হবিগঞ্জে আ. লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে তফসিল ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে আনন্দ মিছিলকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ১৫ জন আহত হয়েছেন।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নবীগঞ্জ শহরের নতুন বাজার এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে বুধবার রাতে নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের উদ্যোগে মিছিল বের হয়। নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গিয়াস উদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে সাধারণ সম্পাদক গতি গোবিন্দ দাশ, সাইফুল জাহান চৌধুরীসহ নেতাকর্মীরা মিছিল ও পথসভা করেন। পরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু সিদ্দিক ও উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক লোকমান খানসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী মিছিল ও পথসভায় যোগ দেন। পথসভা শেষে আবু সিদ্দিক উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে জানতে চান যে, তাদের রেখে কেন মিছিল শুরু করা হলো। এসময় নবীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জাবেদুল আলম চৌধুরী সাজু ও পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি সদস্য বাবলু আহমদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। পরে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়।
তারা জানান, এ ঘটনা মীমাংসার জন্য আজ সকালে নবীগঞ্জ শহরের শেরপুর রোডে আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মালিক মিয়ার অফিসে বৈঠকে বসেন উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা। এসময় তারা জাবেদুল আলম চৌধুরী সাজু ও বাবলু আহমদের বিরোধ মীমাংসা করে দেন। হঠাৎ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফুল জাহান চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ মিলুর মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। একপর্যায়ে উত্তেজনা দেখা দেয় এবং পরে উভয় পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।
ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু সিদ্দিক, পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বাবলু মিয়া, সঞ্জয় দাস, মিঠু শীল, সৌরভ তালুকদার, আনহার আহমদ, জিজু মিয়া ও জায়েদ মিয়াসহ উভয় পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হন।
খবর পেয়ে নবীগঞ্জ থানা পুলিশ শহরে অবস্থান নেয়। পরে বাহুবল-নবীগঞ্জ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আবুল খয়ের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এখনো শহরজুড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফুল জাহান চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রাতের বিষয়টি মীমাংসা করার জন্য নেতারা বসেন। বিষয়টি মীমাংসাও হয়ে যায়। এসময় মোস্তাক আহমেদ মিলুর সঙ্গে আমার উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। একপর্যায়ে সে পিস্তল বের করে আমার দিকে তাক করে। এ ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।'
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ মিলু ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বুধবার রাতের ঘটনা মীমাংসার সময় সাইফুল জাহান চৌধুরী উশৃঙ্খল কথাবার্তা বলেন, এ নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।'
পিস্তল বের করে তাক করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'সাইফুলের সঙ্গে আমার কোনো ঝামেলা নেই, আমি কেন পিস্তল বের করব।' অভিযোগটি সঠিক নয় বলেও দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গিয়াস উদ্দিন আহমদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বুধবার রাতের ঘটনাটি জেলা আওয়ামী লীগের নির্দেশনায় আমিসহ আওয়ামী লীগের নেতারা বসে সমাধান করে দেই। কিন্তু একপর্যায়ে আমাকে অমান্য করে কিছু নেতা তর্কে জড়িয়ে পড়েন, এরপর ঝামেলার সৃষ্টি হয়।'
মোস্তাক আহমেদ মিলুর পিস্তল বের করার বিষয়ে তিনি বলেন, 'আমি শুনেছি মিলু পিস্তল বের করেছে, তবে দেখিনি।'
এ প্রসঙ্গে নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাসুক আলী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বুধবার রাতে তফসিলকে স্বাগত জানিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগ একটি মিছিল বের করে। একটি পক্ষকে রেখে অপর পক্ষ মিছিল করায় বাগবিতণ্ডা হয় ও উত্তেজনা ছড়ায়। বৃহস্পতিবার সকালে আওয়ামী লীগ নেতারা বিষয়টি মীমাংসার জন্য বসেন, পরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।'
'আওয়ামী লীগ নেতার পিস্তল বের করার বিষয়টি আমার জানা নেই। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে', বলেন তিনি।
Comments