সরেজমিন: নির্বাচনী ক্যাম্প আছে, নেতাকর্মী নেই

বৃহস্পতিবার; দুপুর ১২টা ৪৮ মিনিট। শ্যামলী রিং রোডে ঢাকা-১৩ সংসদীয় আসনের নৌকার প্রার্থী জাহাঙ্গীর কবির নানকের প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেল, সুপরিসর ক্যাম্পের এক কোনায় চেয়ারে পা তুলে ঘুমাচ্ছেন এক ব্যক্তি।
দুপুর ১২টা ৪৮ মিনিটে রিং রোডে জাহাঙ্গীর কবির নানকের প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়। ছবি: মামুনুর রশীদ/স্টার

বৃহস্পতিবার; দুপুর ১২টা ৪৮ মিনিট। শ্যামলী রিং রোডে ঢাকা-১৩ সংসদীয় আসনের নৌকার প্রার্থী জাহাঙ্গীর কবির নানকের প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেল, সুপরিসর ক্যাম্পের এক কোনায় চেয়ারে পা তুলে ঘুমাচ্ছেন এক ব্যক্তি। 

সুসজ্জিত ওই ক্যাম্পে আর কারোর উপস্থিতি তখন চোখে পড়ল না। এ অবস্থায় ঘুমিয়ে থাকা লোকটিকে জাগিয়ে তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তার নাম মো. সবুজ। ক্যাম্প দেখভালের পাশাপাশি এখানে আসা নেতাকর্মীদের আপ্যায়নের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

সবুজ জানালেন, দিনের বেলায় সাধারণত এখানে কেউ আসেন না। সন্ধ্যার পর আস্তে ধীরে নেতাকর্মীদের আনাগোনা বাড়তে থাকে। প্রধান নির্বাচনী কার্যালয় হওয়ার কারণে প্রার্থী জাহাঙ্গীর কবির নানক মোটামুটি নিয়মিতই এখানে আসেন। সবার সঙ্গে কথা বলেন, মতবিনিময় করেন। তবে তিনি কখন আসেন, কখন যান তার কোনো ঠিক নেই।

মিরপুর সাত নম্বর সেকশনে নৌকার প্রার্থী ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ্‌র একটি নির্বাচনী ক্যাম্প। ছবি: স্টার

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি আছে আর মাত্র দুই দিন। প্রচারণার সময় আরও কম। ঘোষিত তফসিল অনুসারে আগামীকাল শুক্রবার সকাল ৮টার পর থেকে কোনো প্রার্থী আর প্রচারের কাজ চালাতে পারবেন না। সে হিসেবে আনুষ্ঠানিক প্রচারণার শেষ দিন আজই।

এদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত ঢাকার চারটি সংসদীয় আসনের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেছেন দ্য ডেইলি স্টারের এই দুই প্রতিবেদক। কিন্তু এ সময়কালে রিং রোডে নানকের নির্বাচনী কার্যালয়ের মতোই আওয়ামী লীগের অন্য প্রার্থীদের নির্বাচনী ক্যাম্পগুলোও ছিল শুনশান। পথে সমর্থকদের কোনো মিছিল কিংবা জমায়েতও চোখে পড়েনি।

এসব এলাকায় থাকা আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীদের ভাষ্যও সবুজের মতো। তারাও বলছেন, দিনের বেলায় তারা সাধারণত হ্যান্ডবিল বিতরণের পাশাপাশি বাসা-বাড়িতে গিয়ে ভোটার নম্বর পৌঁছে দেওয়ার কাজ করছেন। চলছে মাইকিংয়ের কাজ। সন্ধ্যার পর ক্যাম্পে এসে দিনের কার্যক্রম পর্যালোচনার পাশাপাশি পরের দিনের কাজ সম্পর্কে ধারণা নেন তারা। এ সময় সাউন্ডবক্সে ভোটের গান বাজানো হয়। মিছিল করেন কেউ কেউ।

ফার্মগেটে আসাদুজ্জামান খান কামালের নির্বাচনী ক্যাম্পে দুপুর ২টা ৮ মিনিটে তোলা ছবি। ছবি: শরীফ এম শফিক/স্টার

আজ সকাল সাড়ে ১১টায় মিরপুর সাত নম্বর সেকশনের মধ্যরাস্তা এলাকায় ঢাকা-১৬ আসনের নৌকার প্রার্থী ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ্‌র একটি নির্বাচনী ক্যাম্পে পৌঁছে দেখা যায় ক্যাম্পের সামনে দাঁড়িয়ে গল্প করছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের চার নেতা। আশপাশে আর কোনো নেতাকর্মী কিংবা সমর্থক নেই।

ভোটের দুই দিন আগে এমন অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে ৯২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. জহিরুল ইসলাম বললেন, 'কর্মী-সমর্থকরা তো দিনে মাঠে কাজ করে। সন্ধ্যায় ক্যাম্পে আসে। পরের দিনের কাজ বুঝে নেয়। মিছিল হলেও তা সন্ধ্যার পরেই হয়।'

দুপুর ১২টার দিকে একই কথা জানালেন ১৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি শামসুল আলম। তিনি কাজ করছেন ঢাকা-১৫ আসনে নৌকার প্রার্থী কামাল হোসেন মজুমদারের পক্ষে।

মনিপুর গার্লস স্কুল রোডে রাস্তার পাশে টেবিল পেতে হ্যান্ডবিল ও ভোটার নাম্বার বিতরণের কাজ করছেন ঢাকা-১৫ আসনে নৌকার প্রার্থী কামাল হোসেন মজুমদারের দুই সমর্থক। ছবি: স্টার

শামসুল আলমের সঙ্গে কথা হয় মনিপুর গার্লস স্কুল রোডে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের বিপরীত পাশের একটি দোকানে বসে। তার সঙ্গে কথোপকথনের সময় কার্যালয়ের ভেতরে কোনো নেতাকর্মী ছিলেন না। তবে বাইরে রাস্তার পাশে একটি টেবিল বসিয়ে হ্যান্ডবিল বিতরণের কাজ করতে দেখা যায় দুইজনকে।

দুপুর ১টা ২৬ মিনিটে ফার্মগেট এলাকায় ঢাকা-১২ আসনের নৌকার প্রার্থী আসাদুজ্জামান খান কামালের একটি নির্বাচনী কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, এলাকার ভোটারদের জন্য ভোটার কার্ড তৈরির কাজ করছেন একজন নারী। সেখানে থাকা আরেক পুরুষ কর্মী জানালেন তিনি এই ক্যাম্পের দেখভালের দায়িত্বে আছেন।

এই দুইজনের বাইরে আর কারও উপস্থিতি সেখানে চোখে পড়ল না।

এছাড়া মিরপুর, আগারগাঁও ও খেজুরবাগান এলাকার আরও অন্তত পাঁচটি নির্বাচনী কেন্দ্রে একই দৃশ্য দেখা গেছে।

Comments

The Daily Star  | English
compensation for uprising martyrs families

Each martyr family to get Tk 30 lakh: Prof Yunus

Vows to rehabilitate them; govt to bear all expenses of uprising injured

3h ago