শুল্ক কমানোর পরও বেড়েছে চিনি, পাম অয়েল ও খেজুরের দাম

রমজান, নিত্যপণ্য, ইফতারের পণ্য, ভোজ্যতেল, চিনি, খেজুর, চাল,
রাজধানীর একটি মুদি দোকানের সাধারণ চিত্র। স্টার ফাইল ফটো

পবিত্র রমজানে নিত্যপণ্যের সরবরাহ ও দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার গত ৮ ফেব্রুয়ারি ভোজ্যতেল, চিনি, খেজুর ও চালের মূল্য সংযোজন কর ও আমদানি শুল্ক কমিয়ে ক্রেতাদের বোঝা কমানোর উদ্যোগ নেয়।

তবে গতকাল বুধবার পর্যন্ত বাজারে এসব উদ্যোগের প্রভাব পড়তে দেখা যায়নি।

বন্দরনগরী চট্টগ্রামে নিত্যপণ্যের প্রধান পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে চিনির দাম প্রতি মণ ৫০ টাকা বেড়ে বর্তমানে চার হাজার ৯৫০ টাকা থেকে পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

এক সপ্তাহের মধ্যে একই পরিমাণ পাম অয়েলের দাম ১০০ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে চার হাজার ৯৫০ টাকায়।

তবে চট্টগ্রামে সয়াবিন তেল ও খেজুরের দাম অপরিবর্তিত আছে বলে জানিয়েছেন তারা।

গতকাল রাজধানীর অন্যতম বড় কাঁচাবাজার কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে—গত এক সপ্তাহের মধ্যে খেজুর ও পাম অয়েলের দাম বেড়েছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, ঢাকায় মানভেদে পাঁচ কেজি ওজনের প্রতি কার্টন খেজুর ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

কারওয়ান বাজারের খেজুরের খুচরা বিক্রেতা টিপু সুলতান দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, এক সপ্তাহ আগে এক কার্টন মরিয়ম খেজুরের দাম ছিল দুই হাজার ৭০০ টাকা। এখন তা বেড়ে তিন হাজার টাকা হয়েছে।

মেদজুল খেজুরের দাম কার্টনপ্রতি সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা থেকে বেড়ে ছয় হাজার টাকা হয়েছে।

টিপু সুলতান আরও বলেন, 'আমরা পাইকারদের কাছে দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে তারা বলেন, আমদানি খরচ বাড়ে যাওয়ায় বাজারে দাম বেড়েছে।'

একই বাজারের এক পাইকারি ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শুনেছি, কিছু আমদানিকারক শুল্ক ছাড়ের আশায় বন্দরে আমদানি করা খেজুর ফেলে রেখেছিলেন।'

এ জন্য তাদেরকে জরিমানা দিতে হওয়ায় বাজারে খেজুরের দাম বেড়েছে বলে জানান তিনি।

কারওয়ান বাজারের সয়াবিন তেলের পাইকারি বিক্রেতা মোহাম্মদ সিদ্দিক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পাম অয়েলের দাম মণপ্রতি ১০০ থেকে ১২০ টাকা বেড়েছে।'

তবে কারওয়ান বাজারে অন্যান্য ভোজ্যতেল ও চিনির দাম অপরিবর্তিত আছে।

চট্টগ্রাম কাস্টমসের কর্মকর্তারা ডেইলি স্টারকে জানান, গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে এবং পণ্য সরবরাহ কয়েক গুণ বেড়েছে।

তারা আরও জানান, শিগগিরই শুল্ক কমানো হচ্ছে জেনে ব্যবসায়ীরা গত ৮ ফেব্রুয়ারির আগের ১০-১২ দিন বন্দর থেকে পণ্য নেওয়া কমিয়ে দেন।

ব্যবসায়ীরা আরও জানিয়েছেন—শুল্ক কমানোয় চিনির দাম কেজিতে এক টাকা, পাম ও সয়াবিন তেলের দাম কেজিতে আট থেকে নয় টাকা এবং খেজুরের দাম সাত থেকে ৩৫ টাকা পর্যন্ত কমানোর সুযোগ আছে।

বাজারে এসব পণ্যের দামে পরিবর্তন আসতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে বলেও উল্লেখ করেন তারা।

এনবিআরের গেজেটে বলা হয়েছে—প্রতি কেজি চালের আমদানি শুল্ক ২০ থেকে ২১ টাকা কমবে। তবে গত তিন মাসে চাল আমদানি হয়নি বলে জানিয়েছেন শুল্ক কর্মকর্তারা।

'গণমাধ্যমে থেকে শুল্ক কমানোর বিষয়টি জেনেছি,' উল্লেখ করে গতকাল চট্টগ্রামের কাজীর দেউড়ি বাজারের খুচরা বিক্রেতা মোহাম্মদ আলাউদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে। এর কারণ এখনো জানা যায়নি।'

খাতুনগঞ্জের খেজুর আমদানিকারক এনামুল রাঈম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ডলার সংকটের কারণে এলসি খুলতে সমস্যায় পড়ছি।'

তিনি জানান, গত ৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের পর টাকার বিপরীতে প্রতি ডলারের বিনিময় হার ১১৮ টাকা থেকে বেড়ে ১২৩ টাকা হয়।

তাই শুল্ক কমানোর পরও বাজারে এর প্রভাব পড়েনি বলে মনে করেন তিনি।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জনগণের সুবিধার জন্য চাল, সয়াবিন, চিনি ও খেজুরের ওপর শুল্ক কমানো হয়। তবে এর সুফল ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকরা পাচ্ছেন।'

তিনি বলেন, 'আমরা খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজার ঘুরে দেখেছি গত কয়েকদিন ধরে এসব পণ্যের দাম বেড়ে চলছে।'

'আইনের কঠোর প্রয়োগ না থাকায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে' বলে মন্তব্য করেন তিনি।

কারওয়ান বাজারে ক্রেতা মোহাম্মদ রফিক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অধিকাংশ পণ্যের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে।'

ব্যবসায়ীদের যদি সহানুভূতি থাকত তাহলে শুল্ক কমানোর সুফল মানুষ পেত বলে মনে করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Jatiyo Party's office set on fire in Khulna

Protesters vandalised the Jatiyo Party office in Khulna's Dakbangla area last evening

1h ago