ভালোবাসুন নিজেকেও

ভালোবাসুন নিজেকেও
ছবি: সাজ্জাদ ইবনে সাঈদ

'যন্ত্রে বাধা মন ছিল ক্লান্ত অসহায়, অর্থে কেনা সুখ ম্রিয়মাণ দুঃখের ছায়ায়।' 

তাড়াহুড়ার এই জীবনে যে যার মতো করে ইঁদুরদৌড়ে ছুটছি প্রতিদিন। ছুটতে ছুটতে একসময় এতটা ক্লান্তি ভর করে যে, সব যান্ত্রিক সঙ্গের আতিশয্যে নিজেকেও একটা যন্ত্র ছাড়া কিছুই মনে হয় না। কিন্তু নিজেকে ম্রিয়মাণ হতে দেওয়া যাবে না কিছুতেই। ভালোবাসতে হয়তো বিশেষ দিন লাগে না, তবে উদযাপনের জন্য বিশেষ দিন বেশ কাজের। তাই এই ভালোবাসা দিবসে একটুখানি খেয়াল করুন প্রতিদিনের আয়নায় ভেসে ওঠা সেই ব্যক্তিটির দিকে, জগৎসংসারে যাকে ঘিরেই আপনার অস্তিত্ব। 

শখগুলো হারিয়ে না যাক

পেশাদারি কাজের জায়গা যেটাই হোক, আমাদের সবারই এমন কিছু প্রিয় কাজ থাকে যার মধ্যে নিছক আনন্দ খুঁজে পাই। সেইসব শখের কাজ হয়তো ঠিক 'কাজের কাজ' নয়, অনেকসময় তা অকাজ বলেই গণ্য হয়। নিজেকে ভালো রাখতে সেই অকাজগুলোর দিকে ফিরে তাকান। বহুদিন ধুলো পড়ে আছে, এমন স্কেচবুকের পাতাজুড়ে চলুক পেন্সিলের আঁকিবুঁকি। ছন্দ ছাড়া ছন্নছাড়া ডায়েরি লেখা, বারান্দায় রাখা গাছটায় দুটো ফুল ফোটাতে করা সাধ্য-সাধনা, শহুরে ছাদে ছুটির বিকেলে রঙিন ঘুড়ি ওড়ানো– মোটমাট শখের হাঁড়িতে রাখা যেকোনো শখের জন্যই একটুখানি সময় বের করুন, নয়তো জগতের সকল আনন্দ আয়োজন বৃথা মনে হবে।

একাকিত্ব হোক উদযাপনের

নিঃসঙ্গতা আর একাকিত্বের মধ্যকার সূক্ষ্ম সীমারেখাটা বুঝতে শিখুন। সবসময়ে সঙ্গ আর সঙ্গীতে জর্জর হওয়াই হয়তো মানুষের চাওয়া নয়। নিজের সঙ্গে সময় কাটিয়ে ক্রমশ আত্ম আবিষ্কারটাও দরকার। কতটা বদল ঘটছে, কতটা বেড়ে উঠছেন– কতটা হারিয়ে গেলেন, মাঝে মাঝে চুপচাপ বসে ওটুকু ভাবতেও ভালো লাগে। নিজের সঙ্গে বোঝাপড়া ভালো না হলে অন্যদের সঙ্গেও ভুল বোঝাবুঝির পরিমাণ বাড়তে থাকে। তাই ওটুকু একাকিত্ব না হয় বিনিয়োগ হিসেবেই ধরা হলো। যাপন নয়, কিছুটা একাকিত্ব হোক উদযাপনেরও। ক্যালেন্ডারের পাতায় দিনটি বিশেষ হোক বা না হোক, সময় করে নিজেকে সময় দিন। 

বিশ্রামটা দরকারি

কর্মই ধর্ম যাদের, তাদের বোধ হয় নিজেকে গল্পের অধ্যবসায়ী কচ্ছপ ভাবতেই ভালো লাগে। খরগোশের মতো অতি আত্মবিশ্বাসে ঘুমিয়ে না পড়লেও অন্তত সময়ে সময়ে বিশ্রাম নেয়াটা তবু জরুরি। শরীর ও মন দুটোই সবচেয়ে ভালো কাজ করে তখন, যখন পর্যাপ্ত বিশ্রামের যোগান দেওয়া হয়। কাজের ফাঁকে ছোটখাটো বিরতি প্রায় সময় বরং কাজের গতিকেই বাড়িয়ে দেয়। আলসেমি আর প্রয়োজনীয় বিশ্রামের ফারাকটা বুঝুন, হাঁপিয়ে ওঠার আগে একটুখানি জিরিয়ে নিন। 

উপহার দিন নিজেকেও

যেকোনো আবেগী সম্পর্কেই উপহারের স্থানটা বিশেষ। উপলক্ষ থাকুক না থাকুক, প্রিয়জনের মুখে হাসি ফোটাতে তার পছন্দ-অপছন্দ ভেবে নিয়ে উপহার দেবার রীতিটা বেশ প্রচলিত। কিন্তু অনেকসময় একই কাজ নিজের জন্য করা হয়ে ওঠে না। এই ভালোবাসা দিবসে না হয় নিজেকেও কিছু উপহার দিলেন। ঝুলিতে যোগ হতে পারে অনেকদিন ধরে কিনতে চেয়েও কেনা হচ্ছে না এমন কোনো জিনিস, নয়তো আকাঙ্ক্ষিত কোনো ছুটির দিন। না হয় পপকর্ন খেতে খেতে প্রিয় সিনেমাটা দেখে ফেলা যাক, নিজের সঙ্গেই! 

চর্চা হোক– শরীর ও মনের

রুটিনবাঁধা ব্যস্ততায় নিজের যত্ন নিতে ভুলে যাই অনেকেই। তবে ধীরে ধীরে যদি চর্চা শুরু করা যায়, দীর্ঘমেয়াদে তা সুফল বয়ে আনে। সকালে ঘুম থেকে আধঘণ্টা হেঁটে আসা কিংবা সহজ কিছু ব্যায়াম বা যোগাসনের চর্চা দিনের কর্মক্ষমতা অনেকটাই বাড়িয়ে দেবে। চাইলে একটু ঘটা করে খাদ্যাভ্যাসেও আনা যায় ইতিবাচক পরিবর্তন। এ ছাড়া আমাদের মনোযোগ যেভাবে দিন দিন কমে যাচ্ছে, রাতে ঘুমানোর আগে কিছুক্ষণ মেডিটেশন করে নেওয়া যায়। এতে শরীর ও মন দুটোই ফুরফুরে থাকবে, সারাদিনের চাপ মাথায় চড়ে বসতে পারবে না। 

এই সহজ পদ্ধতিগুলো ছাড়াও নিজেকে ভালোবাসার নিজের মতো অনেক পথই আছে। মোদ্দাকথাটা হলো, জীবনের অন্য সব মানুষকে সময় আর মনোযোগ দিতে দিতে নিজের প্রতি যাতে খেয়ালটা কমে না যায়। কথায় আছে না, চ্যারিটি বিগিনস অ্যাট হোম? ভালোবাসার শুরুটাও হোক তাই নিজেকে দিয়েই। ভালোবাসা দিবসের শুভেচ্ছা। 

 

Comments

The Daily Star  | English

Those involved in Ijtema ground deaths won't be spared: home adviser

The home adviser met with both factions of Tabligh Jamaat today at the Secretariat

1h ago