায় পুলিশকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। ছবি: রাজীব রায়হান/স্টার

ওই সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা রেলস্টেশনের ভেতরে শান্তিপূর্ণ অবস্থান করে স্লোগান দিচ্ছিলেন। অন্যদিকে দুই নম্বর গেট এলাকায় জড়ো হতে থাকেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।

একইসময় কেজিডিসিএল অফিসের সামনের গেটে ফোর্সসহ ছিলেন সিএমপির উত্তর বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার জাহাঙ্গীর।

একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, হামলার কিছুক্ষণ আগে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী স্টেশনে ঢুকতে চাইলে বাধা দেন ওসি সন্তোষ ও এসি বেলায়েত। 

এর কিছুক্ষণ পর বিকেল ৫টার দিকে হঠাৎ ষোলশহর দুই নম্বর গেট এলাকা থেকে ছাত্রলীগের ১০০-১৫০ নেতাকর্মী লাঠি হাতে মিছিল নিয়ে দৌঁড়ে এসে স্টেশনের সামনে জড়ো হয়। তারা ভেতরে ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকে। ঠিক সেসময় পুলিশ পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল।

তবে পাঁচলাইশ থানার ওসি এবং এসি বেলায়েত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু অন্যান্য পুলিশ সদস্য এগিয়ে না আসায় ঘটনা সংঘর্ষে রুপ নেয়। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, একপর্যায়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ধাওয়া দিলে কেজিডিসিএল এবং চিটাগাং শপিং কমপ্লেক্সের পাশ দিয়ে গিয়ে দূরে অবস্থান নেয় ছাত্রলীগের কর্মীরা। এসময় দফায় দফায় ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করছিল উভয়পক্ষ। সংঘর্ষের সময় একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। 

প্রায় ২৫ মিনিট ধরে সংঘর্ষ চললেও চিটাগাং শপিং কমপ্লেক্সের পাশে ৫০-৬০ জন পুলিশ সদস্যসহ চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলেন উত্তর বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মোখলেসুর রহমান। পরে তার সঙ্গে যোগ দেন এডিসি জাহাঙ্গীর।

ঘটনার পর পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে স্লোগান দিতে থাকেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে আন্দোলনকারীরা রেলস্টেশন থেকে মুরাদপুরের দিকে চলে যায়। এর কিছুক্ষণ পর স্টেশন এলাকায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে জড়ো হন দুই নম্বর গেট এলাকা থেকে। এ সময় তাদের হাতে লাঠি ও পাথর দেখা যায়।

হামলার ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে উপকমিশনার মোখলেসুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, 'এটিকে হামলা বলা যাবে না। ষোলশহর রেলস্টেশনে কোটাবিরোধীরা জড়ো হয়েছিলো। একপর্যায়ে তারা সামনের রাস্তায় নামে এবং ওই মুহূর্তে ছাত্রলীগ একদিক থেকে চলে আসে। পরে তারা দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে ছিল।'

'আমরা চেষ্টা করেছি যেন মুখোমুখি না হয়। পরে কোটাবিরোধীরা একদিকে ও ছাত্রলীগ আরেকদিকে অবস্থান করে,' বলেন তিনি।

পুলিশের নিনিষ্ক্রিয়তার বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে ডিসি মোখলেসুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পুলিশ চেষ্টা করেছে বলেই দুই পক্ষ দুই দিকে গেছে। আমরা মাঝখানে থেকে এক পক্ষ যেন অন্য পক্ষের ওপর হামলা করতে না পারে সেটা করেছি।'

এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

 

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

5h ago