গাজীপুরে ট্রেন লাইনচ্যুত

গ্যাসকাটার দিয়ে রেললাইনের ২০ ফুট কেটে ফেলে দুর্বৃত্তরা

ট্রেন দুর্ঘটনা
ঘটনাস্থলের পাশ থেকে ওয়ার্কশপে ব্যবহৃত দুটি গ্যাস সিলিন্ডার উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথের গাজীপুরে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস লাইনচ্যুতের ঘটনাস্থলের পাশ থেকে ওয়ার্কশপে ব্যবহৃত গ্যাস সিলিন্ডার উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস।

উদ্ধারকৃত ২টি সিলিন্ডার রেললাইন কাটার কাজে ব্যবহার হয়েছে বলে ধারণা ফায়ার সার্ভিসের।

আজ বুধবার ভোর আনুমানিক সাড়ে ৪টার দিকে গাজীপুরের বনখড়িয়া ব্রিজের কাছে ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়। মোহনগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা ট্রেনটি চিলাই ব্রিজে আসা মাত্র ইঞ্জিনসহ ৭টি বগি লাইনের পাশের নিচু জমিতে পড়ে যায়।

গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক আব্দুল্লাহ-আল আরেফিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দুষ্কৃতিকারীরা রাতের কোনো একসময় অ্যাসিটিলিন পদ্ধতিতে গ্যাসকাটার দিয়ে লাইন কেটে রাখে। রাত ১১টায় মোহনগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা ট্রেনটি লাইনচ্যুত হলে ১ জন নিহত ও ১১ জন আহত হয়।'

ট্রেন দুর্ঘটনা
বুধবার ভোরে গাজীপুরের বনখড়িয়া ব্রিজের কাছে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হয়। । ছবি: সংগৃহীত

তিনি বলেন, 'রেললাইনের পাশ থেকে জঙ্গলের ভেতরে ওয়ার্কশপে ব্যবহৃত ১২ কেজি ওজনের গ্যাস সিলিন্ডার বোতল উদ্ধার করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে গ্যাস ব্যবহার করে কাটার দিয়ে রেললাইন কাটা হয়েছে।'

পুলিশ ও জেলা প্রশাসন জানায়, দুষ্কৃতকারীরা লাইনে ২০ ফুট অংশ কেটে ফেলায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফতেহ মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, 'রেললাইনের ২০ ফুট অংশ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এটি নাশকতা।'

দুর্ঘটনায় আহতদের উদ্ধার করে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ইনচার্জ আবু ফজল ডেইলি স্টারকে জানান, 'দুর্ঘটনায় একজন নিহত ও ১১ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে ৪ জন এবং ৭ জন চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন।'

নিহত আসলাম শেখ (৩৫) ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার ব্যবসায়ী ছিলেন।

তার ভাই মোকছেদুল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার ভাই কাঁচামাল নিয়ে ঢাকায় যাওয়ার জন্য গফরগাঁও স্টেশন থেকে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে উঠেছিলেন।'

আহতরা হলেন-ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার রফিকুল মোল্লা, (৩৫), জামিনা খাতুন (৩৫), কুমিল্লার সুরভী আক্তার (১৮), নেত্রকোনার রুপালি সাহা (৪০), বেলাল উদ্দিন (৪০), রওশন আরা (৩০), জলিল (৩৮), সুমন (২৫) ও রফিকুল (৩৫)।

আহত অপর দুজন হলেন-ট্রেনের লোকো মাস্টার ময়মনসিংহের বাসিন্দা এমদাদ হোসেন ও সহকারী লোকো মাস্টার নেত্রকোনার বাসিন্দা সবুজ।

হাসপাতালে ভর্তি আছেন রফিকুল, জামিনা, সুরভী ও রুপালী সাহা।

এদিকে, ট্রেন দুর্ঘটনার কারণে বিকল্প পথে ট্রেন চলাচল করছে। ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ রুটে চলাচলকারী সব ট্রেন ঢাকা-টঙ্গী হয়ে ভৈরব দিয়ে ময়মনসিংহে যাতায়াত করছে।

বিকল্প পথে চলা ট্রেনগুলো হলো-আন্তঃনগর তিস্তা এক্সপ্রেস, মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস, হাওড় এক্সপ্রেস, অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস,  ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস, যমুনা এক্সপ্রেস, বলাকা এক্সপ্রেস, দেওয়ানগঞ্জ কমিউটার ও মহুয়া এক্সপ্রেস।

টঙ্গী রেলওয়ে জংশনের রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ পরিদর্শক ছোটন শর্মা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটের সব ট্রেন ঢাকা থেকে টঙ্গী হয়ে কিশোরগঞ্জের ভৈরব দিয়ে ময়মনসিংহে যাতায়াত করছে।'

বিকেল ৫টার দিকে ঢাকা রেলওয়ে পুলিশের ওসি ফেরদৌস রহমান বিশ্বাস  দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি এখনো ঘটনাস্থলে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।'

এদিকে এ ঘটনায় উদ্ধার কাজ চলমান আছে। ঘটনা তদন্তে দুটি পৃথক কমিটি গঠন করা হয়েছে।

Comments