ইকুয়েডরে ২ পুলিশসহ নিহত ১০, জরুরি অবস্থা-রাত্রিকালীন কারফিউ

ইকুয়েডরে জরুরী অবস্থা জারি করেছেন প্রেসিডেন্ট নোবোয়া। ছবি: এএফপি
ইকুয়েডরে জরুরী অবস্থা জারি করেছেন প্রেসিডেন্ট নোবোয়া। ছবি: এএফপি

সাম্প্রতিক সময়ে ইকুয়েডরে অপরাধী চক্রের সঙ্গে প্রশাসনের সংঘাতে অন্তত ১০ ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। দেশটির প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল নোবোয়া চলমান পরিস্থিতিকে 'অভ্যন্তরীণ সশস্ত্র সংঘাত' বলে অভিহিত করেছেন।

আজ বুধবার এই তথ্য জানিয়েছে এএফপি।

সর্বশেষ সংঘাতের ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার একটি টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার চলাকালে স্টুডিওতে ঢুকে নির্বিচারে গুলি চালান কয়েকজন অজ্ঞাত বন্দুকধারী। তারা টেলিভিশনকর্মীদের হত্যার হুমকিও দেন।

এ ঘটনার জেরে অপরাধীদের 'প্রতিহত' করার নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট।

ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট নোবোয়া। ছবি: রয়টার্স
ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট নোবোয়া। ছবি: রয়টার্স

ইকুয়েডরের সবচেয়ে বড় অবৈধ মাদকচক্রগুলোর অন্যতম 'লস চোনেরোস'। এই দলটির নেতা 'কোকেন সম্রাট' হোসে অ্যাডলফো মাকিয়াস ওরফে 'ফিতো' রোববার কারাগার থেকে পালিয়ে যান। এ ঘটনার পর ইকুয়েডরের অপরাধীচক্রগুলো প্রশাসনের বিরুদ্ধে 'যুদ্ধ' ঘোষণা করে।

এই প্রেক্ষাপটে সোমবার দেশব্যাপী জরুরি অবস্থা ও রাত্রিকালীন কারফিউ জারি করেন প্রেসিডেন্ট নোবোয়া।

মঙ্গলবার পুলিশ জানায়, বন্দরনগরী গুয়াইয়াকিলে হামলায় আট জন নিহত ও অপর তিন জন আহত হন। এ ছাড়া দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে পার্শ্ববর্তী শহর নোবোলে 'হিংস্রতার সঙ্গে হত্যা করে সশস্ত্র অপরাধীরা'।

দুই শীর্ষ কোকেন রপ্তানিকারক দেশ কলম্বিয়া ও পেরুর মাঝে অবস্থিত ইকুয়েডর দীর্ঘদিন এ ধরনের সহিংসতামুক্ত ছিল। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশটিতে মেক্সিকো ও কলম্বিয়ার অপরাধ চক্র সংশ্লিষ্ট স্থানীয় অপরাধীরা নিজেদের মধ্যে সংঘাতে জড়িয়ে পরেছে।

প্রেসিডেন্টের ঘোষণার পর পালটা উদ্যোগ নেই অপরাধীরা। তারা পুলিশ কর্মকর্তাদের জিম্মি করে, বেশ কয়েকটি শহরে বিস্ফোরক হামলা চালায় এবং মঙ্গলবার সকালে গুয়াইয়াকিল শহরের টিসি টেলিভিশন ভবনে বন্দুক ও বিস্ফোরক নিয়ে ঢুকে পড়ে।

টিভিতে সরাসরি সম্প্রচারের মাঝে মাথায় হুড পরিহিত অপরাধীরা গুলি ছুঁড়তে থাকেন। এ সময়য় এক নারীকে অনুনয় করে বলতে শোনা যায়, 'গুলি করবেন না, দয়া করে গুলি করবেন না'।

অনুপ্রবেশকারীরা ভীত টেলিভিশন কর্মীদের মাটিতে শুয়ে পড়ার নির্দেশ দেয়। এ সময় এক ব্যক্তিকে চিৎকার করে কিছু একটা বলতে শোনা যায়। এক পর্যায়ে স্টুডিওর আলোগুলো নিভে গেলেও সম্প্রচার চলতে থাকে।

লাইভ টিভিতে বন্দুকধারী। ছবি: রয়টার্স
লাইভ টিভিতে বন্দুকধারী। ছবি: রয়টার্স

প্রায় ৩০ মিনিট পর ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে পৌঁছায়।

গত বছর নির্বাচিত হয়েছিলেন তরুণ প্রেসিডেন্ট নোবোয়া (৩৬)। তিনি মাদক-সংশ্লিষ্ট সহিংসতা দূর করার অঙ্গীকার করেছিলেন।

তিনি সামরিক অভিযান চালিয়ে সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্রগুলোকে 'প্রতিহত' করার নির্দেশ দেন। তিনি এই সংগঠনগুলোকে 'জঙ্গি সংগঠন' ও 'যুদ্ধবাজ ও রাষ্ট্রবিরোধী মহল' হিসেবে অভিহিত করেন।

মঙ্গলবার বেশ কয়েকটি বোমা বিস্ফোরণ ও গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। রাজধানী কিতোতে সাত পুলিশ কর্মকর্তাকে অপহরণ করে অপরাধীরা। 

ইকুয়েডরে জরুরী অবস্থা জারি করেছেন প্রেসিডেন্ট নোবোয়া। ছবি: এএফপি
ইকুয়েডরে জরুরী অবস্থা জারি করেছেন প্রেসিডেন্ট নোবোয়া। ছবি: এএফপি

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায় অপহরণকৃত কর্মকর্তারা মাটিতে বসে আছেন এবং তাদের দিকে বন্দুক তাক করে রাখা হয়েছে।

এক ভীত পুলিশ কর্মকর্তা প্রেসিডেন্ট নোবোয়ার উদ্দেশ্যে একটি বক্তব্য পড়ে শোনান। তিনি বলেন, 'আপনি যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছেন। আপনাকে যুদ্ধ উপহার দেওয়া হবে। আমরা ঘোষণা করছি, এই যুদ্ধে পুলিশ, বেসামরিক ব্যক্তি ও সেনারা বলির পাঁঠা হিসেবে বিবেচিত হবে'।

এই বক্তব্যে আরও জানানো হয়, রাত ১১টার পর কাউকে সড়কে পাওয়া গেলে 'হত্যা করা হবে'।

এই ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে ইকুয়েডরের জনগণের মাঝে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। শুক্রবার পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সরাসরি ক্লাস স্থগিত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া, দোকান ও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দ্রুত বন্ধ করে দেওয়া হয়।

Comments

The Daily Star  | English

Postgrad doctors block Shahbagh demanding stipend hike

The blockade resulted in halt of traffic movement, causing huge suffering to commuters

52m ago