ক্ষুব্ধ ক্রেতার প্রশ্ন: লিইখ্যা কি দাম কমাইতে পারবেন?

ঘরে ঘরে হানা দেওয়া বাজারের দর সাধারণ ক্রেতাদের জীবনযাপন ও মানসে কী পরিমাণ প্রভাব ফেলছে, তা টের পাওয়া গেল ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিচের দিকের একটি পদে কর্মরত মাঈদুল ইসলাম (ছদ্ম নাম) নামে এক ব্যক্তির ক্ষুব্ধ মন্তব্যে।

বিএনপি-জামায়াতের ডাকা অবরোধ কর্মসূচির দ্বিতীয় দিন বুধবার সকালে কারওয়ান বাজারে বাজার করতে এসে তিনি দেখতে পান আলুর কেজি এখনো ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, আর দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে। ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের দামও ১১০ টাকা। সবজির দাম খানিকটা কমলেও প্রতি আঁটি শাকের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কমেছে পরিমাণও।

জানা গেল, তার হাতে থাকা একটি পলিথিনের প্যাকেটে থাকা ব্রয়লার মুরগিটি তিনি কিনেছেন ১৮৫ টাকা কেজিতে। খোদ কারওয়ান বাজারেই প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়।

রাজধানীর শেওড়াপাড়া এলাকার একটি সবজির দোকান। ছবি: স্টার

এমন খুঁটিনাটি সব প্রশ্নের জবাব দিতে দিতে মাঈদুল এক পর্যায়ে বলে উঠলেন, 'বেতন-ওভারটাইম মিলিয়ে মাসে ২৫-২৬ হাজার টাকার বেশি পাই না। পরিবারের সদস্য পাঁচ জন। তিন বেলা কোনোভাবে খেতেই ১৬-১৭ হাজার টাকা লেগে যাচ্ছে। তাহলে বাসা ভাড়া দিয়ে সংসারের বাকি খরচ কীভাবে চলে ভাবতে পারেন? প্রতি মাসে ধার করতে হয়। সেই ধারের চক্র থেকে বের হতে পারি না।'

এ সময় খানিকটা ক্ষুব্ধ হয়েই তিনি বলেন, 'এত যে দাম জিজ্ঞেস করতেছেন, তাতে কী হবে? জিনিসপত্রের দাম কি কমবে?'

মাঈদুল ইসলামের এই প্রশ্নের জবাব মেলে না।

নিয়ন্ত্রণহীন দামে রাশ টানতে গত সোমবার ডিমের পর আলু আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কিন্তু সেই সিদ্ধান্তের কোনো প্রভাব বুধ ও বৃহস্পতিবারের বাজারেও দেখা যায়নি।

বর্তমানে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ভালো মানের আলু ৬০ থেকে ৬৫ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে, যা দেশের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সর্বোচ্চ। গত এক দশকে আলুর সর্বোচ্চ দাম উঠেছিল ৩৫ টাকা প্রতি কেজি।

গত সেপ্টেম্বরে উৎপাদন খরচ বিবেচনায় নিয়ে সরকার আলু, দেশি পেঁয়াজ ও ডিমের দাম নির্ধারণ করে দিলেও বাজারে তা কার্যকর নেই। সরকারি তদারকি প্রতিষ্ঠান জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর প্রতিদিন অভিযান ও জরিমানা করেও দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি।

রাজধানীর পশ্চিম রাজারবাজারের ভ্রাম্যমাণ সবজির দোকান। ছবি: স্টার

পরিস্থিতি সামাল দিতে ডিম আমদানির অনুমোদনও দিয়েছিল সরকার। কিন্তু তাতেও বাজার ঠাণ্ডা করা যায়নি।

অথচ এবার ফলন ভালো হওয়ায় গত এপ্রিলে রাশিয়ায় দুই লাখ টন আলু রপ্তানির উদ্যোগ নিয়েছিল কৃষি মন্ত্রণালয়। এর ছয় মাসের মাথায় এখন আবার আমদানি করার দরকার হলো।

গত ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে নির্ধারিত দামে আলু, দেশি পেঁয়াজ ও ডিম—এই তিন পণ্য বিক্রি হওয়ার কথা ছিল। উল্টো দেড় মাস পরে দাম এখন আরও বেড়েছে। বেঁধে দেওয়া দামের দ্বিগুণ মূল্যে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ ও আলু। ডিমের দাম দ্বিগুণ না হলেও দাম বেড়েছে।

আবার কারওয়ান বাজারের সঙ্গে ঢাকার বিভিন্ন এলাকার বাজার, পাড়া-মহল্লার দোকান ও ভ্রাম্যমাণ দোকানে শাক-সবজিসহ বিভিন্ন পণ্যের দামেও ফারাক আছে।

যেমন—বুধবার কারওয়ান বাজারে জাত ও আকারভেদে যে বেগুন ৫০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে, গতকাল তালতলা ও শেওড়াপাড়া বাজার এবং পাড়ার সবজির দোকানে তা ৭০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। 

রাজধানীর শেওড়াপাড়ার ভ্রাম্যমাণ সবজির দোকান। ছবি: স্টার

একইভাবে কারওয়ান বাজারে বুধবার প্রতি পিস লাউয়ের দাম ছিল ৫০ থেকে ৭০ টাকা, গতকাল এলাকার বাজারে তা বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৮০ টাকায়।

এভাবে ৬০ টাকার পটল ৭০ টাকা, ৪০-৪৫ টাকার পাতাকপি ৫০ টাকা, ৩০ থেকে ৩৫ টাকার ফুলকপি ৫০ টাকা, ১০০ টাকার টমেটো ১২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে এলাকার বাজারে। 

পাশাপাশি এলাকা ও পাড়া-মহল্লার বাজারে এসব জায়গায় গতকাল প্রতি আঁটি মুলা শাক ২০ থেকে ২৫ টাকায়, পালং শাক এক আঁটি নিলে ৩০ টাকা ও দুই আটি একসঙ্গে ৪০ টাকা, লাউ শাক ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়, পুঁই শাক ২৫ থেকে ৩০ টাকায় ও প্রতি আঁটি লাল শাক ১৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

খুচরা বিক্রেতাদের ভাষ্য, বুধবারের তুলনায় কারওয়ান বাজারে গতকাল কেজিপ্রতি সবজি ও শাকের দাম পাঁচ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত কমেছে।

বুধবার খানিকটা কম দামে পণ্য কিনতে মগবাজার থেকে পায়ে হেঁটে কারওয়ান বাজারে এসেছিলেন রিক্তা খাতুন নামে এক গৃহিনী। তার কাছে একজন বিক্রেতা মাঝারি আকারের একটি মিষ্টিকুমড়ার দাম চাইলেন ৮০ টাকা। দাম শুনে তিনি সেটা রেখে দিলেন।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারের সবজির দোকান। ছবি: স্টার

পরে হাতে থাকা এক আঁটি লাউ শাক দেখিয়ে বললেন, 'এই এক আঁটি শাক কিনছি ৪০ টাকা দিয়ে। তাও একটা লতি কম।'

গতকাল পশ্চিম শেওড়াপড়ায় গ্রিন হাউস নামে একটি সবজির দোকানে প্রতি কেজি ৬৫ টাকা দরে ডায়মন্ড জাতের আলু কিনছিলেন মোহাম্মদ মোস্তফা নামে এক ব্যাক্তি। খানিকটা রসিকতা করেই তিনি বললেন, 'আগে কইতো বেশি করে আলু খান, ভাতের ওপর চাপ কমান। এখন তো দেখা যায়, চাইলের চাইতে আলুর দামই বেশি।'

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

15h ago