স্বর্ণার ৫ উইকেটে প্রোটিয়াদের মাটিতে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক জয়
ওপেনার মুর্শিদা খাতুনের ফিফটি ও অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতির আগ্রাসী ইনিংসে লড়াইয়ের পুঁজি পেল বাংলাদেশ। জবাবে দক্ষিণ আফ্রিকা নারী ক্রিকেট দল লক্ষ্যের দিকে ছুটে সুবিধাজনক অবস্থানে ছিল ১৭তম ওভার পর্যন্ত। এরপর লেগ স্পিনিং অলরাউন্ডার স্বর্ণা আক্তারের ঘূর্ণি জাদুতে পাল্টে গেল দৃশ্যপট। ক্যারিয়ারসেরা বোলিংয়ে তার শিকার করা ৫ উইকেটের কল্যাণে ঐতিহাসিক জয় পেল টাইগ্রেসরা।
রোববার বেনোনিতে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ১৩ রানে জিতেছে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। নির্ধারিত ২০ ওভারে তাদের ২ উইকেটে ১৪৯ রানের জবাবে স্বাগতিকরা পুরো ওভার খেলে থামে ৮ উইকেটে ১৩৬ রানে। এতে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে জ্যোতির দল।
দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে সব সংস্করণ মিলিয়ে বাংলাদেশের মেয়েদের এটাই প্রথম জয়। সব মিলিয়ে ১২ টি-টোয়েন্টিতে দ্বিতীয়বার তারা হারাল প্রোটিয়াদের। আগের জয়টি ছিল ২০১২ সালে মিরপুরে।
চলতি বছরের শুরুতে টি-টোয়েন্টি অভিষেক হওয়া স্বর্ণা নেন ফাইফারের মধুর স্বাদ। ৪ ওভারের কোটা পূরণ করে ৫ উইকেট নিতে তিনি দেন ২৮ রান। এই সংস্করণে বাংলাদেশের হয়ে ৫ উইকেট নেওয়া সর্বকনিষ্ঠ বোলারও (১৬ বছর ৩৩৬ দিন) তিনি। তিনি ছাড়া টি-টোয়েন্টিতে ৫ উইকেট নেওয়ার কীর্তি আছে বাংলাদেশের আর তিনজনের। নাহিদা আক্তার দুবার এবং পান্না ঘোষ ও জাহানারা খাতুন একবার করে ফাইফার পেয়েছেন।
লক্ষ্য তাড়ায় নেমে পাওয়ার প্লেতে বিনা উইকেটে ৫৪ রান তুলে ফেলেন দক্ষিণ আফ্রিকার ওপেনাররা। এরপর আন্নেকে বোশ ও ট্যাজমিন ব্রিটসের ব্যাটে লাগাম টেনে রান তোলার গতি কমিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। দশম ওভারে ভাঙে ৬৯ রানের উদ্বোধনী জুটি। রাবেয়া খান সাজঘরে পাঠান ২৬ বলে ৩০ করা প্রোটিয়া অধিনায়ক ব্রিটসকে। তখন থেকে শুরু হয় দলটির শক্ত অবস্থান থেকে পথ হারিয়ে ফেলা। আর বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়ায় দারুণ কায়দায়।
পরের ওভারে আনেরি ডের্কসেনকে বোল্ড করে দেন ফাহিমা খাতুন। জোড়া ধাক্কার পর বোশ ও সিউন লুস মিলে গড়েন প্রতিরোধ। ১০০ পেরিয়ে যায় স্বাগতিকদের সংগ্রহ। এরপর স্বর্ণা দেখাতে থাকেন একের পর এক ভেলকি। লুসকে বিদায় করে ৩২ রানের জুটির ইতি ঘটিয়ে বাংলাদেশকে দেন গুরুত্বপূর্ণ ব্রেক থ্রু। লুসের সংগ্রহ ১৯ বলে ১৮ রান।
শেষ ৩ ওভারে ২৮ রান দরকার পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকার। নিজের তৃতীয় ওভার করতে বল হাতে নেওয়া স্বর্ণা মাত্র ২ রান দিয়ে জোড়া শিকার ধরে তাদেরকে কাঁপিয়ে দেন। বাংলাদেশ বসে পড়ে চালকের আসনে। বিপজ্জনক বোশকে ক্যাচ বানানোর পর ননডুমিসো শাঙ্গাসেকে রানের খাতাই খুলতে দেননি স্বর্ণা। ৪১ বলে হাফসেঞ্চুরি পাওয়া বোশ থামেন ৬৭ রানে। ৪৯ বলের ইনিংসে তিনি মারেন ৯ চার ও ১ ছক্কা।
১৯তম ওভারে নাহিদা আক্তারও কেবল ২ রান দিয়ে আউট করেন এলিজ-মারি মার্ক্সকে। শেষ ওভারে ২৪ রানের ভীষণ কঠিন সমীকরণ আর মেলাতে পারেননি প্রোটিয়া নারীরা। প্রথম ও শেষ বলে দুটি চার হজমের মাঝে মেইকে ডি রিডার ও মাসাবাতা ক্লাসকে সাজঘরে পাঠান স্বর্ণা। পরপর দুই বলে পাওয়া ওই দুটি উইকেটে ফাইফার পূর্ণ হয়ে যায় তার।
এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৬২ রান করেন মুর্শিদা। টি-টোয়েন্টিতে এটি তার চতুর্থ ফিফটি। ৫৯ বল মোকাবিলায় তিনি মারেন ৬ চার ও ১ ছক্কা। চারে নামা জ্যোতি ৬ চারে ২১ বলে ৩৪ রানের ইনিংস খেলেন। অবিচ্ছিন্ন জুটিতে তারা যোগ করেন ৬৬ রান। এছাড়া, আরেক ওপেনার শামিমা সুলতানা ২৪ বলে ২৪ ও তিনে নামা সোবহানা মোস্তারি ১৭ বলে ১৬ রানে আউট হন।
Comments