নিজের যত্নে ‘সেলফ-কেয়ার রুটিনে’ যা যা রাখবেন

তাড়াহুড়োর এই জীবনে আমরা কতকিছুই তো করি। করতে হয় বলে, না করে থাকা যায় না বলে। পেশাদার কাজকর্ম, ঘর-সংসারের নানান দায়িত্ব পালন, ব্যক্তিগত ও সামাজিক সম্পর্ক যাপন করে যাওয়া ইত্যাদি বহু কাজ ও অকাজের ভিড়ে মানুষ মাঝেমাঝে নিজের জন্যই সময় পায় না।

আপাতদৃষ্টিতে এত ব্যস্ততাকে খুব ইতিবাচক বলে মনে হলেও ভেতরে ভেতরে ধ্বংসের খোরাক বয়ে নিয়ে যাচ্ছে এই 'অতি প্রোডাকটিভ' জীবনযাত্রা। কারণ নিজের শরীর ও মনের সমান্তরাল যত্ন না নিলে একদিন এই বাইরে থেকে ফিটফাট চেহারাটা খসে পড়তে দেরি হয় না। তখন তলিয়ে যাওয়া ছাড়া আর কিছুই থাকে না হয়তো। তাই সময় থাকতেই অন্য সব ব্যস্ততার মাঝে আমাদের উচিত নিজেদের যত্ন নেওয়া। কিন্তু কীভাবে? তা নিয়েই এই লেখাটি।

সেলফ-কেয়ার বা নিজের যত্ন নেওয়া বিষয়টি অবশ্যই ব্যক্তিভেদে আলাদা আলাদা অর্থের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। এটি সামগ্রিকভাবেই ব্যক্তির নিজস্ব পছন্দ ও চাহিদার ওপর নির্ভরশীল। তাই একই রাসায়নিক কিংবা এক্ষেত্রে জৈবনিক বিক্রিয়ার ফর্মুলা বলে না দেওয়া গেলেও একটা প্রাথমিক নীতি দাঁড় করানো যাবে, নিজের যত্ন নেওয়ার বিষয়ে।

নিজের প্রতি যত্নশীল হওয়ার প্রতিটি পদ্ধতিই এই ৭ ধরনের মধ্যে পড়ে– মানসিক, আবেগীয়, শারীরিক, পরিবেশগত, আত্মিক, বিনোদনমূলক এবং সামাজিক। এই সবগুলো স্তম্ভের সমন্বয়ে, ভারসাম্য রেখে যদি নিজের জন্য একটি সেলফ-কেয়ার রুটিন তৈরি করা যায়, তবে সর্বোচ্চ উপযোগ পাওয়া সম্ভব।

মানসিক: মনোযোগ ও কৌতূহলের চর্চার মাধ্যমে মগজাস্ত্রে শান দিয়ে মস্তিষ্ককে তরতাজা রাখাও নিজের প্রতি যত্নশীল হবার একটি উদাহরণ। টিভি-ফোন-কম্পিউটারের বোকা বাক্সে বন্দী না হয়ে থেকে সৃজনশীল কাজের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রাখুন কিছুটা সময়ের জন্য হলেও।

আবেগীয়: আবেগ ছাড়া মানুষ হয় না, আর আবেগের অবদমন দিন দিন মানুষকে অসুস্থ করে তোলে। হাসি, আনন্দ, সহমর্মিতা, ভালোবাসা ইত্যাদি সব ইতিবাচক আবেগের চর্চাও তাই হতে পারে নিজের প্রতি যত্ন নেওয়ার অন্যতম পদ্ধতি। দৈনন্দিন জীবনের সমস্যাগুলো সামলে নেওয়ার জন্য সুস্থ কিছু কোপিং মেকানিজমের চর্চা করাটাও ভালো উপায়।

শারীরিক: সুস্থ দেহে সুন্দর মন। তাই সুন্দর মানসিক স্বাস্থ্য ও জীবনযাপনের জন্য শারীরিক চর্চা, হাঁটাহাঁটি ইত্যাদি যত্নের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। কারণ শরীর ভালো না থাকলে অন্য আর কিছুই ভালো লাগে না।

পরিবেশগত: যে ঘরে থাকেন, সেটি যদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না হয়, তবে নিজে ভালো থাকাও কঠিন হয়ে পড়ে। নিজের ঘর, কাজের জায়গা, ছাদের বাগান ইত্যাদি পছন্দের জায়গাগুলোর খেয়াল রাখলেও তাই পরোক্ষভাবে নিজেরই খেয়াল রাখা হয়।

আত্মিক: জীবনের ইঁদুরদৌড়ে এক মুহূর্ত বসে জীবন নিয়ে ভাবতে বসাই হয় না কত মানুষের। জীবনের অর্থ, নিজের মধ্যকার প্রশান্তি– টানা কিছুক্ষণ শুধু ঝিঁঝিঁপোকার ডাক খুঁজে বেড়ানোর মতো আত্মিক অনুভূতিগুলোর চর্চাও নিজেকে ভালো রাখতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আপাতদৃষ্টিতে ভীষণ অর্থহীন মনে হওয়া এই বিষয়গুলোই মূলত মানুষের জীবনকে অর্থ দেয়।

বিনোদনমূলক: একঘেয়ে জীবনযাপনে বিনোদনের ভূমিকা সবসময়ই এগিয়ে থাকে। বিনোদনের বিভিন্ন রূপ হতে পারে, যেমন– সিনেমা, নাটক, গান, খেলাধুলা ইত্যাদি। ব্যক্তির পছন্দমতো বিনোদনের জন্যও একটি বরাদ্দকৃত সময় থাকা দরকার। বিনোদন মনকে সতেজ করে তোলে।

সামাজিক: মানুষ দিনশেষে সামাজিক জীব। এই জীবনে গড়ে তোলা সম্পর্কগুলোই তাকে জিইয়ে রাখে যেন জীবনের পরও। নিজের প্রতি যত্নশীল হতে হলে অবশ্যই নিজেকে একটি সুন্দর সামাজিক জীবন দিতে হবে। তবেই তো পৃথিবী হয়ে উঠবে সুন্দর ও বসবাসযোগ্য।

'মি-টাইম'

কারো কাছে ভালো সময়ের মানে যখন বন্ধুদের সঙ্গে হৈ-হুল্লোড়ে মাতা, অন্য কারো কাছে তা হয়তো বাসায় রান্না করা। কেউ যখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘুমিয়ে থাকতেই ভালোবাসে, অন্য কেউ তখন প্রকৃতির খোঁজে বেরিয়ে পড়ে। ভালোলাগার কোনো কাঠামো নেই। আছে শুধু অনুভব। তাই আপনার নিজের সঙ্গে সময় কাটানোর ঠিক কোন রূপটা সবচেয়ে পছন্দ, শহুরে অভিধানে আপনার 'মি-টাইম'টা ঠিক কেমন, তা আপনার চেয়ে ভালো কেউ বলতে পারবে না। তবে নিজের যত্নে এটুকু নিশ্চিত করতে হবে যে শত ব্যস্ততার মধ্যেও দিনের একটা নির্দিষ্ট সময় যেন সেই চাহিদাটা পূরণ করতে পারে।

নিজেকে নিজেরই দেখে রাখতে হয়। তাই নিজের প্রতি যত্নশীল হওয়ার বিষয়টি সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিতে হবে। তবে নিজের প্রতি যত্নশীল হতে গিয়ে যেন অন্য কারো কোনো প্রকার ক্ষতি না হয়ে যায়, সেদিকেও সচেতন থাকাটাও নিজের প্রতিই দায়িত্ব পালন।

Comments

The Daily Star  | English

No immediate tax relief despite inflation woes

There will be no tax relief for individuals in low- and middle-income brackets, at least in the next fiscal year, even though high inflation has significantly eroded their purchasing power over the last couple of years.

10h ago