‘চাচারা নৌকার পাওয়ারে জমির জন্য বাবারে শেষ কইরা দিলো’

যাদের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ উঠেছে, তাদের কাউকে বাড়িতে গিয়ে পাওয়া যায়নি। এ ঘটনার পর থেকে তারা সবাই পলাতক বলে স্থানীয়রা জানান।
নিহত ইস্কান্দার খান। ছবি: সংগৃহীত

মাদারীপুরের কালকিনিতে এক স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থককে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে নিহতের চাচাতো ভাইদের বিরুদ্ধে।

অভিযুক্তরা নৌকার প্রার্থীর সমর্থক হলেও জানা গেছে, জমিজমার বিরোধে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।

নিহত ইস্কান্দার খান (৫৬) মাদারীপুর-৩ (কালকিনি, ডাসার ও সদরের একাংশ) এলাকার স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা আক্তারের সমর্থক ছিলেন বলে পরিবার সূত্রে জানা গেছে।

গতকাল শনিবার সকালে তাকে কুপিয়ে আহত করা হয়। পরে তাকে বরিশাল নেওয়ার পথে দুপুর ১১টার দিকে তিনি মারা যান।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নিহত ইস্কান্দার খান কালকিনি উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সদস্য। এলাকাটি মাদারীপুর-৩ আসনের অধীন।

এ আসনে নৌকার প্রার্থী আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য তাহমিনা বেগম।

হত্যার ঘটনা ও বিরোধের বিষয়ে জানতে কালকিনি উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নে গিয়ে কথা হয় নিহত ইসকান্দরের মেয়ে নিপা আকতারের (২৫) সঙ্গে।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জমি-জমার বিরোধের জেরেই আমার বাবাকে হত্যা করেছে তার চাচাত ভাইরা। তবে আমার বাবা ঈগল পাখি মার্কার তাহমিনার সমর্থক। বাবার চাচাতো ভাই হত্যাকারী খলিল খা নৌকার গোলাপের সমর্থক। তারা আবার নৌকা পেয়েছে, তাই পাওয়ার বেড়ে গেছে।'

নিপা বলেন, 'আমার বাবা কয়েক বছর আগে কিছু জমি কিনেছিলেন। জমির সব কাগজপত্র আছে। কিন্তু বাবার চাচাত ভাইরা আমাদের সেই জমি ভোগ করতে দেবে না। বাবার চাচাত ভাই খলিল খা বলেছেন, দলিল থাকলেও তোরা ভোগ-দখল করতে পারবি না।'

'বাবা ওই জমিতে আমাদের লাগানো ধান কাটতে গেলে তারা ধান কাটতে বাধা দেয়। পরে পুলিশকে জানালে পুলিশ এসে তদন্ত করে আমাদের ওই ধান কাটতে বলে। ধান কাটতে গেলে আমার ভাই ইউসুফ (১৭), কিরন (২৩) ও মিলনকে (৩০) পিটিয়ে মাথা মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে তারা,' বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'এর আগে তারা আমার দাদাকে মেরে পা ভেঙে দিয়েছিলেন।'

বাবাকে কেন হত্যা করা হলো, জানতে চাইলে নিপা বলেন, 'এই জমিজমাই প্রধান কারণ। এর মধ্যে বাবা স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগলের মিছিলে গিয়েছিল। বাবা জমিজমারও শত্রু, আর এখন ঈগল করার কারণে নৌকারও শত্রু হয়ে গেছে। আমার বাবাও আওয়ামী লীগ করে। কিন্তু তার চাচাত ভাইরা গোলাপের নৌকা করে। তারা নৌকার পক্ষের হওয়াতে এখন তাদের শক্তি বেশি। চাচারা নৌকার পাওয়ারে জমির জন্য বাবারে শেষ কইরা দিলো।'

ইস্কান্দার খান শনিবার সকালে স্থানীয় কাচিকাটা বাজারে গেলে সেখানে তিনি হামলার শিকার হন।

ইস্কান্দার মারা যাওয়ার আগে হামলার ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন দাবি করে নিপা বলেন, 'বাবার চাচাত ভাইরা আরও কয়েকজনক সঙ্গে নিয়ে মেরেছে। বাবা আমাকে বলেছে। খলিল খা, ফারুখ খা, আনিস খা, বিল্লাল খা, শাকিল খা, নাজমুল খা, আয়নাল সরদার, আকরাম খা, দীন ইসলাম খা, দিদার খা, শাকিল, কাইয়ুম খা সবাই মিলে বাবাকে মেরেছে। সবাই মিলে প্রথমে বাবার দুই হাত বেঁধেছে, পরে দুই পা বেঁধেছে। চাইনিজ কুড়াল দিয়ে পায়ে কুপিয়েছে। দুই হাতে পিটিয়ে কিছু রাখেনি। তিনজনে মিলে বাবাকে ধরছে, পাঁচজনে কুপিয়েছে আর পিটিয়েছে। বাবাকে বলেছিল, তোকে আমরা ছাড়ব না। তুই দলিল খাবি, তুই জমি খাবি। তোকে এখন জন্মের মতো জমি খাওয়াব।'

এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ইস্কান্দারের চাচাত ভাই আবু বক্কর খা। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ভাইয়ের ওপর হামলা হয়েছে শুনে দৌড়ে তাকে উদ্ধার করতে যাই। তখন হত্যাকারীরা আমাকেও পেটায়।'

যাদের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ উঠেছে, তাদের কাউকে বাড়িতে গিয়ে পাওয়া যায়নি। এ ঘটনার পর থেকে তারা সবাই পলাতক বলে স্থানীয়রা জানান।

তবে অভিযুক্ত ফারুক খা'র বড় বোন মজলিস খার মেয়ে মাজেদা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার ভাই ঘটনার দিন এখানে ছিলেন না। তিনি পাট বেচতে গিয়েছিলেন। শুধু শুধু আমার ভাইকে ফাঁসানো হচ্ছে।'

ফারুক কোথায় আছেন, তাও জানাতে পারেননি তিনি। এমনকি ফারুকের ফোন নম্বর দিতেও অস্বীকার করেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে মাদারীপুরের পুলিশ সুপারকে ফোন দেওয়া হলে তিনি দ্য ডেইলি স্টারের সাংবাদিক পরিচয় পাওয়া মাত্র ফোন কেটে দেন। পরে কয়েকবার ফোন দিলেও ফোন ধরেননি তিনি। জেলার অ্যাডিশনাল এসপিও ফোন ধরেননি। ওসিকে ফোন দিলেও তিনি ফোন কেটে দেন।

নিহতের পরিবার জানায়, মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ইস্কান্দারের মরদেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি।

কালকিনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হাসান গতকাল শনিবার বিকেলে মুঠোফোনে দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছিলেন, জমিজমা নিয়ে বিরোধের কারণে চাচাত ভাইদের হাতে ইস্কান্দার নিহত হয়েছেন।

 

Comments

The Daily Star  | English
Bangladeshi-Americans eager to help build new Bangladesh

July uprising and some thoughts of Bangladeshi-Americans

NRBs gathered in New Jersey showed eagerness to assist in the journey of the new Bangladesh forward.

5h ago