গ্রামীণ নার্সিং কলেজ শুধু নার্স নয়, পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলে: ড. ইউনূস

ক্যাপিং অনুষ্ঠান শেষে ড. ইউনূসের সঙ্গে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা। ছবি: সংগৃহীত

গ্রামীণ ক্যালেডোনিয়ান কলেজ অব নার্সিংয়ের প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থীদের 'ক্যাপিং সিরিমনি' অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গত ১৮ জানুয়ারি রাজধানীর উত্তরায় প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব ক্যাম্পাসে এই অনুষ্ঠান হয়।

কলেজের অধ্যক্ষ নিরু শামসুন নাহারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন গ্রামীণ নার্সিং কলেজের চেয়ারম্যান ও নোবেলবিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ ছাড়া, গ্রামীণের সব প্রতিষ্ঠানের প্রধান এবং বেশ কয়েকটি নার্সিং কলেজের অধ্যক্ষরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

উত্তরার দিয়াবাড়িতে নিজস্ব সুবিশাল ক্যাম্পাসে অবস্থিত নার্সিং কলেজের প্রথম বর্ষের (২০২২-২০২৩) ১৭৫ জন শিক্ষার্থীর 'ক্যাপিং সিরিমনি' অনুষ্ঠানে একজন আদর্শ সেবক এবং সেবিকা হওয়ার শপথ গ্রহণ করেন শিক্ষার্থীরা। এই অনুষ্ঠানে নার্সিং পেশার মূল আদর্শগুলো নিজ জীবনে প্রতিফলিত করার শপথ গ্রহণ করা হয় এবং নার্সিং পেশায় যোগদানের প্রতীক হিসেবে নার্সিং ক্যাপ শিক্ষার্থীদের মাথায় পরিয়ে দেওয়া হয়।

এসময় ড. ইউনূস বলেন, 'একজন নার্স একজন রোগীর সার্বক্ষণিক সঙ্গী। একজন নার্স অসুস্থ, আহত ও বয়স্ক লোকদের যত্ন নেওয়ার জন্য সময়সময় প্রস্তুত থাকেন। গ্রামীণ নার্সিং কলেজ শিক্ষার্থীদের শুধু নার্স হিসেবে নয় বরং পরিপূর্ণ মানবিক গুণ সম্পন্ন মানুষ হিসেবে যোগ্য করে গড়ে তুলতে সহায়তা করে।'

গ্রামীণ ক্যালেডোনিয়ান কলেজ অব নার্সিংয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ড. ইউনূস। ছবি: সংগৃহীত

তিনি বলেন, 'বাংলাদেশে বেসরকারি নার্সিং কলেজগুলোর মধ্যে গ্রামীণ নার্সিং কলেজ তার গৌরবময় ও সম্মানজনক অবস্থানে ঠাঁই করে নিতে সক্ষম হয়েছে। এখান থেকে প্রায় প্রতি বছরই ছাত্র-ছাত্রীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং নার্সিং কাউন্সিলের অধীনে মেধাতালিকায় তাদের কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখছে। এ ছাড়াও, অন্যান্য কোর্সগুলোতে প্রতিবছর ভালো ফলাফলের মাধ্যমে শতভাগ ছাত্র-ছাত্রী উত্তীর্ণ হচ্ছে। এই কলেজ থেকে সফলভাবে উত্তীর্ণ হওয়ার পর বিদেশে স্কলারশিপ প্রাপ্ত হয়ে উচ্চতর ডিগ্রী অর্জন করে গ্রামীণ নার্সিং কলেজে শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন।'

এই কলেজের সাফল্য, নার্সিং পেশার প্রতি ব্যাপক আগ্রহ এবং বিদেশে উপযুক্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্সের বিপুল চাহিদা দেখে দেশের অন্যান্য স্থানেও নার্সিং কলেজ প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান ড. ইউনূস।

আলোচনা সভা শেষে নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থীরা মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশনা করেন। আনন্দ উল্লাস-মাখা জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ক্যাপিং সিরিমনির আনুষ্ঠানিকতা সমাপ্ত হয়।

গ্রামীণ ক্যালেডোনিয়ান কলেজ অব নার্সিং একটি সামাজিক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান। এটি ২০১০ সালে ইউনূস সেন্টারের অফিসে ৩৮ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করে। কলেজটিতে বর্তমানে তার নিজস্ব ক্যাম্পাসে ৫টি কোর্সে ৫৫৬ ছাত্র-ছাত্রী পড়ালেখা করছে। কলেজ ক্যাম্পাসটি মেট্রোরেলের শেষ স্টেশন উত্তরা উত্তর স্টেশনের পাশেই অবস্থিত। ৯০০ ছাত্র-ছাত্রীর একসঙ্গে পড়ালেখা করার উপযোগী করে ক্যাম্পাসটি নির্মাণ করা হয়েছে। এটি যুক্তরাজ্যের গ্লাসগো ক্যালেডোনিয়ান ইউনিভার্সিটি এবং গ্রামীণ হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস লিমিটেডের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত হচ্ছে। গ্রামীণ ক্যালেডোনিয়ান কলেজ অব নার্সিংয়ের নিজস্ব এই ক্যাম্পাসে ৭০০ ছাত্রীর থাকা-খাওয়া ও পড়ালেখার জন্য সুসজ্জিত একটি ডর্মেটরি তৈরি করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী ডাক্তার এবং নার্সের অনুপাত ১:৩ প্রয়োজন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে বাংলাদেশে এর বিপরীতে ডাক্তার এবং নার্সের অনুপাত ২.৫:১। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের দেশে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত নার্সের অপ্রতুলতার সমস্যা সমাধান করার লক্ষ্য গ্রামীণ নার্সিং কলেজ প্রতিষ্ঠার অন্যতম প্রধান কারণ। এই কলেজ থেকে উত্তীর্ণ নার্সদের দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কাজ করার সমকক্ষ করে গড়ে তোলা হয়। এ পর্যন্ত ১ হাজার ২৯ জন নার্স এখান থেকে প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে যোগদান করেছে।

এই নার্সিং কলেজের জন্য আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষক তৈরির জন্য নিজেদের কৃতী ছাত্রীদের মধ্য থেকে গ্লাসগো ক্যালেডোনিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএসসি, মাস্টার্স এবং পিএইচডি ডিগ্রীর জন্য স্কলারশিপ দিয়ে পাঠানো হয়েছে। তিনজন ডিগ্রী নিয়ে ফিরে এসে কলেজে শিক্ষকতা করছেন। বর্তমানে স্কলারশিপ নিয়ে পিএইচডি ডিগ্রীর জন্য জাপানের হিরোশিমা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনজন এবং গ্লাসগো ক্যালেডোনিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন পড়ালেখা করছেন।

গতবছর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে অবস্থিত বিখ্যাত এডেলফি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে গ্রামীণ নার্সিং কলেজের একটি সহযোগিতা চুক্তি সই হয়েছে। এই চুক্তির অধীনে এই বিশ্ববিদ্যালয় গ্রামীণ নার্সিং কলেজের কৃতী ছাত্রীদের এমএসসি এবং পিএইচডি ডিগ্রীর জন্য পড়ালেখা করার সু্যোগ দেবে। এজন্য বৃত্তিরও ব্যবস্থা করবে। দুই নার্সিং কলেজের শিক্ষক বিনিময় কর্মসূচিও এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। 

এডেলফি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডীন অধ্যাপক ডেবোরা হান্ট এবং সহকারী অধ্যাপক চার্লস এমানুয়েল ক্যাল গ্রামীণ নার্সিং কলেজের সার্বিক কর্মসূচী পর্যালোচনার জন্য চলতি মাসে ঢাকায় আসবেন। জুন মাসে জাপানের হিরোশিমা বিশ্ববিদ্যালয়ের নার্সিং বিষয়ক ডীন অধ্যাপক মারিয়ামা গ্রামীণ নার্সিং কলেজের সঙ্গে তাদের কর্মসূচি পর্যালোচনার জন্য ঢাকায় আসবেন। গত বছরও তিনি এই কলেজের মান উন্নয়ন বিষয়ে আলোচনার জন্য কর্মসূচী প্রণয়নের কাজে ঢাকায় এসেছিলেন। গ্লাসগো ক্যালেডোনিয়ান বিশ্ববিদ্যালয় তাদের শিক্ষকদের মাধ্যমে শুরু থেকে এই নার্সিং কলেজে নিয়মিত সেমিনার কর্মসূচী পরিচালনা করে এসেছে।

Comments

The Daily Star  | English

$14b lost to capital flight a year during AL years

Bangladesh has lost around $14 billion a year on average to capital flight during the Awami League’s 15-year tenure, according to the draft report of the committee preparing a white paper on the economy.

10h ago