রেমিট্যান্স নিয়ে ‘হ-য-ব-র-ল’

নভেম্বরে প্রবাসী আয়

দেশের কয়েকটি ব্যাংক ডলারপ্রতি সরকারি হারের চেয়ে অন্তত চার টাকা বেশি দিয়ে প্রবাসীদের কাছ থেকে রেমিট্যান্স আনার ক্ষেত্রে 'অসাধারণ' প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছে।

বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাফেডা) ও অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনানুষ্ঠানিক নির্দেশনা অনুযায়ী রেমিট্যান্স সংগ্রহের জন্য ডলারপ্রতি সর্বোচ্চ ১১৬ টাকা দেওয়ার শর্ত দিয়েছে।

তবে কয়েকটি ব্যাংক ডলারপ্রতি ১২০ থেকে ১২৫ টাকা দিয়ে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাফেদা-এবিবির বেঁধে দেওয়া বিনিময় হারের তুলনায় যেসব ব্যাংক বেশি টাকা দিচ্ছে সেসব ব্যাংক বেশি পরিমাণে রেমিট্যান্স পাচ্ছে।

গত ১ থেকে ১৭ নভেম্বরের মধ্যে ইসলামী ব্যাংক সর্বোচ্চ ২০ কোটি ৬০ লাখ ডলার, পূবালী ব্যাংক ১২ কোটি ২০ লাখ ডলার, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক ছয় কোটি ৬০ লাখ ডলার, ব্র্যাক ব্যাংক পাঁচ কোটি ২০ লাখ ডলার ও ইস্টার্ন ব্যাংক চার কোটি ৮০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এনেছে।

পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ আলী রেমিট্যান্স সংগ্রহে কোনো অনিয়মের কথা অস্বীকার করেছেন।

ব্যাংকটির নিয়মিত গ্রাহকদের 'উপহার' দেওয়ায় রেমিট্যান্সে উচ্চ প্রবৃদ্ধি এসেছে জানিয়ে তিনি বলেন, 'তারপরও ডলারের চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে অসামঞ্জস্য থেকেই গেছে।'

এ সময় রেমিট্যান্স হিসেবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে জনতা ব্যাংক পেয়েছে দুই কোটি ৯০ লাখ ২০ হাজার ডলার, সোনালী ব্যাংক পেয়েছে এক কোটি ৯৮ লাখ ৫০ হাজার ডলার, অগ্রণী ব্যাংক দুই কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার ও রূপালী ব্যাংক পেয়েছে ৩৩ লাখ ৪০ হাজার ডলার।

জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী আব্দুল জব্বার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যেসব ব্যাংক ডলারপ্রতি জন্য বেশি টাকা দিচ্ছে, সেসব ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন।'

'কিন্তু বাফেদা-এবিবির বেঁধে দেওয়া হার মেনে চলায় আমরা তা করতে পারছি না,' যোগ করেন তিনি।

চলতি মাসের প্রথম ১৭ দিনে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক রেমিট্যান্স পেয়েছে দুই কোটি নয় লাখ ৮০ হাজার ডলার, সিটি ব্যাংক পেয়েছে দুই কোটি ৫১ লাখ ৩০ হাজার ডলার ও প্রাইম ব্যাংক পেয়েছে ৩০ লাখ ৬০ হাজার ডলার।

তবে এই তিন ব্যাংকের কর্মকর্তারা ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, আগের মাসগুলোর তুলনায় এ মাসে রেমিট্যান্স সংগ্রহ অনেক কম।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী সৈয়দ মাহবুবুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ডলারের বাজারে এখন কারো কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।'

সংশ্লিষ্টরা বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে এমন হ-য-ব-র-ল পরিস্থিতির জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে দায়ী করেছেন। তাদের মতে, এমন পরিস্থিতি হুন্ডির ব্যবহার বাড়াতে সহায়তা করছে।

গত আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা ডলারের দাম নিয়ে কারচুপির অভিযোগে কয়েকটি ব্যাংক পরিদর্শন করে।

গত অক্টোবরে বাংলাদেশ ব্যাংক বেশি দামে ডলার বিক্রির দায়ে ১০ ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানকে জরিমানা করে।

ব্যাংক কর্মকর্তাদের মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই কঠোর উদ্যোগ ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স আসা কমিয়ে দিতে অবদান রেখেছে।

যেমন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ শিথিল করায় গত মাসে রেমিট্যান্স বেড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণে বাফেদা-এবিবি মডেল বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে অস্থিরতা কমাতে ব্যর্থ হয়েছে।'

তিনি মনে করেন, 'আমাদের মুদ্রা বাজারের জন্য এই মুহূর্তে ভাসমান বিনিময় হার খুবই প্রয়োজন। যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত একটি নিয়ন্ত্রিত ভাসমান বিনিময় হার চালু করা।'

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

13h ago