অবরোধের চরম মূল্য দিচ্ছেন খুচরা বিক্রেতারা

অবরোধের চরম মূল্য দিচ্ছেন খুচরা বিক্রেতারা
অবরোধের দিনে প্রায় ক্রেতাশূন্য রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকা। ১৩ নভেম্বর, ২০২৩ | ছবি: প্রবীর দাশ/ স্টার

দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপির ডাকা দেশব্যাপী অবরোধের খারাপ প্রভাব পড়ছে ব্যবসা-বাণিজ্যে।

আগামীকাল বুধবার পঞ্চম ধাপে শুরু হতে যাওয়া এই সড়ক অবরোধের লক্ষ্য সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করা।

গত ৩১ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া অবরোধে দেড় শতাধিক যানবাহনে আগুন দেওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।

রাজধানী ও এর বাইরের পাইকারি-খুচরা ব্যবসায়ী, সবজি বিক্রেতা ও রেস্টুরেন্ট মালিকদের একাংশ ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, তাদের বিক্রি ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে। অথচ ক্রমাগত মূল্যস্ফীতির কারণে তারা ইতোমধ্যে কঠিন সময় পার করছেন।

রাজধানীর গুলিস্তান এলাকার বিছানার চাদর, পর্দা, মশারি ও কম্বলের পাইকারি-খুচরা বিক্রেতা এএম এন্টারপ্রাইজের কর্মী মেহেদী হাসান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অবরোধের আগে প্রতিদিন কমপক্ষে দুই লাখ টাকা বিক্রি হতো। এখন তা ৩০ হাজারে নেমেছে।'

তিনি আরও বলেন, 'প্রতিদিন বিক্রি কমছে। ব্যবসা চালানো মুশকিল। কঠিন সময়ের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি।'

একই এলাকার শার্ট, প্যান্ট, স্যুট, ব্লেজার ও পাঞ্জাবির খুচরা বিক্রেতা বিসমিল্লাহ ক্লথ স্টোরের কর্মী রিফাত হোসেন জানান, অবরোধের দিন বিক্রি অর্ধেকে নেমে যায়।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সাধারণত প্রতিদিন ৩০ জনের মতো ক্রেতা দোকানে আসেন। অবরোধের কারণে তা ১৫-তে নেমে গেছে।'

রাজধানীর নীলক্ষেতের নিউ খাজা স্টেশনারি শপের মালিক হাসান গাজী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অবরোধের আগে প্রতিদিন প্রায় শতাধিক পাইকার ও খুচরা বিক্রেতা আসতেন। বর্তমানে তা চারভাগের এক ভাগে নেমে এসেছে।'

বিক্রি কমে যাওয়ায় গত এক সপ্তাহ ধরে তিনি পণ্যের নতুন অর্ডার দেননি জানিয়ে বলেন, 'পরিবহন ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হওয়ায় ঢাকার বাইরে পণ্য পাঠাতে পারছি না।'

এমন পরিস্থিতিতে প্রসাধনী পণ্যের বিক্রিও কমেছে।

নিউমার্কেটের পারফেক্ট কসমেটিকস শপের মালিক হুমায়ুন কবির ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিক্রি অর্ধেকে নেমে এসেছে। আমার মনে হয়, অবরোধের দিন মানুষ ঘর থেকে বের হওয়ার আগে অন্তত দুই বার চিন্তা করেন।'

একই এলাকার শার্ট, জিন্স, প্যান্ট, টি-শার্ট ও ট্রাউজার বিক্রেতা আবুল বাশার ডেইলি স্টারকে জানান, অবরোধের আগের সময়ের তুলনায় বিক্রি অন্তত ৩০ শতাংশ কমেছে।

বগুড়ার রোচাস রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড গেস্ট হাউজের মালিক তাহমিনা পারভীন শ্যামলী ডেইলি স্টারকে জানান, তার বিক্রি কমেছে ৮০ শতাংশ।

খরচ কমানোর জন্য তিনি ২৪ শ্রমিকের এক তৃতীয়াংশকে সব সময় ছুটিতে রাখেন এবং বাকিদের দিয়ে দুই শিফটে কাজ করান।

শ্যামলী টেলিফোনে ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রোজগার কমে যাওয়ায় আমাকে এটি করতে হয়েছে।'

অবরোধের আগে মাসে এক লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করতেন জানিয়ে বগুড়ার নিউমার্কেটের রনি ক্লথ স্টোরের মালিক কালাচাঁদ সাহা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এখন ২০ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি করা আমার পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ছে।'

চট্টগ্রামের কাজীর দেউড়ি এলাকার ভিআইপি শপিং সেন্টারের রূপসী বাংলা ক্লোথিং স্টোরের মালিক হুমায়ুন কবির ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অবরোধ ও মানুষের জীবনযাত্রার খরচ বেড়ে যাওয়ায় বিক্রি ৫০ শতাংশ কমে গেছে।'

খুলনার সোনাডাঙ্গার সবজির পাইকারি বিক্রেতা আবু হানিফ মোড়ল জানান, গত ১৫ দিনে তার অন্তত ২৫ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে।

'পরিস্থিতি এমন যে আমাকে কেনা দামের অর্ধেক দামে সবজি বিক্রি করতে হয়েছে,' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'গত সপ্তাহে ৫০ টাকা কেজি দরে ফুলকপি কিনেছিলাম। ঢাকায় সবজি পাঠাতে না পারায় পরে সেগুলো ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে বাধ্য হই।'

হানিফ আরও বলেন, 'বর্তমান পরিস্থিতিতে মুনাফা করা সম্ভব না।'

এই অবরোধের প্রভাব ব্র্যান্ডগুলোর ওপরও পড়েছে।

ফ্যাশন ওয়্যার, অ্যাকসেসরিজ, হোম টেক্সটাইল, হস্তশিল্প ও তাঁতভিত্তিক পণ্যের খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান 'কে ক্রাফট'র সহ-প্রতিষ্ঠাতা খালিদ মাহমুদ খান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অবরোধ শুরুর পর থেকে ক্রেতার উপস্থিতি অর্ধেকেরও বেশি কমেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে মানুষ কম কিনবেন এটাই স্বাভাবিক।'

তার মতো আরও কয়েকজন পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে আগামী দিনগুলোয় তাদের পক্ষে দোকান ভাড়া, কর্মচারীদের বেতন ও পরিবারের খরচ মেটানো অসম্ভব হয়ে পড়বে।

খুচরা বিক্রেতাদের জাতীয় সংগঠন বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সার্বিক বিক্রি ৫০ শতাংশে নেমে এসেছে।'

তিনি আরও বলেন, 'গত দেড় বছরে মূল্যস্ফীতি বেশি হওয়ায় ক্রেতা কম। ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। অবরোধ এই পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করে তুলেছে।'

বিএনপি আজ মঙ্গলবার বিরতি দিয়ে আগামীকাল থেকে দেশব্যাপী আরও ৪৮ ঘণ্টার অবরোধের ডাক দেওয়ায় হেলাল নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, 'জানি না এ সংকট কীভাবে মোকাবিলা করব।'

Comments

The Daily Star  | English

Crowd control: Police seek to stop use of lethal weapon

The police may stop using lethal weapons and lead pellets for crowd control as their widespread use during the July mass uprising led to massive casualties and global criticism.

35m ago