মোরসালিনের দুর্দান্ত গোলে লেবাননকে রুখে দিল বাংলাদেশ

বাংলাদেশ বনাম লেবানন

একটি মাত্র ভুল। সেটাই কাল হয়ে দাঁড়ালো বাংলাদেশের জন্য। অন্যথায় ম্যাচে সেরা দলটি ছিল বাংলাদেশই। দাপুটে ফুটবলে দারুণ কিছু সুযোগ তৈরি করেও ড্র মেনে মাঠ ছাড়তে হয় লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের। তাও সম্ভব হয়েছে শেখ মোরসালিনের জাদুতে। দুর্দান্ত এক গোলে দলকে সমতায় ফেরান এই ওয়ান্ডার বয়।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কিংস অ্যারেনায় ফিফা বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের ম্যাচে লেবাননের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করেছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয়ার্ধে লেবাননের পক্ষে গোলটি করেন মাজেদ ওসমান। এর কিছুক্ষণ পরই বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরান মোরসালিন

তবে এদিন ম্যাচের সেরা সুযোগগুলোতে গোল আদায় করে নিতে পারেনি বাংলাদেশ। গোলরক্ষককে একা পেয়েও হয়নি। ফিনিশিং আরেকটু ভালো হলে জয়টা পেতেই পারতো তারা। অথচ শক্তি-সামর্থ্যে বাংলাদেশের চেয়ে ঢের এগিয়ে লেবানন। র‍্যাঙ্কিংয়েও অনেকে গিয়ে।

এদিনের ম্যাচের দুই অর্ধের শুরুতে কিছুটা নড়বড়ে ছিল বাংলাদেশ। এছাড়া বাকি অংশে দাপট দেখিয়েছে জামাল ভুঁইয়ারা। বারবারই লেবানন শিবিরে কাঁপন ধরিয়ে দিচ্ছিলেন ফাহিম-মোরসালিনরা। কিন্তু আক্রমণগুলোর সুন্দর ফিনিশিং হলেই দিনটা বাংলাদেশের হতো। তবে কিংস অ্যারেনায় নিজেদের অপরাজিত যাত্রা ধরে রাখল দলটি।

ম্যাচের প্রথম ১৫ মিনিটে আধিপত্য বিস্তার করে খেললেও বাংলাদেশের রক্ষণভাগের দৃঢ়তায় তেমন কোনো জোরালো আক্রমণ করতে পারেনি লেবানন। দূরপাল্লার শটে চেষ্টা চালান। তবে এরপর ম্যাচ গোছাতে থাকেন জামালরা। পরের তিন মিনিটে তিনটি লম্বা থ্রো ও একটি কর্নারে বেশ চাপ সৃষ্টি করেন তারা। ধীরে ধীরে মাঝমাঠের দখলও নিতে শুরু করে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।

২৪তম মিনিটে প্রথম অনটার্গেট শট পায় বাংলাদেশ। জামালের কর্নার থেকে ডি-বক্স থেকে নেওয়া বিশ্বনাথের হেড ধরতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি লেবানন গোলরক্ষক মোস্তফা মাতারের। তবে পরের মিনিটে দারুণ একটি সুযোগ পায় বাংলাদেশ। বাঁ প্রান্ত দিয়ে এক খেলোয়াড়কে কাটিয়ে ডি-বক্সে বিপজ্জনক জায়গায় ঢুকে দেখে শুনে আগুয়ান সোহেল রানাকে পাস দিয়েছিলেন শেখ মোরসালিন। কিন্তু পেছন থেকে এসে দারুণ এক ট্যাকলে লেবাননকে রক্ষা করেন মোহাম্মদ এল হায়েক।

প্রথমার্ধের নির্ধারিত সময়ের শেষ মিনিটে ফের ভালো একটি সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। ডান প্রান্তে জামালের বাড়ানো বল থেকে বল থেকে ডি-বক্সে দারুণ এক ক্রস দিয়েছিলেন ফয়সাল আহমেদ ফাহিম। কিন্তু গোলমুখে বলে মোরসালিন ঠিকঠাক সংযোগ করতে না পারায় নষ্ট হয় সেই সুযোগ।

প্রথমার্ধের মতো দ্বিতীয়ার্ধের শুরুটাও ভালো হয়নি বাংলাদেশের। শুরুতেই অবশ্য ধাক্কা খায় তারা। চোটে পড়ে মাঠ ছাড়েন গোলরক্ষক মিতুল মার্মা। তার জায়গায় মাঠে নামেন মেহেদী হাসান শ্রাবণ। শুরুতে একটি ভুলও করেছিলেন এই গোলরক্ষক। বল ফিস্ট করতে এগিয়ে লাইন মিস করেছিলেন। তবে একেবারে ফাঁকা পোস্ট পেয়েও তা কাজে লাগাতে পারেননি কাসেম।

৫০তম মিনিটে আরও একটি ভালো আক্রমণ করে সফরকারীরা। ডি-বক্সে জটলায় কয়েক দফা শট নিয়েও জালের দেখা পায়নি তারা। হিলাল আলহেলে ও মোহাম্মদ হায়দারের শট ঠেকান বাংলাদেশের ডিফেন্ডাররা। এরপর করিম দারউইচের কোণাকোণি গোলরক্ষক শ্রাবণের গায়ে লেগে বেরিয়ে গেলে সে যাত্রা বেঁচে যায় বাংলাদেশ।

৫৪তম মিনিটে হাসান মাতুকের ক্রস তারিক কাজী না ঠেকালে ফাঁকায় বল পেতে পারতেন হিলাল। কর্নার থেকেও সুযোগ ছিল নাদের মাতারের। তবে তার শট লক্ষ্যে থাকেনি। পরের মিনিটে দারুণ সুযোগ ছিল মোরসালিনের। সোহেল রানার বাড়ানো বল ডি-বক্সে ঠিকঠাক নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেও গোল পেতে পারতেন। 

৬৮তম মিনিটে উল্টো রক্ষণের ভুলে গোল হজম করে বসে বাংলাদেশ। ডি-বক্সে সৃষ্টি জটলায় বল ধরতে এগিয়ে গিয়েছিলেন গোলরক্ষক শ্রাবণ। তবে বিশ্বনাথ হেডে ঠেকাতে গিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলেন। জটলা থেকে বাঁ প্রান্তে বল পেয়ে ফাঁকা পোস্টে বল পাঠান বদলি খেলোয়াড় ওসমান। 

৭১তম মিনিটে সেট পিস থেকে একেবারে ফাঁকায় হেড নেওয়ার সুযোগ পেলেও লক্ষ্যে রাখতে পারেনি বিশ্বনাথ। তবে পরের মিনিটে সমতায় ফেরে বাংলাদেশ। ডি-বক্সের বাইরে থেকে দুর্দান্ত এক শটে দূরের পোস্ট ঘেঁষে লক্ষ্যভেদ করেন মোরসালিন। 

সাত মিনিট পর আত্মঘাতী গোল হজম করতে যাচ্ছিল বাংলাদেশ। বিশ্বনাথের পায়ে লেগে বল জালের দিকেই গিয়েছিল। তবে শেষ মুহূর্তে একেবারে গোললাইন থেকে বল ধরে দলকে রক্ষা করেন গোলরক্ষক শ্রাবণ। ৭৮তম মিনিটে আলী আল হাজের কোণাকোণি শট কর্নারের বিনিময়ে ঠেকান শ্রাবণ।

নির্ধারিত সময়ের শেষ মিনিটে দিনের সেরা সুযোগটি পায় বাংলাদেশ। রবিউলের পাস থেকে রফিকের বাড়ানো বলে গোলরক্ষককে একা পেয়ে যান মোরসালিন। কিন্তু প্রথম ছোঁয়ায় বল ধরতে গিয়ে গড়বড় করে ফেলেন। পরে শট নিলেও তা পাশের জাল কাঁপায়। এরপরও সুযোগ ছিল বাংলাদেশের। তবে জালের দেখা না পেলে ড্র মেনেই মাঠ ছাড়তে হয় তাদের।

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

10h ago