দুর্বল প্রতিষ্ঠানের শেয়ারে বাজিমাত, ভালোগুলোয় ক্ষতি

পুঁজিবাজার
ছবি: সংগৃহীত

খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার গত এক বছরে ১০ গুণ বেড়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটি লোকসানে আছে। অডিটে প্রতিষ্ঠানটির সম্পদের অস্তিত্ব নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।

মাত্র আট মাসের মধ্যে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম নয় টাকা ৯০ পয়সা থেকে বেড়ে সাড়ে ৯৭ টাকা হয়। ২০২৩ সালে সব শেয়ারের মধ্যে এটিই সবচেয়ে বেশি বেড়েছে।

তবে দেশের প্রধান পুঁজিবাজারে এ ধরনের ঘটনা শুধু খান ব্রাদার্সই একমাত্র নয়।

নতুন তালিকাভুক্ত বিমা কোম্পানি ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইনসিওরেন্স লিমিটেডের শেয়ার প্রায় পাঁচ গুণ বেড়ে ৫১ টাকা হয়েছে। এটি ২০২৩ সালে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বৃদ্ধি।

এরপরে আছে 'জেড' ক্যাটাগরির আরএন স্পিনিং মিলস। এর শেয়ারের দাম বেড়েছে তিনগুণ। 'বি' ক্যাটাগরির খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেডের শেয়ারের দাম বেড়েছে তিনগুণ।

অপর 'বি' ক্যাটাগরির প্রতিষ্ঠান এফএআর কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ ও এমারেল্ড অয়েলের শেয়ারের দামও তিনগুণ বেড়েছে।

শ্যামল ইকুইটি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাজেদুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সারা বছর ভালো মুনাফা করে এবং মৌলভিত্তিসম্পন্ন সব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম একই জায়গায় আটকে আছে।'

তিনি আরও বলেন, 'তাই, বিনিয়োগকারীরা অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রতিষ্ঠানের শেয়ারগুলো কিনছেন। আমরা যদি তাদের দুর্বল প্রতিষ্ঠানের শেয়ার না কেনার পরামর্শ দিই, তাহলে তারা বিরক্ত হন, বিশেষ করে যখন দেখেন যে এই দুর্বল শেয়ারগুলোর দামই বাড়ছে।'

সাজেদুল ইসলামের মতে, মানুষ টাকা আয় করতে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেন। তারা ব্রোকারদের পরামর্শ মানেন না। বেশি লাভের আশায় তারা দুর্বল প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার খোঁজেন।

ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সহ-সভাপতি ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়া হলে দুর্বল প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার কেনা ব্যক্তিরা টাকা হারাবেন।'

২০২২ সালের জুলাইয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) করোনা মহামারির কারণে শেয়ারের দাম কৃত্রিমভাবে ধরে রাখতে প্রতিটি শেয়ারের 'ফ্লোর প্রাইস' নির্ধারণ করে।

গত বছরের ডিসেম্বরে সংস্থাটি পর্যায়ক্রমে ১৬৯ প্রতিষ্ঠানের জন্য এই ব্যবস্থা তুলে নিয়েছিল। তবে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা চলমান থাকায় গত মার্চে আবার 'ফ্লোর প্রাইস' বেঁধে দেওয়া হয়।

চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ারপ্রতি আয় হয় শূন্য এক পয়সা।

গত ৩০ জুন শেষ হওয়া অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির অডিট প্রতিবেদনে এর আর্থিক প্রতিবেদন নিয়ে নানা আপত্তির কথা বলা হয়েছে।

অডিটরের মতামত হলো—প্রতিষ্ঠানটির কাঁচামাল ও তৈরি পণ্যের ঘাটতির পরিমাণ ৪০ কোটি টাকা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মার্চেন্ট ব্যাংকের কর্মকর্তা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যখন এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম অনেক বেড়ে যায়, তখন বুঝতে হরে বাজারে গুরুতর সমস্যা আছে। নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কাজে আসছে না।'

তার মতে, 'ফ্লোর প্রাইস পুঁজিবাজারকে কারসাজির সেরা জায়গা করে তুলেছে।'

সংশ্লিষ্টদের মতে, যেহেতু ফ্লোর প্রাইসের কারণে ভালো শেয়ারগুলোর দাম এখন স্থির আছে তাই বিনিয়োগকারীরা এখন সেইসব শেয়ার কেনার দিকে চোখ রাখছেন যেগুলো নিয়ে নানা গুজব চলছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণের কারণে কারসাজি করা সহজ হয়ে যায়।

সেই কর্মকর্তা আরও বলেন, 'এসব কারণে অনেক বিনিয়োগকারী হয়তো স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস ও গ্রামীণফোনের মতো ভালো প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের কথা ভুলেই গেছেন।'

'প্রকৃত বিনিয়োগকারীরা বাজারটিকে "মৃত" বিবেচনা করায় বাজারে লেনদেন এখন তলানিতে নেমে এসেছে। ফলে সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান, মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসগুলো খরচ চালাতেই হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে। অনেকে চাকরি কাটছাঁট করছে।'

'যতটুকু লেনদেন হচ্ছে তারও বেশিরভাগ লেনদেন অল্প প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে চলতে থাকায় আমরা খরচ কমাতে বাধ্য হচ্ছি,' যোগ করেন তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সম্পদ ব্যবস্থাপক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ব্লু-চিপ শেয়ারগুলোর দাম কম বা কয়েক মাস ধরে আটকে থাকা এবং দুর্বল প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারের দাম বেড়ে যাওয়া বাজারের জন্য ভালো লক্ষণ নয়।'

তিনি মনে করেন, 'এটি নিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দিচ্ছে। তাদের আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে অনেক সময় লাগবে।'

সবচেয়ে বড় কথা, পুঁজিবাজার এখন 'কারসাজির অপর নাম' হয়ে দাঁড়িয়েছে।

'কারসাজি-কেন্দ্রিক শেয়ার লেনদেন ছাড়া কোনো লেনদেন নেই' বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইনসিওরেন্সের মুনাফা বৃদ্ধিকে বিবেচনায় নিলে এটি দুর্বল প্রতিষ্ঠান নয়। তবে এর অডিটর জানিয়েছেন যে, এটি শ্রমিকদের কল্যাণ তহবিল গঠন না করে সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন করেছে।

গত জুলাই-সেপ্টেম্বরে আরএন স্পিনিং মিলসের শেয়ারপ্রতি আয় ছিল শূন্য দশমিক দুই পয়সা।

প্রতিষ্ঠানটির অডিটর গত চার বছর ধরে ১৩২ কোটি টাকার পুনরুদ্ধারযোগ্য বিমা তহবিল দেখিয়ে যাচ্ছে। যদিও টাকা ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা কম।

অডিটর জানান, ২০১৯ সালে আগুনের পর থেকে আরএন স্পিনিংয়ের উৎপাদনও বন্ধ আছে।

এ ছাড়াও, এ বছরের শেষ প্রান্তিকে লোকসানে পড়েছে খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং। গত অর্থবছরের অক্টোবর-ডিসেম্বরে এর ইপিএস ছিল শূন্য দশমিক ছয় পয়সা।

Comments

The Daily Star  | English

At least one woman raped nearly every 9hrs

Marium (not her real name) was only 10 years old when she was subjected to the horrors of sexual violence in 2018..A middle-aged man raped her in the slum she lives in..The child narrated the incident to her grandmother and a group of women, including a community activist..Her

1h ago