বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণ কমছেই, রিজার্ভে বাড়তি চাপ

বিদেশি ঋণ
ছবি: রয়টার্স ফাইল ফটো

সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত জানুয়ারি থেকে প্রতি মাসে বেসরকারি খাতে স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণ কমছে। কারণ পুরোনো ঋণ পরিশোধের পরিমাণ নতুন ঋণের তুলনায় বেশি। এটি দেশের রিজার্ভ কমিয়ে দিচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, গত সেপ্টেম্বরে স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণ তিন দশমিক ১৬ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ২৪৩ কোটি ডলার। গত আগস্টে তা ছিল ১২ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন ডলার।

স্বল্পমেয়াদি ঋণ তিন থেকে নয় মাসের মধ্যে পরিশোধ করতে হয় এবং তা বিদেশ থেকে নেওয়া বেসরকারি খাতের মোট ঋণের ৬৩ দশমিক পাঁচ শতাংশ।

কিন্তু ডলারের কম মজুদ, টাকার অবমূল্যায়ন ও বৈশ্বিক সুদের উচ্চহারের কারণে উদ্যোক্তারা এই ধরনের ঋণ এড়িয়ে চলছেন।

গত জানুয়ারির শুরুতে বেসরকারি খাতে স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণের পরিমাণ ছিল ১৬ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার। এরপর তা কমে হয়েছে ২৪ দশমিক ২৯ শতাংশ।

গত নয় মাসে উদ্যোক্তারা ১৯ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়েছেন এবং মূল অর্থ ও সুদ বাবদ ২৩ দশমিক ৯৯ বিলিয়ন ডলার শোধ করেছেন।

নতুন ঋণের তুলনায় ঋণ পরিশোধের উচ্চহার জানুয়ারি থেকে চলমান আছে।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সাবেক কর্মকর্তা আহসান এইচ মনসুর দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'টাকার ব্যাপক অবমূল্যায়নের কারণে বেসরকারি খাত ডলারে ঋণ নিতে আগ্রহী নয়।'

তিনি আরও বলেন, 'কয়েক বছর আগে বিদেশি ঋণের সুদের হার ছিল দুই শতাংশ। এখন উদ্যোক্তারা ১০ শতাংশ দিতে রাজি হলেও ডলারে ঋণ পাচ্ছেন না।'

তিনি জানান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিদেশি ঋণের ওপর ২০ শতাংশ কর আরোপ করেছে।

তার মতে, 'বিদেশি ঋণ কমে যাওয়ার আরেকটি কারণ হলো—ভুল সময়ে এই নীতি আরোপ করা হয়েছে। পাঁচ বছর আগে যদি এটা আরোপ করা হতো, তাহলে পরিস্থিতি আরও ভালো হতো।'

২০২১ সালে বেসরকারি খাত বিদেশি ঋণদাতাদের কাছ থেকে স্বল্পমেয়াদে ৩৩ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন ডলার ঋণ পেয়েছে।

গত বছর ৩৭ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলার নতুন ঋণের বিপরীতে ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ছিল ৩৬ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন ঋণের তুলনায় বেশি পরিমাণে ঋণ পরিশোধ দেশের রিজার্ভ কমিয়ে দিচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত ১ নভেম্বর দেশের মোট রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার। গত ২৫ অক্টোবর তা ছিল ২০ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন ডলার।

আইএমএফের তথ্য অনুসারে, ২০২১ সালের আগস্টে দেশের রিজার্ভ ছিল প্রায় ৪০ দশমিক সাত বিলিয়ন ডলার ও ২০২১-২২ সালের শেষে তা ছিল ৩৩ দশমিক চার বিলিয়ন ডলার।

আহসান এইচ মনসুর আরও বলেন, চলতি হিসাব উদ্বৃত্তের কারণে নয় বরং, আর্থিক হিসাব উদ্বৃত্তের কারণে রিজার্ভ বেড়েছিল।

'অর্থাৎ, ঋণের ওপর ভর করে রিজার্ভ জমেছিল। এখন সেই ঋণ শোধ করা হচ্ছে। ফলে আর্থিক হিসাব নেতিবাচক হয়ে পড়েছে এবং রিজার্ভ কমে যাচ্ছে,' বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা গেছে, গত জুনে শুরু হওয়া চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ব্যালেন্স অব পেমেন্টের আর্থিক হিসাবের ঘাটতি ছিল তিন দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলার। এর বিপরীতে, আগের বছরের একই সময়ে এটি ৮৩৯ মিলিয়ন ডলার উদ্বৃত্ত ছিল।

রিজার্ভের পতন ঠেকাতে আমদানি সীমিত করার লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্যোগের পর চলতি অর্থবছরের জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশের আমদানি কমেছে ২২ দশমিক ৪৭ শতাংশ। গত ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা ছিল ১৫ দশমিক ৮১ শতাংশ।

Comments

The Daily Star  | English

Cops get whole set of new uniforms

The rules were published through a gazette yesterday, repealing the previous dress code of 2004

1h ago