পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগে নীতিমালা প্রণয়নের প্রস্তাব ইউজিসির

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগে নীতিমালা প্রণয়নের প্রস্তাব ইউজিসির
ছবি: সংগৃহীত

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নিয়োগে একটি নীতিমালা প্রণয়নের প্রস্তাব করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।

ইউজিসি তাদের ২০২২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে আরও বলেছে, এসব পদে নিয়োগের জন্য কমিশনের সুপারিশের আলোকে যোগ্য শিক্ষকদের একটি পুল গঠন করা যেতে পারে।

উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষের অভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রশাসনিক ও আর্থিক কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে না বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

প্রতিবেদনটি এখনো রাষ্ট্রপতির কাছে উপস্থাপন করা হয়নি।

ইউজিসির একজন সদস্য গতকাল জানান, ১৯৭৩ সালের আদেশে পরিচালিত চারটি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া বাকি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কে হতে পারবে তার কোনো নীতিমালা না থাকায় তারা এ সুপারিশ করেছেন।

'এ ধরনের নীতিমালা রাজনৈতিক বিবেচনায় ভিসি, প্রো-ভিসি নিয়োগের সমালোচনা কমাতে সহায়তা করবে। আমরা যদি একটি পুল ও নীতিমালা তৈরি করতে পারি, তাহলে তা জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে এবং দেশের মানুষ সচেতন হবে যে, কারা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শীর্ষ প্রশাসনিক পদে বসতে যাচ্ছেন', বলেন তিনি।

ইউজিসি রাজনৈতিক বিবেচনায় উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য নিয়োগের সংখ্যা কমাতে চায় কি না, জানতে চাইলে ইউজিসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, 'আমরা প্রশাসনিক শীর্ষ পদে যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ চাই।'

'যদি কেউ ভালো অ্যাকাডেমিক ক্রাইটেরিয়া, শিক্ষকতা, গবেষণা ও প্রশাসনিক কাজের অভিজ্ঞতা, সততার মতো মানদণ্ডগুলো পূরণ করতে পারেন, তাহলে তাকে উপাচার্য বা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেওয়া উচিত', বলেন তিনি।

এতদিন চারটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও জাহাঙ্গীরনগরের নিজ নিজ আইনে বিধান ছিল যে, এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট দ্বারা নির্বাচিত হওয়ার পর রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগ পাবেন।

কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনির্বাচিত ভিসিরাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরিচালনা করেন।

আর অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি নিয়োগের কোনো মানদণ্ডই নেই।

ওইসব বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি উপাচার্য নিয়োগ দিলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা পাঠানোর পর প্রধানমন্ত্রীর সম্মতিক্রমে তিনি তা করে থাকেন।

ইউজিসি ২০০৬ থেকে ২০২৬ সালের জন্য উচ্চশিক্ষার একটি কৌশলগত পরিকল্পনা প্রস্তুত করেছিল, যেখানে সুপারিশ করা হয়েছিল, উপাচার্য নিয়োগের বিদ্যমান পদ্ধতিটি পরিবর্তন করা দরকার। কারণ এতে 'রাজনৈতিক কৌশলের সুযোগ' আছে।

উপাচার্য নিয়োগের সুপারিশ করার জন্য পর্যাপ্ত আইনি সক্ষমতা দিয়ে চ্যান্সেলর একটি জাতীয় সার্চ কমিটি গঠন করতে পারেন বলে প্রস্তাব করা হয়েছে।

ইউজিসির এক সদস্য বলেন, পরবর্তী সরকারগুলো এসব সুপারিশের কোনোটিই বাস্তবায়ন না করে অনুগতদের নিয়োগ দেয়।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, 'উপাচার্য পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক পরিচয়ই একমাত্র মাপকাঠি হওয়া উচিত নয়।'

ইউজিসি তাদের 'বার্ষিক প্রতিবেদন ২০২২' এ উচ্চশিক্ষায় বাজেট বরাদ্দ বাড়ানোর সুপারিশ করেছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র‌্যাংকিং করার পরামর্শ দিয়েছে। এ ছাড়া সব বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক মাস্টারপ্ল্যান ও প্রাতিষ্ঠানিক মান নিশ্চয়তা সেল এবং গবেষণায় চৌর্যবৃত্তি বন্ধে একটি নীতিমালা সুপারিশ করা হয়।

ইউজিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে সরকারি ৫৩টি ও ১১০টি বেসরকারিসহ মোট ১৬৩টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে।

দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ৪৭ লাখ ৫৬ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে, যাদের মধ্যে নারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২২ লাখ ১৪ হাজার। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী রয়েছে তিন লাখ ৪১ হাজার জন। তাদের মধ্যে নারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় এক লাখ।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ৩৬ হাজার ৩৯৯ জন ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬ হাজার ৫০৮ জন শিক্ষক রয়েছেন।

Comments

The Daily Star  | English

Dhaka cannot engage with non-state actors: foreign adviser

Md Touhid Hossain also emphasised that peace and stability in the region would remain elusive without a resolution to the Rohingya crisis

30m ago