আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৩

ট্রাভিস হেডের বীরত্বে অস্ট্রেলিয়ার ষষ্ঠ শিরোপা

আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে এক লাখ ৩২ হাজার দর্শকের মহাসমুদ্র স্তব্ধ করে দিয়ে ৬ষ্ঠবারের মতো বিশ্বকাপ জিতে নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। ভারতকে ফাইনালে ৬ উইকেটে হারানোর পথে  হেড ১২০ বলে করেন ১৩৭  রান। 

ট্রাভিস হেডের বীরত্বে অস্ট্রেলিয়ার ষষ্ঠ শিরোপা

অস্ট্রেলিয়ার ষষ্ঠ শিরোপা
ছবি: রয়টার্স

আগ্রাসী ইনিংসে গ্যালারি উত্তাল করা রোহিত শর্মার ক্যাচটা ধরে যখন ট্রাভিস হেড মোতেরায় নামান পিনপতন নীরবতা, ধারাভাষ্য কক্ষে ইয়ান স্মিথ তখন বলে ওঠেন, 'এটাই টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে।' তখন ৯.৪ ওভারে ভারতের রান ৭৬। ভারতের পুঁজি কম হওয়ার পেছনে রোহিতের এই আউট পরে হয় বড় প্রভাবক। তবে হেড আসল কাজ করলেন ব্যাটিংয়েই।

৪৭ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে কেঁপে ওঠা অস্ট্রেলিয়াকে টেনে চ্যাম্পিয়ন বানাতে বাঁহাতি ওপেনার ঠান্ডা মাথায় খেললেন দুর্দান্ত এক ইনিংস। চরম হতাশার মাঝেও এক পর্যায়ে ভারতীয় দর্শকরা দাঁড়িয়ে তালি দিলেন তাকে। চোটে পড়ে যার বিশ্বকাপ খেলাই ছিল অনিশ্চিত, সেই হেডই উঁচু করলেন অজিদের মাথা।

আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে রোববার এক লাখ ৩২ হাজার দর্শকের মহাসমুদ্র স্তব্ধ করে দিয়ে ষষ্ঠবারের মতো বিশ্বকাপ জিতে নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। ভারতকে ফাইনালে ৬ উইকেটে হারানোর পথে হেড ১২০ বলে করেন ১৩৭  রান।

Travis Head

এতে ফাইনালে এসেই থামল এবারের বিশ্বকাপের আয়োজকদের জয়রথ। টানা ১০ ম্যাচ জেতার পর রোহিতরা হারলেন শিরোপা নির্ধারণী মঞ্চে। অন্যদিকে, প্রথম দুই ম্যাচ হেরে আসর শুরু করা প্যাট কামিন্সবাহিনী টানা অষ্টম জয়ে উঁচিয়ে ধরল শিরোপা

অথচ চোটে পড়ে বিশ্বকাপই খেলা হচ্ছিল না হেডের। তাকে ভীষণ দরকার ভেবে অপেক্ষায় ছিল অজিরা। সেরে উঠে স্কোয়াডে ফিরলেন, ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ রাঙালেন। সপ্তম ব্যাটার হিসেবে বিশ্বকাপ ফাইনালে করলেন সেঞ্চুরি। চতুর্থ ক্রিকেটার হিসেবে বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল ও ফাইনালে হলেন ম্যাচসেরা। মজার কথা হলো, যার সঙ্গে জুটি গড়ে দলকে তীরে ভেড়ান,সেই মারনাস লাবুশেনেরও খেলার কথা ছিল না বিশ্বকাপ। অ্যাস্টন অ্যাগারের চোটে কপাল খোলে লাবুশেনের।

স্নায়ুচাপ জিতে হেড কিছু একটা করতে যাচ্ছেন, সেই আভাস শুরুতে দেন ফিল্ডিংয়ে। ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ৩১ বলে ৪৭ করা রোহিতের মহাগুরুত্বপূর্ণ উইকেট তার সৌজন্যেই নিতে পারে অজিরা। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে তখন গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের বল ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে ওড়াতে গিয়ে টাইমিং হয়নি ভারতের দলনেতার। কভারের দিকে উড়ে যাওয়া বল ধরতে কভার পয়েন্ট থেকে পেছনে ছোটেন হেড। চিতার গতিতে ছুটে ঝাঁপিয়ে ক্যাচ হাতের মুঠোয় নিয়েও বুঝিয়ে দেন অস্ট্রেলিয়ান 'ডিএনএ'।

travis head

পেছনে দৌড়ে বলকে নজর রাখা, শরীর জায়গামতো নিয়ে গিয়ে ক্যাচ লুফে ভারসাম্য রাখা- প্রতিটি কাজই ছিল কঠিন, সব হতে হতো নিখুঁত। কোনো ধাপেই বিন্দুমাত্র বিচ্যুতি হয়নি হেডের।

রোহিতের বিদায়ের পর ভারত তখনও বেশ ভালো অবস্থায়। কিন্তু ওই ক্যাচের পরই যেন চাঙা হয়ে ওঠে অস্ট্রেলিয়া। দারুণ সব ফিল্ডিং দেখা যায় মাঠজুড়ে। অনেকগুলো বাউন্ডারি আটকে দেন ডেভিড ওয়ার্নার, লাবশেনরা। মাঝের ওভারে ৯৭ বলে বিরাট কোহলি-লোকেশ রাহুলদের কোনো বাউন্ডারি বের করতে দেননি তারা। হতাশ হয়ে চাপ বেড়ে পরে পথ হারায় ভারত। 

মন্থর উইকেটে ২৪১ রান তবু ছিল না সহজ, রাতের আলোয় বল সুইং করবে শুরুতে, সেটা হয়ও। আগ্রাসী শুরুর মধ্যে জাসপ্রিত বুমরাহ, মোহাম্মদ শামির তোপে ৪৭ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে কেঁপে ওঠে অজিরা।

এই প্রবল চাপ কী অনায়াসেই না শুষে নেন হেড! লাবুশেনকে এক পাশে বসিয়ে ছুটতে থাকেন তরতর করে। আলগা বল পেলেও দুরন্ত শটে সীমানা ছাড়া করতে পিছপা হননি। রানরেটের চাপ ছিলই না, সেটা বুঝতে পেরে অহেতুক ঝুঁকির দিকে যাওয়ার দরকারও দেখেননি তিনি। 

৫৮ বলে ফিফটি ছোঁয়ার পর কুলদীপ যাদবের বলে সিঙ্গেল নিয়ে ৯৫ বলে হেড সেঞ্চুরিতে পৌঁছাতে ভারতীয় দর্শকরাও দাঁড়িয়ে যান। তালি দিয়ে তারা অভিনন্দিত করেন অজি বীরকে। ২০০৭ বিশ্বকাপের ফাইনালে সেঞ্চুরি হাঁকানো ওপেনার অ্যাডাম গিলক্রিস্টকে মনে করিয়ে দেন যেন তিনি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১০৪ বলে ১৪৯ রান করেছিলেন গিলক্রিস্ট।

লাবুশেনের সঙ্গে ১৯৫ রানের তৃতীয় উইকেট জুটিতে হেডেরই অবদান ১২৭। লাবুশেন সহায়ক ভূমিকায় থেকে টেস্ট মেজাজে করেন ১১০ বলে অপরাজিত ৫৮ রান। এতেই বোঝা যায় হেডের দাপট, হেডের প্রভাব। চলতি বছর ভারতের বিপক্ষেই টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ১৭৪ বলে ১৬৩ রান করে ম্যাচসেরা হয়েছিলেন তিনি। চোটের কারণে পাঁচ ম্যাচ বাইরে থাকার পর বিশ্বকাপ অভিষেকে খেলেন ৬৭ বলে ১০৯ রানের ইনিংস। এবার তার বিধ্বংসী ব্যাটিংয়েই শিরোপা উঠল অস্ট্রেলিয়ার হাতে।

Comments

The Daily Star  | English

A floating mosaic of guavas, baskets and people

During the monsoon, Jhalakathi transforms into a floating paradise. Bhimruli guava market comes alive with boats carrying farmers, buyers, and tourists.

10h ago