হাসিনাকে কথা বলার সুযোগ দিয়ে ভারত বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপ করছে: রিজভী

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। ফাইল ছবি: সংগৃহীত
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। ফাইল ছবি: সংগৃহীত

শেখ হাসিনাকে 'ফ্রি হ্যান্ড' কথা বলার সুযোগ দিয়ে ভারত বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপ করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে একটি গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে তিনি এই মন্তব্য করেন।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, 'ভারত তাকে (শেখ হাসিনা) আশ্রয় দিয়েছে, সেটা দিতে পারে। কিন্তু তাকে ফ্রি হ্যান্ড দেওয়া যে সে বলবে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে... পার্শ্ববর্তী দেশে থেকে তিনি উসকানি দিচ্ছেন, একটা অরাজকতা তৈরির প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন এবং তাকে সাপোর্ট করছে ভারতের পলিসিমেকাররা। এটা অদ্ভুত ব্যাপার।'

'এটা তো বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপ, ভয়ংকর রকমের হস্তক্ষেপ। এটা একটা স্বাধীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ওপরে আরেকটি রাষ্ট্রের এরকম অবস্থান এটা তো চরমভাবে আান্তর্জাতিক রীতি-নীতি সমস্ত কিছু লঙ্ঘন করে এই কাজটা করছে।'

রিজভী বলেন, 'আমার অবাক লাগে যে, ভারতের মতো একটি গণতান্ত্রিক দেশে এমন নির্লজ্জের মতো ওখানকার মিডিয়া, কিছু সাংবাদিক সেই এক ধরনের বয়ান তৈরি করছে... শেখ হাসিনা যেমনটি করেছেন... সেই ফ্যাসিস্টদের পক্ষ অবলম্বন করে এই বয়ান তৈরি করছে। তাতে মনে হচ্ছে যে, অনেক দিনের গুপ্তধন তারা যেটা সঞ্চয় করেছে, সেই গুপ্তধন যেন হাতছাড়া হয়ে গেছে।'

'আজকে গণতন্ত্রের পথরেখা অনুযায়ী গণতন্ত্রের চর্চা-অনুশীলন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের যে বিকাশের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, এটা কোনোভাবেই সহ্য করতে পারছে না শুধুমাত্র শেখ হাসিনাই নয়, ভারতের পলিসি মেকাররাও। এটা কেন? একটি গণতান্ত্রিক দেশের কাছ থেকে তো এটা আমরা আশা করতে পারি না।'

প্রশ্ন রেখে রিজভী বলেন, 'তাদের (ভারতের) কেউ কেউ খাপছাড়া টাইপের কিছু মানুষ, তারা বলছেন যে, বাংলাদেশ আর থাকবে না। পার্শ্ববর্তী একটি স্বাধীন দেশ সেটা থাকবে না সেই কথাটা অ্যালাউ করছে কী করে ভারতের নীতি-নির্ধারকরা?'

প্রতিবিপ্লবের বিরুদ্ধে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, 'আমাদেরও সবাইকে গণতান্ত্রিক শক্তির স্বপক্ষের লোকদেরকে সর্তক পদক্ষেপ রাখতে হবে। কোনো নৈরাজ্যের কারণে কেউ যাতে কোনো সুযোগ না নিতে পারে... এটাও মনে রাখতে হবে প্রতিবিপ্লব উঁকিঝুঁকি মারে সবসময়... এই উঁকিঝুঁকি যাতে দিতে না পারে।'

'আমাদের কাছে তো দৃষ্টান্ত আছে। আমরা ব্রিটেনের বিপ্লব দেখেছি, সেখানে রাজা চার্লসের ছেলে আবার সে রাজা হয়ে এসেছে শুধুমাত্র কিছু ভুলের কারণে। ফ্রান্সের যে বিপ্লব হলো, লুই সিক্সটিন গিলোটানাইজড হলো, তার ছেলেও একবার প্রত্যাবর্তন করেছিল শুধুমাত্র ভুলের কারণে। আমাদের কাছে বিভিন্ন রাষ্ট্রের বিপ্লব-পরবর্তী যে ভুলগুলো সেটা যেন না হয়... সেটা দেখলে পরে আর কখনো প্রতিবিপ্লব হবে না।'

তিনি বলেন, 'আমরা গণতন্ত্রের রাস্তা দিয়ে এগিয়ে যাব। দেশবিরোধী, গণতন্ত্রবিরোধী এবং আমাদের সার্বভৌমত্ব-বিরোধী... আমাদের ইতিহাস-সংস্কৃতি আবহমান বাংলার যা কিছু আছে সেটার চর্চা-অনুশীলন এবং সেটিকে নিয়ে আমাদের এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আমরা কখনোই অন্যের হস্তক্ষেপকে মেনে নেবে না।'

'এভাবেই এগোতে হবে। আমাদের যে পরিবর্তন, এটাকে সংরক্ষণ করতে হবে নানা কাজের মধ্য দিয়ে।'

জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের ওপর লেখা জিএম রাজিব হোসেনের 'দ্রোহের গ্রাফিতি' গ্রন্থের প্রকাশনা উপলক্ষে এই অনুষ্ঠান হয়।

গত ১৫ বছরের ফ্যাসিস্ট সরকারের নিপীড়ন-নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, 'কী ভয়াবহ দিন গেছে? অপজিশনের ৬০-৭০ লাখ অ্যাক্টিভিস্টের লাইফ হেল করে দিয়েছে… কারো ১০টা, কারো ২০টা, রিজভী ভাইয়ের একাই ৩০০টার বেশি মামলা... তাদের লাইফ একেবারে শেষ, তাদের ছেলে-মেয়েরা কোথাও চাকরি পায় নাই, তারা যদি চুপিসারে কোনোভাবে ধরেন একটা কনস্টেবলেও চাকরি পেয়ে গেছে, সেটাও জানাজানি হয়ে গেছে যে, তিনি বিএনপি পরিবারের, তাকে চাকরি দেওয়া যাবে না।'

'তারা টোটালটা তাদের অ্যাটেম্পটা হচ্ছে, এটাকে আমি উল্টে দেবো, দিয়ে আমি আমার ন্যারেটিভ বসাব। এই ন্যারেটিভের বিরুদ্ধে এই গ্রাফিতির বই খুব গুরুত্বপূর্ণ। ওই সময় যত ঘটনা ঘটেছে, তার টেক্সট আমাদের লিপিবদ্ধ করতে হবে।'

তিনি বলেন, 'এখন আমরা দেখছি যে, তিনি (শেখ হাসিনা) যে ধরনের কথা বলেন, যে অ্যাংগার দিয়ে কথা বলছেন... আপনি দেখেন সবাই এক... তার কথা যেই শুনছে তারই তো মাথা ঠিক থাকছে না।'

'প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস সবাইকে আহ্বান জানিয়েছেন, শান্ত হোন। আমাদের কাছটা হচ্ছে, আমরা গবেষণার মাধ্যমে ১৫টা বছর কী ভয়াবহ অবস্থা করেছে সেটা সবাইকে জানাব, প্রত্যেকটা ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে সেমিনার করব, প্রত্যেকটা দেয়ালে দেয়ালে সে যে অন্যায়-অবিচার করেছে সেটা আমরা লিখে রাখব। যাতে বাংলাদেশে এই পতিত স্বৈরাচার ও তার সাঙ্গপাঙ্গ আর জীবনেও না ফিরে আসতে পারে। এটা সকলকে করতে হবে।'

প্রেস সচিব বলেন, 'আপনারা ভাবছেন যে, বিপ্লব সেই জুলাই-আগস্টের ২১ দিন... এটা ভুল। তার আগেও আন্দোলন-সংগ্রাম হয়েছে ১৫ বছর ধরে... আগামীতে আরও ১৫ বছর সংগ্রাম করতে হবে।'

'আমরা একটু ভুলে যাব, ওরা আবার মাথাচাড়া দেওয়ার চেষ্টা করবে... এটা যাতে না হয়। বাংলাদেশে যাতে কোনো ধরনের কোনোভাবে স্বৈরাচার এবং তার সাঙ্গপাঙ্গরা আর ফিরে আসতে না পারে।'

জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি, কালের কণ্ঠের সম্পাদক কবি হাসান হাফিজের সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গনি চৌধুরী, 'আমার দেশ' পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, সরগম পত্রিকার সম্পাদক কাজী রওনক হোসেন, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ, লেখক জিএম রাজিব হোসেন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

Comments

The Daily Star  | English

RMG exports to US grow after a gap of two years

Garment shipment to the US increased by 0.75% to $7.34 billion

9h ago