প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ‘বেপরোয়া, প্রতিহিংসামূলক ও অবমাননাকর’: রিজভী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা-বিরোধী দল ও দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে 'বেপরোয়া, প্রতিহিংসাপরায়ণ ও অবমাননাকর' মন্তব্যের মাধ্যমে তার অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, 'নরসিংদীতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য শুনে দেশের মানুষ হতবাক ও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে।'
সোমবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২ নভেম্বর সংসদে বিএনপি নেতাদের 'পশু' বলে সম্বোধন করেছিলেন।
তিনি বলেন, 'শেখ হাসিনা রোববার আরও অনেক মন্তব্য করেছেন, যা শুধু মানসিকভাবে বিপর্যস্ত মানুষই বলতে পারেন। তার অশ্লীলতা সম্প্রতি প্রায় মহামারি পর্যায়ে পৌঁছেছে। তিনি সব ধরনের শিষ্টাচার, রীতিনীতি, সুরুচি ও সৌজন্যবিহীন বক্তব্য দিয়েছেন এবং সবচেয়ে নিকৃষ্ট বেফাঁস, উস্কানিমূলক ও অস্বাভাবিক ভাষা ব্যবহার করেছেন।'
তিনি বলেন, কোনো সভ্য দেশের সরকারপ্রধান এ ধরনের ভাষা ব্যবহার করতে পারেন না। 'মনে হচ্ছে তিনি রাস্তার গুন্ডা ও সন্ত্রাসীদের মতো হুমকি দিচ্ছেন। এটা বাংলাদেশের জন্য দুর্ভাগ্যজনক, এমন একজন ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রীর আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। একজন প্রধানমন্ত্রীর উচিত তার বক্তব্যে বিনয়ী হওয়া। কিন্তু তিনি (প্রধানমন্ত্রী) অশালীন শব্দ ব্যবহার করে তার অসহায়ত্ব প্রকাশ করছেন।'
এর আগে রোববার নরসিংদীতে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী সাধারণ নির্বাচনের আগে এই নভেম্বরে শিক্ষার্থীরা যখন পরীক্ষায় বসবে এমন এক সময়ে বিএনপি অবরোধ ও হরতাল নিয়ে আসায় মানুষ পুড়িয়ে মারার অভিযোগ তুলেছিলেন।
সেসময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'কেউ যদি অগ্নিসংযোগ করতে যায় এবং বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়, তাহলে তাদের ধরে আগুনে নিক্ষেপ করুন।'
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কঠোর সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, 'তিনি (তারেক) দেশ থেকে পালিয়ে লন্ডনে আছেন এবং সেখানে বসে অগ্নিসংযোগের নির্দেশ দিয়েছেন। সাহস থাকলে বাংলাদেশে ফিরে আসুন। কিছুক্ষণের জন্য দেখা হবে।'
তারেক রহমানকে দেশে ফিরে আসতে বলায় প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করে রিজভী বলেন, শেখ হাসিনার শাসনামলে তারেক ফিরে এলে তার পরিণতি কী হতে পারে তা দেশের জনগণ ভালোভাবেই জানে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, 'প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে, তিনি তারেক রহমানকে হত্যা করতে চান। এ কারণে তাকে একের পর এক মিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে। জনগণের বিজয়ের পর তারেক রহমান শিগগিরই দেশে ফিরবেন।'
তিনি বলেন, তারেকের ক্যারিশম্যাটিক নেতৃত্ব, অকল্পনীয় জনপ্রিয়তা, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে শেখ হাসিনা ভীত হয়ে পড়েছেন।
বিএনপির এই নেতা বলেন, 'তারেক রহমানকে নিয়ে তার বক্তব্য শুনে মানুষ বিস্মিত ও হতবাক হয়ে যায়। প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসে এ ধরনের বক্তব্য শুধু শপথভঙ্গই নয়, আইনের গুরুতর লঙ্ঘনও বটে। এটি সরাসরি হত্যার হুমকিও বটে।'
তিনি প্রধানমন্ত্রীকে সমাজে বিভাজন সৃষ্টির অভিযোগ করে বলেন, 'দেশের প্রতিটি গণতন্ত্রপন্থী মানুষ প্রধানমন্ত্রীর আগুনে নিক্ষেপের সহিংস হুমকিতে আতঙ্কিত। তিনি দেশে গৃহযুদ্ধ শুরু করতে চান।'
তিনি বলেন, সোমবার বিকাল ৪টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপির ৪৮০ জনের বেশি নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বিএনপির ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ এবং হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ১১ হাজার ২৫০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে অভিযোগ দলটির।
Comments