নাটোরে আইনজীবীদের বিরুদ্ধে বিচারপ্রার্থী ৩ শিক্ষককে মারধরের অভিযোগ

মানচিত্রে নাটোর
মানচিত্রে নাটোর। স্টার ফাইল ফটো

আইনজীবীর ফিস কম দেওয়াকে কেন্দ্র করে নাটোরে বিচারপ্রার্থী ৩ স্কুল শিক্ষককে মারধর করে আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নাটোর আইনজীবী সমিতির নতুন ভবন চত্বরে এই ঘটনা ঘটেছে।

ভুক্তভোগীরা বলেন, গ্রামের মসজিদ কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে বিবাদে বাগাতিপাড়ায় ৬ ভাইয়ের নামে মামলা হয়। আসামিদের মধ্যে ৩ ভাই স্কুলের শিক্ষক। তারা সবাই এখন জামিনে আছেন। তারা আজ আবার জামিন নিতে গেলে আইনজীবী মো. ময়নাল ইসলাম ১ হাজার টাকা ফিস চান। তারা ৫০০ টাকা দিতে চাইলে আইনজীবীর সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হয়। পরে ৪০-৫০ জন আইনজীবী এবং তাদের মোহরাররা ৩ ভাইকে মারধর করেন।

নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে তাদের ছোট ভাই বলেন, 'আইনজীবী ময়নাল মামলার যাবতীয় খরচ বাদ দিয়ে ১ হাজার টাকা ফিস দাবি করেন। অন্যান্য বারের মতো এবারও আমি ৫০০ টাকা নেওয়ার অনুরোধ করি। এতে ময়নাল ইসলাম মামলার নথিপত্র ছুড়ে ফেলে দিয়ে আমাদের গালিগালাজ করেন। এক পর্যায়ে তিনি ও তার সহকারী মিজান আমাদের কিলঘুষি মারতে শুরু করেন। পরে অন্যান্য আইনজীবী এবং তাদের সহকারীরাও মারধরে যোগ দেন।'

কান্নাজড়িত কণ্ঠে ওই স্কুলশিক্ষক বলেন, 'আমরা শিক্ষিত লোক, শিক্ষকতা করি। আমাদের সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটতে পারে ভাবতেও পারিনি। লজ্জায় আমাদের মুখ দেখানো কঠিন হয়ে গেছে।'

ভুক্তভোগী অপর ভাই বলেন, 'আমাদের ৩ ভাইয়ের নাকমুখ ফুলে গেছে। যদি আইনজীবীদের বিরুদ্ধে মামলা করি তাহলে কে আমাদের আইনি সহায়তা দেবে? সামান্য টাকার জন্য আমাদের মারধর করা হলো। পরে বাগাতিপাড়ার ফাগুয়ারদিয়ার ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম আমাদেরকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। নাটোর সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে এসেছি।'

অভিযুক্ত আইনজীবী মো. ময়নাল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাগাতিপাড়ায় একটি মারামারি মামলায় আসামি পক্ষের আইনজীবী ছিলাম। ছয় আসামীর জামিন করিয়েছি। বেইলবন্ডসহ আনুষঙ্গিক খরচ প্রায় ১ হাজার টাকা। কিন্তু তারা আমাকে ৪০০ টাকা দিতে চান। তারাই আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং গালিগালাজ করেন। পরে অন্যান্য আইনজীবী এবং মোহরাররা এসে তাদেরকে মারধর করেন। আমি কাউকে মারধর করিনি। ঘটনাটির জন্য আমি নিজেও লজ্জিত।'

নাটোর আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মালেক শেখ বলেন, মামলার ফিস কম দেওয়াকে কেন্দ্র করে আইনজীবী এবং বিচারপ্রার্থীর মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে বিচারপ্রার্থীরা আইনজীবীকে ধাক্কা দিলে উপস্থিত আইনজীবী এবং মোহরাররা তাদেরকে মারধর করেন। পরে স্থানীয় সাবেক জনপ্রতিনিধির জিম্মায় তাদের হস্তান্তর করা হয়।

ফাগুয়ারদিয়ার ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম শরিফ বলেন, 'আমাকে লোকজন জানায় যে আপনার এলাকায় লোকদের আইনজীবীরা মারধর করে আটকে রেখেছে। আমি তাদেরকে উদ্ধার করে নিয়ে আসি। ভুক্তভোগীদের পরে কোনো ক্ষতি হয় কি না আশঙ্কায় আইনজীবীরা আমার কাছে স্বাক্ষর চাইলে আমি স্বাক্ষর করে তাদের ছাড়িয়ে নিই।'

নাটোরের সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি রেজাউল করিম রেজা বলেন, আইনজীবীদের হাতে বিচারপ্রার্থীর লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। আইনজীবীরা সমাজে সম্মানিত মানুষ। তাদের কাছ থেকে এমন ঘটনা কাম্য নয়। এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়াতে বিষয়টি তদন্ত করে আইনজীবী সমিতির কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh transition from autocracy to democracy

Transitioning from autocracy to democracy: The four challenges for Bangladesh

The challenges are not exclusively of the interim government's but of the entire political class.

11h ago