জ্বালানি খাতে মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির দাবিতে ‘মানব প্রদর্শন’

চট্টগ্রামের সিআরবি চত্বরে জ্বালানি খাতে মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মালিকানায় নবায়নযোগ্য জ্বালানির দাবিতে ‘মানব প্রদর্শন’। ছবি: সংগৃহীত

জ্বালানির অধিকার সর্বজনীন মানবাধিকারের অবিচ্ছেদ্য অংশ হলেও, সে অধিকার নিশ্চিত করতে অনেকের জীবন-জীবিকাকে হুমকির মুখে ফেলে দেওয়া হচ্ছে বলে চট্টগ্রামে এক 'মানব প্রদর্শন' অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন বক্তারা।

তারা বলেন, নানা কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, বন্যা, তাপপ্রবাহ, খরা, মরুকরণ, সুপেয় পানির সংকট এবং গ্রীষ্মমন্ডলীয় সংক্রামক রোগের বিস্তারকে জলবায়ু পরিবর্তনের কিছু বিরূপ প্রভাব হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সারাবিশ্বে মানবাধিকারকে হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে এবং হুমকির মুখে পড়ছে জীবন-জীবিকার অধিকার, নিরাপদ পানীয় জল এবং স্যানিটেশন, খাদ্য, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, আত্মনিয়ন্ত্রণ, সংস্কৃতি, কাজ এবং উন্নয়ন। 

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস-২০২৩ উৎযাপন উপলক্ষে আজ শনিবার চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক সিআরবি চত্বরে জ্বালানি খাতে মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মালিকানায় নবায়নযোগ্য জ্বালানির দাবিতে অনুষ্ঠিত 'মানব প্রদর্শন' অনুষ্ঠানে এসব মন্তব্য করেন বক্তারা।

বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন আইএসডিই বাংলাদেশ, ক্যাব যুব গ্রুপ, বিডব্লিউজিইডি (বাংলাদেশ ওয়ার্কিং গ্রুপ ফর ইকোলজি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ও ক্লিনের (কোস্টাল লাইভলিহুড অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল অ্যাকশন নেটওয়ার্ক) যৌথ এই আয়োজনে সংহতি জানান আইএসডিই বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ও ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, জেলা সামাজিক উদ্যোক্তা পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ জানে আলম, ক্যাব সদরঘাটের সভাপতি শাহীন চৌধুরী, ক্যাব পাহাড়তলী থানা সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা হারুন গফুর ভুঁইয়া, ক্যাব যুব গ্রুপের সভাপতি আবু হানিফ নোমান, ক্যাব যুব গ্রুপের তানিয়া সুলতানা, মোহাম্মদ রায়হান, নিলয় বিশ্বাস এবং আবরারুল করিম নেহাল প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, পৃথিবীর বেশিরভাগ উন্নত দেশগুলো বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করছে। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো পরিবেশে ধ্বংস করে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে জমি অধিগ্রহণে স্থানীয় জনগোষ্ঠী যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, একইভাবে কর্মরত শ্রমিকেরাও নানাভাবে মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অধিগ্রহণে স্থানীয় জমির মালিকরা মধ্যস্বত্বভোগীদের দ্বারা প্রতারিত হচ্ছেন। বে-আইনি জমি অধিগ্রহণের কারণে অনেক পরিবার বাস্তুচ্যুত হচ্ছে এবং অনেক কৃষক এবং মৎস্যজীবীসহ অনেকেই তাদের পেশা পরিবর্তনে বাধ্য হচ্ছেন। যা সুস্পষ্ট মানবাধিকার লঙ্ঘন।

বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, বিদ্যুৎ সেক্টরে শ্রমিকদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বড় দৃষ্টান্ত হলো চট্টগ্রামের বাঁশখালির বিদ্যুৎকেন্দ্র। এস আলম গ্রুপ ও চীনের সেপকো ও এইচটিজি গ্রুপের মালিকানাধীন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের শ্রমিকরা বকেয়া মজুরি প্রদানসহ বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ করতে গিয়ে ২০১৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত পুলিশের গুলিতে ১২ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়াও, বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্ম-পরিবেশ একেবারেই অনুকূল নয়। নিজেদের সুরক্ষা সরঞ্জাম নিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রে কাজ করতে হয়, স্থানীয় শ্রমিকদের যেকোনো দুর্ঘটনায় অঙ্গহানি হলেও শুধু প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।

বক্তারা আরও বলেন, বাংলাদেশের জনসংখ্যার ৫০ দশমিক ৪ শতাংশ নারী গৃহকর্ম এবং কৃষিতে নিয়োজিত। স্থানীয় সংস্কৃতি অনুযায়ী, নারীরা রান্না-বান্না, শিশু এবং পরিবারের সদস্যদের যত্নে সরাসরি নিযুক্ত থাকেন। তারা পরিবারের প্রয়োজনেই সর্বোচ্চ পরিমাণ জ্বালানি ব্যবহার করেন। কিন্তু জ্বালানি পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন এবং বিতরণ কোথাও তাদের অংশগ্রহণ নেই। মাত্র ২-৪ শতাংশ হিসাবে জমির মালিকানা নারীদের হাতে থাকায়, বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকানায় নারীদের উপস্থিতি, তথ্য অধিকার এবং পরামর্শ গ্রহণের ক্ষেত্রে তাদের অংশগ্রহণ উপেক্ষিত। সূত্রানুযায়ী দেশের জীবাশ্ম জ্বালানি কোম্পানিগুলোতে মাত্র ৮ দশমিক ৩ শতাংশ শ্রমিক নারী এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর্যায়ে আছেন মাত্র শূন্য দশমিক ৯৩ শতাংশ নারী।

বক্তারা বলেন, কৃষিজমি বা বাস্তভিটায় আর কোনো জ্বালানি প্রকল্প গ্রহণ করা যাবে না, সাধারণ মানুষকে বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ করা যাবে না, অধিগ্রহণকৃতদের জায়গায় গৃহীত প্রকল্পের লভ্যাংশ তাদের নিয়মিত দিতে হবে, বিদ্যুৎকেন্দ্র সংক্রান্ত যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণে নির্মাণের পূর্বেই স্থানীয়দের অংশগ্রহণ ও তাদের মতামতের গুরুত্ব দিতে হবে, ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া, ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ ও বিতরণ এবং ক্রয় সংক্রান্ত কার্যক্রমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে, প্রকল্প বাস্তবায়নের বিভিন্ন পর্যায়ে সংঘটিত দুর্নীতির তদন্তপূর্বক সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে, সকল বিদ্যুৎকেন্দ্রে শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি বাস্তবায়ন করে তাদের মানবাধিকার নিশ্চিত করতে হবে, স্থানীয় পরিবেশের ক্ষতি করে কোনো প্রকল্প গ্রহণ করা যাবে না, নারী অধিকার রক্ষায়, যেকোনো জ্বালানি প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা কমিটিতে কমপক্ষে ৩০ শতাংশ নারী সদস্য মনোনীত করতে হবে, দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্পের ক্ষেত্রে ভূমি ইজারা নিতে হবে এবং জমির বার্ষিক ভাড়া প্রদানের সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।

এ ছাড়া, কৃষিভিত্তিক সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে অর্থায়নেরও দাবি জানান তারা।

Comments

The Daily Star  | English
changes in Bangladesh media industry

Allegiance shifts, so do faces at the helm

Bangladesh’s media industry has seen some major shake-ups, with more than two dozen outlets shuffling leadership positions following the July mass uprising last year.

18h ago