শীতের ছুটিতে ঘুরে আসুন ভোলার ৫ দর্শনীয় স্থান

ভোলা
নয়নাভিরাম ভোলা। ছবি: সাজেদুর আবেদীন শান্ত

দ্বীপ জেলা ভোলা। মেঘনা নদীর রুপালি ইলিশ, সবুজ বনে দুরন্ত হরিণ, পাখিদের ঝাঁক, মহিষের বাথান- কী নেই এখানে! পর্যটকদের জন্য একদম আদর্শ ঘোরার জায়গা বলা চলে একে। বিশেষ করে শীতের সময় চরের সৌন্দর্য ভোলাকে অনন্য রূপ দান করে।

হাতে যদি দুই থেকে তিন দিন সময় থাকে তাহলে ঘুরে আসতে পারেন ভোলা থেকে।

স্বাধীনতা জাদুঘর

তরুণ দ্বীপবাসীর কাছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরতে ভোলার বাংলাবাজার এলাকায় স্বাধীনতা জাদুঘর গড়ে তোলা হয়েছে। ভোলা বাসস্ট্যান্ড থেকে এর দূরত্ব মাত্র ৮ কিলোমিটার। ১০ টাকা অটোরিকশা ভাড়া দিয়ে এখানে যাওয়া যায়।

ভোলা
স্বাধীনতা জাদুঘর। ছবি: সাজেদুর আবেদীন শান্ত

স্বাধীনতা জাদুঘরটি খুবই নান্দনিকভাবে সুসজ্জিত করা। জাদুঘরে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধের দুর্লভ ছবিসহ নানা তথ্য রয়েছে। জাদুঘরের প্রথম তলায় রয়েছে বঙ্গভঙ্গ, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, দেশভাগ, ভাষা আন্দোলনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাসের নিদর্শন। দ্বিতীয় তলায় ৫২ এর ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়ের ধারাবাহিক ইতিহাসের নিদর্শন। আর তৃতীয় তলায় রয়েছে স্বাধীনতা পরবর্তী ইতিহাস-ঐতিহ্য।

ফাতেমা খানম মসজিদ

স্বাধীনতা জাদুঘরের একদম পাশেই এ মসজিদ অবস্থিত। পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে এক একর জমির ওপর নির্মিত মসজিদটি খুবই দৃষ্টিনন্দন।

ভোলা
ফাতেমা খানম মসজিদ। ছবি: সাজেদুর আবেদীন শান্ত

আধুনিক স্থাপত্যরীতি ও ইসলামি সংস্কৃতিতে পরিপূর্ণ এ মসজিদ। বিভিন্ন ধরনের পাথর ও টাইলস দিয়ে সুসজ্জিত। মসজিদের ভেতর দৃষ্টিনন্দন ঝাড়বাতি লাগানো। মসজিদে প্রধান একটি বড় গম্বুজসহ চারপাশে চারটি ছোট গম্বুজ রয়েছে। এখানে একসঙ্গে আড়াই হাজার মানুষ নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদের মূল গেট থেকে মসজিদ পর্যন্ত সবুজ ঘাসে আচ্ছাদিত।

জ্যাকব টাওয়ার

ভোলা বাসস্ট্যান্ড থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে চরফ্যাশান উপজেলায় ১৭ তলা বিশিষ্ট  এই ওয়াচ টাওয়ার অবস্থিত। ভোলা সদর থেকে জনপ্রতি ১৮০ টাকা বাস ভাড়ায় এখানে যাওয়া যায়।

জ্যাকব টাওয়ারের ১৭ তলা থেকে বাইনাকুলারের মাধ্যমে প্রায় ১০০ বর্গকিলোমিটারের ভেতর নৈসর্গিক সৌন্দর্যসহ ভোলার আশপাশ সুস্পষ্টভাবে দেখা যায়। প্রতি তলায় ৫০ জন করে মোট ৫০০ জন একসঙ্গে টাওয়ারে অবস্থান করতে পারবে। টাওয়ারের ভেতরেই বিশ্রাম, প্রাথমিক চিকিৎসাসহ খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। টাওয়ারটিতে প্রবেশ করতে জনপ্রতি ১০০ টাকার টিকিট লাগে।

চর কুকরি-মুকরি

চর কুকরি-মুকরি ভোলার একটি অনন্য দর্শনীয় স্থান। এখানে সবুজ বনে দুরন্ত হরিণের ছুটে চলা ও বানরের প্রাণচঞ্চল খেলা উপভোগ করতে পারবেন। এ ছাড়াও চরে গরু-মহিষের বাথান, বক, শঙ্খচিলের ঝাঁক দেখা যায়। শীতকালে বিভিন্ন অতিথি পাখির আগমনে ভরে উঠে চর। এটি বাংলাদেশের বন্যপ্রাণীর অন্যতম অভয়াশ্রম। এখান থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত উপভোগ করা যায়। তাঁবু করে ক্যাম্পিংয়ের সুযোগ রয়েছে।

চর কুকরি-মুকরি
চর কুকরি-মুকরি। ছবি: সাজেদুর আবেদীন শান্ত

ভোলা সদর থেকে ১৬০ কিলোমিটার দূরে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে মেঘনা নদীর মোহনায় এ চর অবস্থিত। এখানে যেতে হলে প্রথমে বাসে বা সিএনজিচালিত অটোরিকশায় আসতে হবে চরফ্যাশন। সেখান থেকে জনপ্রতি ৫০ টাকা বাস ও ৬০ টাকা অটোরিকশায় যেতে হবে দক্ষিণ আইচায়। সেখান থেকে ২০ টাকা দিয়ে ঘাটে, ঘাট থেকে স্পিডবোটে ১৫০ টাকা ও ট্রলারে ৮০ টাকায় চর কুকরি-মুকরি যাওয়া যায়।

মনপুরা

মনপুরায় যাওয়ার উপযুক্ত সময় শীতকাল। শীতকালে মনপুরায় ক্যাম্পিং বাড়তি আনন্দের খোরাক দেবে। সবুজ ঘাসের ফাঁকে হরিণের পাল দেখার সুযোগ এখানেই পাবেন। বিস্তৃত পুকুর লেক পাড়, সারি সারি নারকেল গাছ আর সূর্যাস্ত আপনাকে মুগ্ধ করবেই।

মনপুরা দ্বীপ
মনপুরা দ্বীপ। ছবি: ইউএনবি

ঢাকা থেকে লঞ্চে সরাসরি মনপুরা যাওয়া যায়। তবে ভোলা থেকে যেতে হলে লঞ্চে যেতে হবে। ভোলার তজুমদ্দিন ঘাট থেকে প্রতিদিন বিকেল ৩টায় মনপুরার উদ্দেশে ফেরি চলাচল করে ও মনপুরা থেকে সকাল ১০ টাকায় ভোলার উদ্দেশে ছেড়ে আসে। এ ছাড়াও চরফ্যাশানের বেতুয়া ঘাট থেকে মনপুরায় ১৮০ টাকা ভাড়ায় দুটি লঞ্চ যাতায়াত করে।

ঢাকা থেকে যেভাবে ভোলা যাবেন

দ্বীপ জেলা হওয়ায় ঢাকা থেকে ভোলা যাওয়ার সরাসরি কোনো বাস বা ট্রেন নেই। এক্ষেত্রে একমাত্র উপায় হচ্ছে লঞ্চ। ঢাকা সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে বিভিন্ন সময়ে ভোলার উদ্দেশে বিভিন্ন লঞ্চ ছেড়ে যায়। এরমধ্যে আছে দোয়েল, এমভি ক্রিস্টাল, শ্রীনগর ৭ এম ভি গাজী সালাউদ্দিন ইত্যাদি। এগুলো ঢাকা থেকে দুপুর ৩টায় ছেড়ে সন্ধ্যা ৭টা ৩০ থেকে ৮টার মধ্যে ভোলা ইলিশা ঘাটে পৌঁছায়। ইলিশা ঘাট থেকে সকাল ৮টায় ছেড়ে দুপুর ১টা-২টার মধ্যে ঢাকা পৌঁছায়।

কোথায় থাকবেন

ভোলায় থাকার জন্য ক্রিস্টাল-ইন, প্যাপিলন, কর্ণফুলীর মতো বেশ কিছু হোটেল। এগুলোতে এক হাজার থেকে তিন হাজার টাকায় রাতযাপন করা যায়। চাইলে অনলাইনে আগেভাগেই রুম বুকিং দেওয়া যায়।

মনপুরায় থাকার জন্য রয়েছে সরকারি ও বেসরকারি বেশ কিছু অতিথিশালা। এগুলোতে জনপ্রতি ২০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকায় থাকা যায়।

যা খাবেন

ভোলার তুলাতুলি পর্যটন কেন্দ্রে গিয়ে মেঘনার রুপালি ইলিশের বারবিকিউ আর তার সঙ্গে খিচুড়ি খেতে পারেন। এ ছাড়াও ভোলার বিখ্যাত ২০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী মহিষের দই ও শংকর দত্তের মিষ্টি খেতে পারেন। স্বাদ নিতে পারেন মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীর পোয়া, কোরাল, চিংড়ি, পাঙাশসহ নানা রকম মাছের।

Comments

The Daily Star  | English

Beximco workers' protest turns violent in Gazipur

Demonstrators set fire to Grameen Fabrics factory, vehicles, vandalise property

1h ago