নাটোরে বিচারপ্রার্থীকে পেটালেন আইনজীবীরা

নাটোর আইনজীবী সমিতির নতুন ভবনে বিচারপ্রার্থীকে লাঠি দিয়ে মারধর করেন আইনজীবী ও তাদের সহকারীরা। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

নাটোরে তিন মক্কেলকে পেটালেন আইনজীবীরা। আজ রোববার দুপুর ২টার দিকে নাটোর আইনজীবী সমিতির নতুন ভবনে এঘটনা ঘটে। আইনজীবীদের হাতে বিচারপ্রার্থীকে মারধরের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

ভুক্তভোগী খালেকুজ্জামান লালন, সাইদুজ্জামান লিখন এবং আসাদুজ্জামান লিমন নাটোর লালপুর উপজেলার বাসিন্দা।

ভিডিওতে বেশ কয়েকজন আইনজীবী এবং তাদের সহকারীদেরকে লাঠি হাতে তিনজন বিচারপ্রার্থীকে বেধড়ক মারপিট করতে দেখা যায়।

আইনজীবী এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, লালপুরের পারিবারিক জমি নিয়ে মামলায় দুলাভাই এবং শ্যালকের মধ্যে বাগবিতন্ডা হয়। এক পর্যায়ে আইনজীবী শাহ মখদুম রূপশের মক্কেল আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে তার শ্যালক লালন, লিমন এবং লিখনের মধ্যে ধ্বস্তাধস্তি হয়। পরে আব্দুর রাজ্জাক আইনজীবী শাহ মখদুম রূপশকে গিয়ে নালিশ করেন যে তাকে তার মামলার বিবাদীরা মারধর করেছে।

ঘটনা শুনে আইনজীবী শাহ মখদুম রূপশ তার মক্কেলকে মারধরের বিষয়টি জানতে অ্যাডভোকেট দিনেশ চন্দ্র মন্ডলের মক্কেল লালন, লিমন এবং লিখনকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে গেলে শাহ মখদুম রূপশের সঙ্গে তর্কে জড়ায়। এ সময় অন্যান্য আইনজীবী এবং আইনজীবী সহকারীরা (মোহরার) লালন, লিমন এবং লিখনকে কিলঘুষি এবং লাঠি দিয়ে মারধর করেন।

শাহ মখদুম রূপশ বলেন, 'বিবাদী লালন তার দুলাভাই আব্দুর রাজ্জাককে চড়থাপ্পর দিয়েছেন। পরে লালনকে গিয়ে আমি বকাবকি করি কারণ সে (লালন) আমার বন্ধু। এতে হাসানুজ্জামান সৈকতসহ আরও আইনজীবী এবং তাদের সহকারীরা লালনকে মারধর শুরু করেন। আমি বাঁচাতে গিয়ে নিজেও আহত হয়েছি। বিষয়টাকে অপ্রত্যাশিত এবং মানসম্মানের ব্যাপার বলে মন্তব্য করেন তিনি।

অ্যাভভোকেট হাসানুজ্জামান সৈকত বলেন, 'আমার একজন সহকর্মীর সঙ্গে তার মক্কেলরা খারাপ ব্যবহার করছিলেন। আমাকেও দুইবার ধাক্কা দিয়েছেন। এ কারণে আমি আমার আইনজীবীর পক্ষে ডিফেন্স করেছি।'

ভুক্তভোগী খালেদুজ্জামান লালন বলেন, 'আমার বাবার মৃত্যুর পর দুলাভাই আব্দুর রাজ্জাক সম্পত্তির ভাগ চাইছেন। আমরা বলেছি বাবার কিছু ঋণ আছে সেটাও সবাইকে মিটাতে হবে। তিনি তাতে রাজি না হয়ে মামলা করেছেন। এসব বিষয় নিয়ে আমরা পরিবারের লোকজনই কথাবার্তা বলছিলাম। এ সময় মোহরার এবং আইনজীবীরা আমাদের উপর হামলা করে।'

এই বিষয়ে কোন অভিযোগ করেছেন কিনা জানতে চাইলে ভুক্তভোগী খালেদুজ্জামান লালন বলেন, আইনজীবীরা অনেক প্রভাবশালী। তাদের নামে বিচার চেয়ে আরও বিড়ম্বনায় পড়তে হবে। সেকারণে তারা কোনো অভিযোগ করবেন না।

নাটোর আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মালেক শেখ বলেন আইনজীবীরা যদি বিচারপ্রার্থীকে মারধর করে তাহলে ঘটনাটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। কেউ যদি এই বিষয়ে সমিতিতে অভিযোগ করে তাহলে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে তাদের লাইসেন্স বাতিলের জন্য বার কাউন্সিলে চিঠি দেওয়ার আশ্বাসও দেন এই আইনজীবী নেতা।

তিনি আরও বলেন, কিছুদিন আগেও এমন একটি ঘটনা ঘটেছিল। এসব বিষয় নিয়ে আইনজীবী সমিতি খুবই বিব্রত। আইনজীবীরা অন্যায় করলে সমিতি প্রশ্রয় দেবে না।

নাটোরের সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মিজানুর রহমান বলেন, আইনজীবী সমিতিতে মারধরের ঘটনা শুনে দ্রুত ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি। পরে আইনজীবীরা বলেছেন বিষয়টা মিটমাট করে দিয়েছেন।

 

Comments

The Daily Star  | English

Dhaka airport receives 2nd bomb threat

Operations at HSIA continue amid heightened security

2h ago