‘যাদের জনগণের ওপর বিশ্বাস নাই, তারাই নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করে যাচ্ছে’

‘যাদের জনগণের ওপর বিশ্বাস নাই, তারাই নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করে যাচ্ছে’
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা | ছবি: টেলিভিশন থেকে নেওয়া

জনগণের ওপর যাদের বিশ্বাস নেই তারাই নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আজ শনিবার সকালে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ কার্যালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

এ সময় শেখ হাসিনার পক্ষে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ গোপালগঞ্জ-৩ আসনের দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, 'বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এমন একটি সংগঠন, যে সংগঠনের জন্ম হয়েছিল দুঃখী মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের কথা চিন্তা-ভাবনা করে, শোষিত বঞ্চিত মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করবার জন্য। সেই ১৯৪৯ সালে এই সংগঠনের জন্ম।'

তিনি বলেন, 'জন্মলগ্ন থেকে আওয়ামী লীগ তার গঠনতন্ত্র মেনে চলে, দেশের সংবিধান মেনে চলে এবং প্রতিটি কাজ অত্যন্ত সুচারুভাবে করে। আজকেও এটা সকলে দেখবেন যে, আমাদের যারা প্রার্থী হবেন তারা এখন থেকে ফরম সংগ্রহ করবেন। আটটি বিভাগের জন্য আমরা ১০টি বুথ তৈরি করে দিয়েছি। এই কারণে যে, ঢাকা বিভাগ অনেক বড়, অনেক বেশি প্রার্থী হবে। সে জন্য ঢাকা বিভাগে দুটি আর চট্টগ্রাম বিভাগও বড়, তাই চট্টগ্রাম বিভাগের জন্য দুটি। এছাড়া প্রতিটি বিভাগীয়ভাবে আমরা এই ফরমগুলো বিক্রি করব।'

শেখ হাসিনা বলেন, 'আওয়ামী লীগ সব সময়, বোধ হয় বাংলাদেশে এই একটি রাজনৈতিক দল আপনারা দেখবেন, যারা অত্যন্ত সুগঠিতভাবে-সুন্দরভাবে প্রত্যেকটা কাজ করে থাকে। বিশেষ করে দলীয় কাজগুলো। আমরা সব সময় গঠনতন্ত্র মেনে এই কাজগুলো করি। আমাদের জাতীয় নির্বাচন সামনে, যেহেতু তফসিল ঘোষণা হয়ে গেছে, কাজেই আমরা যে ব্যবস্থাপনা করেছি, সেই ব্যবস্থাপনা সরেজমিনে দেখতে এসেছি।'

তিনি বলেন, 'আমরা চাই, যারাই প্রার্থী হোক; সবাই যোগ্য, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে একটা সিট, এটা নিতে হবে একজনকে। এই একজন বাছা, এটা বোর্ডের কাজ এবং আমরা তৃণমূল থেকেও মতামত নেই। আমাদের ওরকম একটা পদ্ধতি করা আছে। তৃণমূল থেকে আমাদের জানানো হয়, সেটা দেখে ও প্রার্থী দেখে আমরা প্রার্থী নির্বাচিত করব এবং তারপর নির্বাচনে আমরা অংশগ্রহণ করব।'

'আমরা ভেবেছিলাম যে, অন্যান্য দলগুলোও এভাবে নির্বাচনে আসবে। তবে যেসব দল নির্বাচনে আসার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাদেরকে সাধুবাদ জানাই, ধন্যবাদ জানাই। আর যাদের বোধ হয় মানুষের ওপর, জনগণের ওপর আস্থা নাই, বিশ্বাস নাই বা দল হিসেবে সুসংগঠিত না তারাই নির্বাচন বানচালের একটা চেষ্টা করে যাচ্ছে। অথচ একটা নির্বাচন বানচাল করলে একটা দেশের যে ক্ষতি হয়, সেটা হয়তো দুঃখজনক,' বলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।

তিনি আরও বলেন, 'নির্বাচন ঠেকানোর নামে এর আগে ২০১৩-১৪ সালে আমরা দেখেছি, অগ্নি সন্ত্রাসের কর্মকাণ্ড; বহু মানুষ আগুনে পুড়ে তাদের জীবন, আমি বলবো সব থেকে কষ্টের মধ্য দিয়ে তাদের চলতে হচ্ছে। আর যারা আপনজন হারিয়েছে, আমি তাদের প্রতি সহানুভূতি জানাই কিন্তু আমার কথা হচ্ছে যে, এটা কোন ধরনের রাজনীতি যে, অগ্নি সন্ত্রাস করে জাতীয় সম্পদ নষ্ট করা, ব্যক্তিগত সম্পদকে নষ্ট করা—এই ধ্বংসাত্মক কাজ করে নির্বাচন বানচাল করা, অর্থাৎ গণতান্ত্রিক ধারাটাকে ব্যাহত করতে চায়।

'এদের ব্যাপারে দেশের মানুষের কাছে আমার আহ্বান থাকবে, যারা এ ধরনের ধ্বংসাত্মক কাজ করছে, জাতীয় সম্পদ নষ্ট করছে, আগুন দিয়ে পোড়াচ্ছে, সাধারণ মানুষের ওপর তারা পেট্রল বোমা মারছে অথবা তাদের আগুন দিয়ে পোড়াচ্ছে, এদেরকে প্রতিরোধ করতে হবে দেশবাসীর,' আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।

তিনি আরও বলেন, 'জনগণের ভোটের অধিকার অনেক আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা প্রতিষ্ঠা করেছি এবং আমরা চাই, জনগণের এই ভোটের অধিকার অব্যাহত থাকবে এবং ভোটের মধ্য দিয়েই সরকার পরিবর্তন হবে। অতীতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর এ দেশে আমরা দেখেছি যে, রাতের অন্ধকারে বন্দুক হাতে নিয়ে ক্ষমতা দখলের পালা চলছিল। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে বৈধতা দেওয়ার জন্য জনগণের ভোট নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয়েছে।

'এর বিরুদ্ধে আমরা সংগ্রাম করেছি, আন্দোলন করেছি, আমাদের বহু নেতাকর্মী জীবন দিয়েছে, অত্যাচারিত হয়েছে, নির্যাতিত হয়েছে কিন্তু আমরা জনগণের ভোটের অধিকারটা প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি। আজকে, সেই ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত একটা গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলেই কিন্তু বাংলাদেশটার আর্থ-সামাজিক উন্নতি হয়েছে। আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি,' বলেন তিনি।

দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, 'যেন সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনটা হয়। আর নির্বাচন যারা বানচাল করতে চায়, অগ্নি সন্ত্রাস করে, মানুষকে পুড়িয়ে মারে, আমাদের এত সুন্দর রাস্তা-ঘাট; মেট্রোরেল থেকে শুরু করে থার্ড ট্রার্মিনাল—সব কিছু করে দিয়েছি, এগুলো যারা ধ্বংস করতে যাবে আমি জনগণকে আহ্বান করব, তাদেরকে প্রতিরোধ করতে। এই হরতাল ডেকে আজকে ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা নষ্ট। মানুষকে অত্যাচার করেই যেন এই বিএনপি-জামায়াত আনন্দ পায়। এটাই হচ্ছে সব থেকে দুর্ভাগ্যের বিষয়।'

তিনি আরও বলেন, 'নির্বাচন বানচাল করার যদি কেউ চেষ্টা করে আর যদি এই অগ্নি সন্ত্রাস অব্যাহত রাখে এর পরিণতি ভালো হবে না। যারা করবে, আমাদের দেশের মানুষই তাদের শাস্তি দেবে এবং দেশের মানুষকে আমি সেই আহ্বানটাই জানাচ্ছি। আজকের দিনে আমার এটাই আহ্বান, আমাদের অনেক কষ্টে অর্জিত এই গণতান্ত্রিক ধারাটা যেন কেউ ব্যাহত করতে না পারে।'

Comments

The Daily Star  | English

Fire breaks out at tissue warehouse in Narayanganj

Upon receiving the information, 19 firefighting units from various stations rushed to the scene and are currently working to bring the blaze under control

22m ago