থানায় ঝুলন্ত মরদেহ

‘ধরেই মারধর করে নাক, কান থেকে রক্ত বের করে দেয়’

গোলাম রাব্বানী। ছবি: সংগৃহীত

হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে চুরির অভিযোগে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় গোলাম রাব্বানীকে পুলিশ বেধরক পেটায় বলে অভিযোগ করেছেন রাব্বানীর মা।

গত মঙ্গলবার অটোরিকশা চুরিতে জড়িত অভিযোগে আটকের কয়েক ঘণ্টা পর থানা হেফাজত থেকে রাব্বানীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

পুলিশের দাবি থানায় নিজের গেঞ্জি ও বেল্ট দিয়ে সিলিং ফ্যানে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে রাব্বানী।

রাব্বানীর মা ফজরচান বিবি বলেন, 'প্রথমে ধরেই মারধর করে নাক কান থেকে রক্ত বের করে দেয়। তার জন্য দুপুরে ভাত রান্না করেছিলাম। ভাতটা পর্যন্ত খেতে পারেনি।'

ফজরচান বিবি জানান, গত মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলায় তার ছেলে গোলাম রব্বানী বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলেন। উপপরিদর্শক মনিরুল ইসলাম স্থানীয় এক ছেলের সহায়তায় তাকে পাশের বাজারে ডেকে নিয়ে যান।

গতকাল শুক্রবার ফজরচানের সঙ্গে তার নন্দীগাঁও বাড়িতে এই প্রতিবেদকের কথা হয়।

'ছেলের জন্য দুপুরের খাবার রান্না করছিলাম। কিন্তু পুলিশ তাকে থানায় নিয়ে যাওয়ায় ছেলেটা আর ভাত খেতে পারে নাই, কান্নায় ভেঙে পড়ে বলছিলেন ফজরচান।

তিনি বলেন, 'ছেলেকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য মনিরুলকে অনুরোধ করেছিলাম, কিন্তু এসআই বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে।'

'সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে আমি গরম কাপড় ও ভাত নিয়ে থানায় যাই। এসআই মনিরুল আমাকে জানায় যে রাব্বানীর বুকে ব্যথা তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।'

'আমার ছেলের বুকের ব্যথা শুনে আমি নিজেই অজ্ঞান হয়ে পড়ি। আমার ছেলে সুস্থ মানুষ তার কীভাবে বুকে ব্যথা হয়,' বলছিলেন ফজরচান।

তিনি বলেন, তিন মাস চুরির মামলায় জেলে ছিল রাব্বানী। গত দুই সপ্তাহ আগে জামিনে বের হয়। যে সময়ের চুরির অভিযোগ আনা হয়েছে সেই সময়েতো সে জেলেই ছিল।

তিনি জানান, ছেলের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা আছে। ছেলের মামলাগুলোর বিরুদ্ধে বাদি থাকলে মানতে পারতাম কিন্তু সব চুরিতে আমার ছেলের নাম ঢুকিয়ে দেওয়া হয়।'

রাব্বানীর বাড়ি থেকে বানিয়াচং থানা প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে।

ফজরচান জানান, তিনি সঙ্গে সঙ্গে তার বড় ছেলে মঈন উদ্দিনকে বিষয়টি জানিয়ে বানিয়াচং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। তবে পরিবারের সদস্যদের রাব্বানীকে দেখতে দেয়নি পুলিশ।

রাত ২টার দিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তাদের মরদেহ দেখতে দেওয়া হয়।

ফজরচান বলেন, 'পুলিশ আমার ছেলেকে নির্যাতন করে হত্যা করেছে এবং তার লাশ সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে দিয়েছে। আমরা বিচার চাই। রোববার হবিগঞ্জ জজ আদালতে মামলা করব।'

স্থানীয়ভাবে 'টমটম' নামে পরিচিত ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চুরি করার অভিযোগে পুলিশ রাব্বানীকে গ্রেপ্তার করেছিল, কিন্তু চুরির সময় সে কারাগারে ছিল, তিনি যোগ করেছেন।

নিহতের মামা মনঞ্জু মিয়া জানান, দাফনের আগে রাব্বানীর শরীর ধোয়ার সময় তিনি শরীরে অনেক ক্ষতচিহ্ন দেখেছেন।

দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে এসআই মনিরুল ইসলাম গতকাল থানায় দায়ের করা সাতটি মামলার আসামি রাব্বানীকে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেন।

তিনি বলেন, সম্প্রতি এলাকায় 'টমটম' চুরি বেড়েছে এবং স্থানীয়রা রাব্বানীকে সন্দেহ করছে। এ কারণে ৪ নভেম্বর একটি চুরির ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদ করতে তিনি রাব্বানীকে থানায় নিয়ে আসেন।

এসআই বলেন, ওই সময় ওসি থানায় না থাকায় তিনি রাব্বানীকে মহিলা ও শিশু হেল্প ডেস্ক রুমে নিয়ে যান। তিনি বলেন, রব্বানীকে আটকের বিষয়টি তিনি ডিউটি অফিসারকে জানিয়ে থানা ত্যাগ করেন।

মনিরুল বলেন, হঠাৎ রাব্বানী কক্ষটি ভেতর থেকে দরজার সিটকিরি লাগিয়ে দেন ও বাতি বন্ধ করে দেন।

তিনি বলেন, 'এ কথা শুনে আমি থানায় ফিরে আসি। ঘরের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ দেখতে পাই। দরজা ভেঙে দেখি রাব্বানী সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় আছে।'

এসআই দাবি করেন, রব্বানী গলায় গেঞ্জি ও বেল্ট বেঁধে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে বেঁধে রাখার জন্য একটি চেয়ারে দাঁড়িয়েছিলেন।

বানিয়াচং স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক মো: নাছরুল্লাহ জানান, রাব্বানীর গলায় চন্দ্রাকৃতির একটি কালো দাগ রয়েছে। জরুরি বিভাগে আসার পর মৃত অবস্থায় থাকায় রাব্বানীকে ময়না তদন্তের জন্য হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে পাঠানো হয়। ময়না তদন্তের রিপোর্ট এলে বিস্তারিত জানা যাবে।

 

Comments

The Daily Star  | English
Apparel Buyers Delay Price Increases Post-Wage Hike Promise

Garment exports to US grow 17%

Bangladesh shipped apparels worth $5.74 billion in the July-March period to the USA

5h ago