৫ বছরে চতুর্থ সংসদ সদস্য পেতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম-৮
আগামী বছরের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনের ভোটাররা পাঁচ বছরের মধ্যে চতুর্থবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত করতে যাচ্ছেন।
২০০৮ সালের নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের নির্বাহী সভাপতি মাঈন উদ্দিন খান বাদলকে মনোনয়ন দেওয়া হলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা অসন্তুষ্ট হন, কিন্তু দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নেন।
এরপর ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনেও বাদলকে জোট থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। বাদল ২০০৮ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে টানা তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তাই এই আসনের ভোটাররা এক দশকেরও বেশি সময় ধরে একই আইনপ্রণেতাকে বারবার পেয়েছেন।
তবে, ২০১৯ সালের ৭ নভেম্বর বাদলের মৃত্যুর পর পরিস্থিতি বদলে যায় । ২০২০ সালের ১২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তাদের চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ইউনিটের সভাপতি মোসলেম উদ্দিন আহমেদকে মনোনয়ন দেয়। উপনির্বাচনে জয়ী হয়ে সংসদ সদস্য হন মোসলেম উদ্দিন।
তিন বছর পর, এই বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মোসলেম উদ্দিন মারা গেলে সংসদীয় আসনটি আবারও শূন্য হয় এবং ২৭ এপ্রিল অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ চট্টগ্রাম মহানগর ইউনিটের সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদকে মনোনয়ন দেয়। নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সংসদ সদস্য হন নোমান।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এই আসনে নোমানকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়। তিনি রিটার্নিং অফিসারের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন এবং তাকে নির্বাচনে বৈধ প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়। কিন্তু প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী বোঝাপড়ার অংশ হিসেবে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর জন্য আসনটি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
আর এতেই আপাতত এ আসনে নোমানের অধ্যায় শেষ হলো।
এ আসনে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান সোলায়মান আলম শেঠ মনোনয়ন দিয়েছে। এ আসনে একটি স্বতন্ত্রসহ নয়টি দলের ১০ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও ভোটারদের মতে, ভোটের লড়াই হবে মূলত সোলায়মান ও আবদুচ সালামের মধ্যে।
সালাম চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) সাবেক চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির কোষাধ্যক্ষ। তিনি দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন কিন্তু না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নেন।
সূত্র জানায়, এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ১০ প্রার্থীর কেউই এর আগে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হননি। সুতরাং, ভোটাররা যাকেই নির্বাচিত করুক না কেন, এখানে একজন নতুন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবেন।
বোয়ালখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল আমিন চৌধুরী বলেন, 'নোমান যদি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতেন এবং নির্বাচিত হতেন, তাহলে তিনি তার বর্তমান মেয়াদের প্রায় এক বছরের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে পারতেন।'
তিনি বলেন, 'দীর্ঘদিন ধরে আমরা এই আসনে দলের একজন সংসদ সদস্য থেকে বঞ্চিত ছিলাম কিন্তু মোসলেম উদ্দিন আহমেদ এবং এরপর নোমান আল মাহমুদ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় উপজেলায় দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়। কিন্তু এবার আবার অন্য দলের প্রার্থীর সমর্থনে দলীয় প্রার্থী প্রত্যাহার করা হয়েছে।'
তিনি বলেন, 'যদিও এটি আমাদের কাছে অপ্রত্যাশিত ছিল, তবে দলীয় প্রধান যা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, আমরা তা মেনে নিচ্ছি।'
সূত্র জানায়, এ আসনে জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক শক্তি খুব একটা শক্তিশালী নয়, তাই স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জাতীয় পার্টির প্রার্থীর পক্ষে কাজ না করলে তার জয় কঠিন হয়ে পড়বে।
যোগাযোগ করা হলে বোয়ালখালীর স্থানীয় বাসিন্দা ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম বলেন, কোনো নির্বাচনী এলাকায় কম সময়ের মধ্যে বারবার সংসদ সদস্য পরিবর্তন হলে পরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়।
তিনি বলেন, 'নোমান আল মাহমুদ প্রায় এক বছর সংসদ সদস্য হিসেবে এলাকার মানুষের নাড়ি বুঝতে পেরেছেন, তাই তিনি নির্বাচনে থাকলে ভালো হতো। তবে দল যা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা মেনে নিতে হবে।'
তিনি বলেন, 'তবে আসন ছেড়ে দেওয়া হলেও অন্য দলের প্রার্থীকে বিজয়ী করার জন্য কাজ করতে দল থেকে কোনো নির্দেশনা এখনো পর্যন্ত দেওয়া হয়নি।'
সূত্র জানায়, স্বতন্ত্র প্রার্থী ও আওয়ামী লীগ নেতা আবদুচ সালামের পক্ষে যদি স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কাজ করে, তবে এই আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর বিজয়ী হওয়া কঠিন হবে।
তবে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সোলায়মান আলম শেঠ আশা করছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তার জয়ের জন্য কাজ করবেন।
তিনি বলেন, 'আওয়ামী লীগের এখানে কোনো প্রার্থী নেই, তাই তাদের কোনো সুনির্দিষ্ট পছন্দও নেই। আমি অত্যন্ত সম্মানিত বোধ করছি যে, প্রধানমন্ত্রী আমার জন্য আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রত্যাহার করেছেন এবং তাই আমি মনে করি, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা আমার বিজয়ের জন্য কাজ করবেন।'
স্বতন্ত্র প্রার্থী সালাম সম্পর্কে তিনি বলেন, 'নির্বাচনে যে কেউ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। তিনি আরও বলেন, 'ভোটের মাঠে আমি একজন খেলোয়াড়, আর আমি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিততে চাই না।'
বারবার চেষ্টা করেও ফোনকল রিসিভ না করায় সালামের সঙ্গে তার মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করা যায়নি।
Comments